দময়ন্তী সাহা
ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকের নিউজফিডে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটি লেখা ভালো লেগে গিয়েছিল। লেখাটা তাই নিজের মতো করে পড়ে, ভিডিও ধারণ করে আপলোড করেছিলেন দময়ন্তী সাহা। এক দিনের মধ্যেই ভিডিওটি পছন্দ করেছেন হাজারো মানুষ। ভিউ পেয়েছে লক্ষাধিক। দময়ন্তীর পেজের লাইক ছিল চার শ’র কাছাকাছি, কয়েক দিনের মাথায় তা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৭ হাজারে! ইচ্ছা ছিল, পেজের কার্যক্রম ধীরে ধীরে বাড়াবেন। ভিউ ৪০০ থেকে ৫০০ হলে বিশেষ কিছু আয়োজনের ভাবনাও ছিল। কিন্তু একলাফে যখন অনেক লোক তাঁর ভিডিও দেখতে শুরু করল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দময়ন্তী নতুন করে ভাবতে শুরু করলেন।

আরও পড়ুন

একজন ‘বকুলদা’

মানুষের গল্প ‘নিজের মতো’ করে বলার উদ্দেশ্যেই ফেসবুক পেজটি খুলেছিলেন তিনি, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে। দময়ন্তী বলেন, ‘করোনার শুরুতে যখন সব প্রায় বন্ধ হয়ে গেল, আমি মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। মূলত সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্নতাই এর মূল কারণ। এমন কিছু মুহূর্তও এসেছে, যখন আত্মহননের চিন্তাও মাথায় এসেছে। পরে নিউজফিডে বিভিন্ন মানুষের দুরবস্থা দেখে ভাবলাম, আমার থেকেও তো কত মানুষ কত খারাপ অবস্থায় আছে; মানুষের কত দুঃখের গল্প আছে। একসময় তা আরও মানুষকে বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।’

কারও গল্প বলার আগে অনুমতি নিয়ে নেন দময়ন্তী। অনুমতি পেলে তবেই তুলে ধরেন নিজের মতো করে। দময়ন্তী নিজেকে আবৃত্তিকার নয়, গল্পকার বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বেশি।

পাঁচ বছর বয়স থেকে গান শেখা। মায়ের ইচ্ছায় নাচও শিখেছিলেন। তবে আবৃত্তি শিখতে গিয়েও শেখা হয়নি। ছোটবেলায় দময়ন্তীর স্কুলে যখন প্রতিযোগিতা হতো, তখন ‘সাহিত্য’ ক্যাটাগরি থেকে তিনটি এবং ‘সংস্কৃতি’ ক্যাটাগরি থেকে তিনটি করে মোট ছয়টি পারফরম্যান্সে নাম দেওয়া যেত। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ভালো লাগত বলে পাঁচটিতেই অংশ নিতেন দময়ন্তী। বাদ রয়ে যেত শুধু আবৃত্তিটাই!

একসময় এই ‘শূন্যস্থান’ পূরণের জন্য মা পাঠিয়ে দেন এক আবৃত্তি প্রশিক্ষকের কাছে। কিন্তু মাত্র দুটি ক্লাস করার পর আর যাননি দময়ন্তী। ‘আমার কাছে মনে হয়, কথা প্রকাশ করার কিংবা আবৃত্তি করার ধরন একেক মানুষের একেক রকম। বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশের ধরনও ভিন্ন। আবৃত্তি যেহেতু কথা কিংবা কবিতাকেই অভিব্যক্তি দিয়ে প্রকাশের মাধ্যম, তাই গৎবাঁধা নিয়ম আমার ভালো লাগেনি তখন,’ বলছিলেন তিনি।

প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গ উঠতে দময়ন্তী জানান, কিছুদিন আগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তাঁর পাওয়া সনদের সংখ্যা গুনে দেখেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৯৮টা। প্রায় সব কটিই গানের প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া। আর বাদ বাকি গুটিকয়েক পেয়েছেন বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা কিংবা ধারাবাহিক গল্প বলায়।

কবিতা পড়েন প্রচুর। আলাদা করে বললে ‘জীবনমুখী কবিতা’, যাঁর সঙ্গে তিনি নিজের কিংবা তাঁর শোনা কোনো গল্পের মিল খুঁজে নিতে পারেন। দময়ন্তীর ভালো লাগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্বরী মুখোপাধ্যায়, মুনমুন মুখোপাধ্যায়, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় আর মঞ্জিমার আবৃত্তি। কবিতা কিংবা গল্প বলতে ভালো লাগলেও কখনো নিজে থেকে লেখার ইচ্ছা তাঁর হয়নি।

দময়ন্তীর পেজে মাঝেমধ্যে অপ্রাসঙ্গিক কিছু মন্তব্য দেখা যায়। মন খারাপ হয় না? বললেন, ‘খারাপ মন্তব্য যা পাই, সবই অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে। তবে সংখ্যার দিক থেকে সেগুলো অতি নগণ্য বলে আমি এসব উপেক্ষা করতেই পছন্দ করি।’

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়ছেন দময়ন্তী। জীবনের লক্ষ্য প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘আমার জীবনে আহামরি বড় কোনো লক্ষ্য নেই। তবে ভালো কিছুই করতে চাই। আর জীবনে যা-ই করি না কেন, একজন ভালো মানুষ হয়ে গান এবং কবিতাকে সঙ্গী হিসেবে রাখতে চাই সব সময়।’