বিসিএসে প্রথম যাঁরা, কেমন ছিল তাঁদের প্রস্তুতি

৪১তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে প্রথম হলেন যাঁরা, নিশ্চয়ই তাঁদের ছিল বিশেষ কোনো প্রস্তুতি। তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষার জন্য কীভাবে নিজেদের তৈরি করেছিলেন তাঁরা?

সাজ্জাদ হোসাইন, প্রথম, পররাষ্ট্র ক্যাডার
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় পড়ার পেছনে ব্যয় করতাম। যে বিষয়গুলো কঠিন মনে হতো, যেমন বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সেগুলো বারবার রিভিশন দিয়েছি। বাজারের এমন কোনো বই নেই, যা কিনিনি। যেসব বিষয়ে ভালো দখল ছিল, যেমন গণিত, বিজ্ঞান, মানসিক দক্ষতা, ইংরেজি, সেগুলোয় সর্বোচ্চ নম্বর তোলার চেষ্টা করেছি। ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার জন্য ইংরেজি গান, স্পোর্টস চ্যানেলের ইংরেজি ধারাভাষ্য শুনতাম, ইউটিউবে ইংরেজি ভিডিও দেখতাম। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য ইউটিউবে বিভিন্ন চ্যানেল অনুসরণ করতাম। যতক্ষণ পড়াশোনা করতাম, সেটা এক ঘণ্টার জন্য হলেও মুঠোফোন থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করতাম। আশপাশে যাঁরা বিসিএস পরীক্ষার্থী আছেন, গণিতে তাঁদের সাহায্য করতাম। কোনো বিষয় অন্যকে বোঝাতে গেলে নিজের দুর্বলতাগুলোও কেটে যায়।
সাজ্জাদ হোসাইন, প্রথম, পররাষ্ট্র ক্যাডার
জাহিদ হাসান, প্রথম, পুলিশ ক্যাডার
ছবি: সংগৃহীত
প্রস্তুতির প্রথমেই সিলেবাস বিশ্লেষণ করে আমার দুর্বলতা ও শক্তির দিকগুলো চিহ্নিত করি। যেহেতু উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম, তাই বিজ্ঞান ও গাণিতিক বিষয়গুলো তেমন একটা পড়তে হয়নি। বেশি মনোযোগ দিয়েছি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ইত্যাদি বিষয়ে। আমার পড়ার একটি বিশেষ দিক হলো কোনো বিষয় পরীক্ষায় আসবে কি না, তা না ভেবে কেবল জানার আগ্রহ থেকে পড়া। পাশাপাশি বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নোট বানিয়ে রাখা। পরের দিন কী পড়ব, কতটুকু পড়ব, আগের দিন ঠিক করে রাখতাম। পরের দিন ওই নির্দিষ্ট অংশটুকু অবশ্যই পড়তাম। কতক্ষণ পড়ব, আমার কাছে তা কখনো মুখ্য ছিল না। হতে পারে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বা ১২ ঘণ্টা। এভাবে বিষয় ধরে পড়ার কৌশলই সিলেবাস সুন্দরভাবে শেষ করতে অনেক বেশি সাহায্য করেছে।
জাহিদ হাসান, প্রথম, পুলিশ ক্যাডার
সাব্বির আহমেদ, প্রথম, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার
ছবি: সংগৃহীত
প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস ছিল। ইংরেজিও নির্ভুলভাবে লিখতে পারতাম। বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বানান, ব্যাকরণের প্রতি বিশেষ নজর ছিল। