অগোছালো ঘরের সঙ্গে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের কী সম্পর্ক
অগোছালো ঘর মানেই অগোছালো মন। তাই বাড়তি জিনিসপত্র সরালে শুধু ঘর বা কাজের জায়গা নয়, মনও হয়ে ওঠে হালকা আর প্রশান্ত।
আমাদের সবার ঘরেই কিছু না কিছু বাড়তি জিনিস জমে থাকে। পুরোনো জামা, বিভিন্ন উপলক্ষে পাওয়া উপহার, শিশুদের পুরোনো খেলনা, রান্নাঘরের ফাঁকা প্লাস্টিকের ডিব্বা কিংবা বছরের পর বছর জমে থাকা বিদ্যুতের বিল আর পুরোনো রসিদ—এসবই একসময় জায়গা দখল করে রাখে।
শুরুতে তেমন কিছু মনে না হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাড়তি জিনিসপত্রই আমাদের মনে অস্থিরতা, চাপ আর ক্লান্তি বাড়ায়।
গবেষণা বলছে, এলোমেলো ঘরে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, মনোযোগ নষ্ট হয়, কাজে মন বসে না। এমনকি অতিথি ডাকতেও অনেকে ইতস্তত বোধ করেন। তাই ঘর গোছানো মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও যত্ন।
কেন জমে যায় ‘ক্লাটার’
স্মৃতির টান: পুরোনো জামা, স্কুলের খাতা বা কোনো বিশেষ উপহার, যেসব ছাড়তে মন মানে না।
‘কখনো লাগতে পারে’ ভাবনা: ফাঁকা বোতল বা ভাঙা ইলেকট্রনিকসও আমরা অনেক সময় রেখে দিই, যেন একদিন কাজে লাগে।
শুরু করার ভয়: কোথা থেকে শুরু করব, এই ভেবে অনেকে হাতই দেন না।
মনোযোগের সমস্যা: উদ্বেগ বা এডিএইচডির মতো কারণে ঘর গোছানো কঠিন হয়ে পড়ে।
কীভাবে গোছাতে শুরু করবেন
ছোট থেকে শুরু করুন
একবারে পুরো ঘর নয়। প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট সময় নিয়ে আলাদা কোনা বা আলমারির একটা অংশ পরিষ্কার করুন।
চার ভাগে ভাগ করুন
রাখব, দান করব, ফেলে দেব আর পরে ভাবব। যেসব জামা গত এক বছর পরেননি, সেসব নিশ্চিন্তে দান করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় জিনিস থাক হাতের কাছে
প্রতিদিন ব্যবহার হয়, এমন জিনিস হাতের কাছে রাখুন। টেবিল বা রান্নাঘরের কাউন্টার যত কম জিনিসে ভর্তি থাকে, তত ভালো।
রক্ষণাবেক্ষণ করুন
প্রতিদিন অল্প সময় দিয়ে ব্যবহার করা জিনিস জায়গামতো রাখুন। নতুন কিছু কেনার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, এটা সত্যিই দরকার?
ডিজিটাল ক্লাটারও কমান
ফোনের অপ্রয়োজনীয় ছবি, হোয়াটসঅ্যাপের পুরোনো ভিডিও, কম্পিউটারের ফাইল আর ই-মেইল—এসব নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
গোছানোর সঙ্গে মানসিক যত্ন
ঘর গোছাতে গিয়ে অনেক সময় আবেগ কাজ করতে পারে। পুরোনো ছবি বা কোনো প্রিয়জনের উপহার ফেলে দিতে কষ্ট হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, জিনিস নয়, স্মৃতিটাই আসল। স্মৃতি মনের ভেতরেই বেঁচে থাকে।
শেষ কথা
ঘর গোছানো মানে শুধু বাড়িকে সুন্দর করা নয়, এটা আদতে নিজের মনেরও যত্ন নেওয়া। কম জিনিস, খালি জায়গা আর পরিপাটি পরিবেশ আপনার মানসিক শান্তি ও সুস্থতার অন্যতম সহায়ক হতে পারে। তাই আজ থেকেই শুরু করুন, হয়তো আলমারির এক কোনা থেকেই।
সূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড