যে ৮ লক্ষণে বুঝবেন অপ্রয়োজনীয় জিনিসে নষ্ট হচ্ছে অন্দরের ভারসাম্য
পরিপাটি ও স্বস্তিদায়ক বাসা কেবল সৌন্দর্য নয়, মানসিক প্রশান্তিরও অংশ। কিন্তু প্রায়ই অজান্তে এই ঘরে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় এত বেশি জিনিস জমে যায় যে তা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে জটিল করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, অন্দরের এই বাড়তি জিনিসপত্র আমাদের সময়, মনোযোগ ও শক্তির ওপর অযাচিত চাপ সৃষ্টি করে। আপনার ঘরেও কি আছে এমন অতিরিক্ত জিনিস, যা কার্যকারিতা ছাড়াই পড়ে আছে ঘরের কোণে জায়গা দখল করে? জেনে নিন কখন বুঝবেন ঘরে জমে গেছে বাড়তি সব জিনিস।
১. প্রয়োজনীয় জিনিস থাকা সত্ত্বেও খুঁজে না পাওয়া
পুরোনো কোনো বই বা পাঁচ বছর আগের কেনা জুতাজোড়া খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? অথবা কখনো কি মনে হয়েছে যে আপনি জানেন এই জিনিসটি বাসায় আছে, কিন্তু কোথায় আছে, তা মনে করতে পারছেন না? এমনটি সাধারণত হয় অতিরিক্ত জিনিসপত্রে ঘর অগোছালো হয়ে থাকলে। সময় বুঝে তাই বাড়তি জিনিস সরিয়ে ফেলুন। পুরোনো খবরের কাগজ, নষ্ট বা মেরামতের অযোগ্য জিনিস না জমিয়ে বিক্রি করে দিন। তা না করা গেলে এসবের জায়গা ময়লার ঝুড়িতে হওয়াই শ্রেয়।
২. পরিষ্কার করতে অস্বাভাবিক সময় লাগা
চটজলদি ঘর গোছাতে গিয়ে লক্ষ করলেন, ঘণ্টাখানেক পার হয়ে গেছে, আপনি অর্ধেকও গুছিয়ে উঠতে পারেননি। হতে পারে, অকাজের জিনিস ঘাঁটতে ঘাঁটতেই সময় চলে যাচ্ছে। যদি ঘর গোছাতে বা পরিষ্কার করতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় লাগে, তবে বুঝতে হবে, পরিষ্কারের কাজ হচ্ছে না; বরং জিনিসপত্র সরানোতেই সময় ব্যয় হচ্ছে। এমনটা হলে যেসব জিনিস অনেক দিন ব্যবহার করছেন না, সেসব ছাঁটাই করে ফেলুন। ঘর পরিপাটি দেখাবে।
৩. নির্দিষ্ট কিছু ঘর বা জায়গা সব সময়ই এড়িয়ে চলা
অতিরিক্ত জিনিসে কি ভরে গেছে অতিথির ঘর, স্টোর রুম কিংবা কোনো আলমারি? হয়তো এর মধ্যে কোনো জিনিস কাজের, কোনোটির আবার দরকারই নেই। যদি আপনি নিয়মিত এসব জায়গা এড়িয়ে যান, তবে দিন দিন অপ্রয়োজনীয় জিনিসের স্তূপ বাড়বে। তাই সেই জায়গা ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ার আগেই বাড়তি জিনিস সরিয়ে ফেলুন।
৪. বারবার গোছানোর পরও বিশৃঙ্খলা
নানা ঝুড়ি, বাক্স বা লেবেল ব্যবহার করেও যদি দেখেন অল্প দিনের মধ্যেই আবার জায়গা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, সাজানো–গোছানো থাকছে না, বুঝে নিন, সমস্যাটা জিনিসপত্র ভুল গোছানোর জন্য নয়; বরং বাড়তি জিনিসের জন্যই হচ্ছে।