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার-এর উদ্ধৃতিগুলোয় (কোটেশন) চোখ রাখতাম। এমনভাবে পড়াশোনা করিনি, যেন খারাপ বা ক্লান্ত লাগে। ভোরবেলা উঠেই তিন থেকে চার ঘণ্টা পড়তাম। বিকেলে ঘুরতে বেরোতাম। গড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার বেশি কোনো দিন পড়িনি। তবে যেকোনো বিষয় বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি। বেশি জানলে অল্প হলেও মনে থাকে। প্রকৌশলের ছাত্র হওয়ায় গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি ভালো দখলে ছিল। সমস্যা ছিল শুধু সাধারণজ্ঞানে। ইংরেজিতে প্রস্তুতি নেওয়ায় সেটিও আয়ত্তে আসতে সময় লাগেনি। বিপিএসসি সদস্যদের সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল, বিশেষ করে যাঁরা লেখেন। ভাইভার আগে এ কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজনের লেখা পড়লে তাঁর মনস্তত্ত্বটা বোঝা যায়।
সাব্বির আহমেদ, প্রথম, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার
মো. নাঈমুর রহমান, প্রথম, প্রশাসন ক্যাডার
ছবি: সংগৃহীত
৪১তম বিসিএসের প্রস্তুতি চাকরিরত অবস্থায় নিয়েছি। শুধু রাতেই পড়ার সুযোগ পেতাম। চেষ্টা ছিল যতটুকু সময় পাচ্ছি, সময়টাকে কাজে লাগানোর। প্রতিটি বিষয়ের জন্য সময় ভাগ করে পড়তাম। একটা বিষয় শেষ করে আরেকটা বিষয় শুরু করতাম। তবে কয়েকটা জিনিস প্রতিদিনই থাকত। গণিত, ভোকাবুলারি আর পত্রিকা। সত্যি বলতে, পত্রিকার ক্ষেত্রে আমি প্রথম আলোই পড়তাম। শুক্র-শনিবারটাকে গুরুত্ব দিতাম। বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে ওই দিন বেশি পড়তাম। লিখিত পরীক্ষার জন্য তথ্য-উপাত্তের একটা খাতা তৈরি করি। পাশাপাশি উদ্ধৃতির (কোটেশন) জন্যও আলাদা খাতা ছিল। পরীক্ষার আগে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয় পড়তাম। গুগল থেকে চিত্র ডাউনলোড করে আঁকাআঁকি করতাম, যেন পরীক্ষার খাতায় ঠিকমতো দিতে পারি। এভাবে স্বল্প সময়কে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
মো. নাঈমুর রহমান, প্রথম, প্রশাসন ক্যাডার
শাহাদাত হোসাইন সরকার, প্রথম, স্বাস্থ্য (সহকারী সার্জন) ক্যাডার
ছবি: সংগৃহীত
মেডিকেলে পড়ার সময় কিছু অভ্যাস গড়ে তুলেছিলাম। যেমন কালজয়ী গল্প-উপন্যাস পড়া, নিয়মিত পত্রিকা পড়া, ফেসবুকে বিসিএসের পেজগুলো অনুসরণ করা, পাশাপাশি অল্পসংখ্যক টিউশনি করানো। শুরুতে নিজের সবল, দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে ফেলি। কোচিংয়ের পরীক্ষায় যা ভুল করতাম, তা যেন আর না হয়, সেদিকে খেয়াল ছিল। কোনো বিষয় একদম ছেড়ে দিইনি। কোথাও আটকে গেলে সিনিয়র কারও বা ইউটিউবের সাহায্য নিয়েছি। পাশাপাশি কলকাতা পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষার (প্রাসঙ্গিক বিষয়ের) প্রশ্ন সমাধান ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা রিডিং পড়াটা নতুন প্রশ্ন সমাধানে সহায়তা করেছে। আমার লক্ষ্য ছিল প্রতিদিন ১০ মিনিট হলেও যেন পড়ি। প্রচুর পরীক্ষা দিয়েছি। কিছুদিন পরপর আগের পরীক্ষাগুলোর সমাধান রিভিশন দিয়েছি। প্রতিদিন সমানভাবে পড়তে পারিনি। তবে পড়ার পরিমাণের চেয়ে গুণগত মানে বেশি জোর দিয়েছি।
শাহাদাত হোসাইন সরকার, প্রথম, স্বাস্থ্য (সহকারী সার্জন) ক্যাডার
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন