চারপাশে তাকিয়ে মনে হতো পোস্টকার্ডের ছবি দেখছি
বিশ্বের নানা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটা শত বছরের পুরোনো, কোনোটায় শিক্ষক হিসেবে আছেন একাধিক নোবেলজয়ী অধ্যাপক। স্বনামধন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা কেমন? পড়ুন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক অর্ণব ভট্টাচার্য্যের লেখা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক শেষে একই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিই। পাশাপাশি স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামেও ভর্তি হয়ে যাই। স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডির জন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন করা শুরু করি। এভাবেই প্রিন্সটনে ভর্তি হয়ে যাই। এ সুযোগ পাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল স্নাতক-স্নাতকোত্তরের রেজাল্ট, গবেষণাপত্র আর সুপারভাইজারের সুপারিশপত্র।
আমার দুর্ভাগ্য, প্রিন্সটন-জীবন শুরু হয়েছিল কোভিডের সময়। তাই সশরীরের ক্লাস শুরু করেছি অনেক পরে। প্রিন্সটনে যখন প্রথম আসি, তখন ধীরে ধীরে কোভিডের বিধিনিষেধ উঠতে শুরু করেছে। এই ক্যাম্পাস ছবির মতো সুন্দর। একেকটা ভবন একেকরকম। একা একা হাঁটতাম, আর চারপাশে তাকিয়ে মনে হতো পোস্টকার্ডের ছবি দেখছি। ঢাকার ভিড়ভাট্টায় বড় হওয়ায় শুরুর দিকে কম মানুষের আনাগোনা দেখে আমার কেমন অস্বস্তি হতো। এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছি।
অবসর সময়ে আমি ও আমার স্ত্রী ক্যাম্পাসে হেঁটে বেড়াই। ক্যাম্পাসের একেকটা অংশ খুব সুন্দরভাবে যুক্ত, হেঁটে হেঁটে পুরোটা ঘোরা যায়। ভবনগুলো বৈচিত্র্যময়। অনেক ভবনের গড়ন যেমন আধুনিক, তেমনি কিছু কিছু ভবন এখনো পুরোনো, অনেকটা ‘গথিক’ স্টাইল। দেখে হঠাৎ হঠাৎ মনে হবে ১৮ শতাব্দীতে চলে এসেছি! আরেকটা বিশেষ জায়গা হলো ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ। জীবনের শেষ দুই দশক এখানেই কাজ করতেন আইনস্টাইন। ওপেনহাইমার সিনেমায় আইনস্টাইন–ওপেনহাইমারের কথোপকথনের দৃশ্যগুলো এখানেই তোলা!
বাংলাদেশে নিজের ছাত্রজীবন ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের শিক্ষকজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, এখানে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি নিবেদিত ও আত্মনির্ভরশীল। সামনে কী করতে চায়, সে বিষয়ে আমাদের চেয়ে ভালো ধারণা রাখে। ওদের পড়ালেখা শুধু গ্রেড–নির্ভর নয়। আমি এখানে অনেকবার ‘টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট’–এর দায়িত্ব পালন করেছি। অনেকগুলো ল্যাবে ক্লাস নিয়েছি। সামনের টার্মে কোন কোর্স নেব—এমন আলোচনায় সব সময় দেখেছি শিক্ষার্থীরা কোর্স থেকে কী শিখবে, ভবিষ্যতে সেটা কী কাজে লাগবে, এসব নিয়েই আলোচনা করে। চিন্তার এই স্বচ্ছতা ও পরিপক্বতা ওদের একাডেমিক সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখে।
প্রিন্সটনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়তে চাও, তাদের বলব, স্নাতকে ভালো সিজিপিএ, গবেষণার অভিজ্ঞতা, গবেষণাপত্র প্রকাশ খুব জরুরি। এ ছাড়া একাডেমিক মৌলিক বিষয়গুলো ও কোডিং নিয়ে যতটা দক্ষতা অর্জন করা যাবে, উচ্চশিক্ষার জন্য তত সহায়ক হবে। আবেদন করার ক্ষেত্রে সময় নিয়ে সব গোছাতে হবে। বিশেষ করে এসওপি (স্টেটমেন্ট অব পারপাস) খুব যত্ন করে, নিজের ভাষায় লেখা উচিত। অবশ্যই অভিজ্ঞদের দেখিয়ে পরামর্শ নেওয়া ভালো।