৫. টেবিল, ওয়ার্ডরোবের সারফেসগুলো স্থায়ীভাবে দখল
টেবিল, সাইডবোর্ড, ওয়ার্ডরোব বা রান্নাঘরের কাউন্টার নিয়মিত পরিষ্কার ও খালি করার পরও দ্রুত সেখানে যদি জিনিস জমে যায়, তা ইঙ্গিত করে বাড়তি জিনিসে নষ্ট হচ্ছে গৃহস্থালির ভারসাম্য। কাজের কয়েকটা জিনিস; হতে পারে ওষুধপত্র, নোটবুক বা বই, হাতের নাগালে রাখতে টেবিল, সাইড বোর্ডের সারফেস ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, অতিরিক্ত জিনিসপত্র যেন এতে না জমে। স্থায়ীভাবে বা বেশি দিনের জন্য লাগবে এমন জিনিস, যেমন মুঠোফোনের চার্জার, প্রসাধনসামগ্রী ইত্যাদি সাইড টেবিল বা ওয়ার্ডরোবের তাকে বা ড্রয়ারে গুছিয়ে রাখাই ভালো। এতে ঘরও দেখাবে পরিপাটি।
৬. নিজের ঘরেই অস্বস্তি বা চাপ
যে স্থানে স্বস্তি পাওয়ার কথা, সেখানে যদি ঢুকতেই চাপ বোধ করেন, বুঝতেই পারছেন, আপনার ঘরের শৃঙ্খলা ঠিক নেই। অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ঘরের সৌন্দর্য ফেরাতে হবে আপনাকেই। তাই সময় নিয়ে ঘরটা পরিপাটি করে তুলুন। ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে ভেবে কোনো জিনিসই জমিয়ে রাখবেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেসব জিনিসের কথা আপনি ভুলে যান, পরবর্তী সময়ে তা আর কোনো কাজেই লাগে না। কাজের জিনিস রেখে তাই বাড়তি বস্তু ছাঁটাই করুন।
৭. আরও স্টোরেজ কেনার ইচ্ছা
কাপড়চোপড়, আসবাবের কারণে ঘরে জায়গা নেই। কিন্তু তারপরও চাইছেন বড় আলমারি, নতুন বাক্স বা অতিরিক্ত স্টোরেজ কিনে এসব গুছিয়ে রাখতে? সমস্যাটা কম স্টোরেজে নয়, অধিকাংশ সময়ই সমস্যার সমাধান অযথা কেনা জিনিসপত্র কমিয়ে ফেলা। হতে পারে তা পুরোনো কাপড়, বই, খবরের কাগজ বা অন্যান্য তৈজস। নতুন স্টোরেজ বা আসবাব কেনার আগে বুঝে নিন, এর প্রয়োজনীয়তা আদতেও আছে কি না।
৮. ‘একদিন কাজে লাগবে’—এমন জিনিস জমিয়ে রাখা
পুরোনো জিনিস ফেলতে আমরা অনেক সময় বেশ মায়া করে ফেলি। আবার অনেক সময় ভাবি, মেরামত করে কাজের উপযোগী করে নেওয়া যাবে। কিন্তু পরে এই জিনিস কোথায় হারায়, তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না! তাই ভেঙে যাওয়া জিনিস, মেরামত করার পরিকল্পনায় রাখা শোপিস, ভাঙা কাচের জিনিসপত্র, বহুদিনের অচল শখের উপকরণ বা ‘একদিন দরকার হতে পারে’—এমন সামগ্রী সচেতনভাবেই ছাঁটাই করে ফেলুন। মনে রাখবেন, একটি গোছানো ও পরিপাটি ঘর শুধু ঘরের শৃঙ্খলাই নয়, এটি আমাদের জীবনযাপনের মানকেও উন্নত করে।
সূত্র: দ্য স্প্রুস, হোম ক্লিন হোম