চল্লিশ পেরোলে ‘চালশে’ নয়, আয়রনম্যান

বয়স চল্লিশ পার হলেই সব শেষ হয়ে যায় না, আয়রনম্যান জিতে সেটা প্রমাণ করলেন এহসান হকছবি: লেখকের সৌজন্যে

২০২০ সালের অক্টোবর মাস। মহামারি চূড়ান্ত সীমায়। অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিষেধ। ক্লাস বাসা থেকেই নিতে হবে। শারীরিকভাবে ছিলাম সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় আর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই বোধ হয় ক্লাসে সবাইকে ঝাড়ির ওপর রাখতাম। লেকচার শেষে ছুটতাম পরবর্তী ক্লাসে। সে ক্লাসে শিক্ষার্থী আমি নিজে। শিক্ষার বিষয়বস্তু, সাঁতারের যাবতীয় কৌশল। ঝাড়ি খেতাম তখন আমি নিজে।

প্রথম ক্লাসে আমার অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে শিক্ষক আমাকে পুল থেকে তুলে বলেছিলেন, ‘আজ আর তোর সাঁতার কাটার দরকার নেই। আজ তুই সবাইকে দেখ।’

ক্লাসটি ছিল এলাকার বাঘা ট্রায়াথলেটদের নিয়ে। তাঁদের ভেতর আমি ছিলাম ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল শিক্ষার্থী। অবিরাম ৪০০ গজ সাঁতার কাটার পর ‘আল্লাহ রে’ বলে আমি যখন একটু বিরতি নিতাম, অন্য সাঁতারুরা শোঁ-শাঁ করে আমার পাশ দিয়ে সাঁতার কেটে যেতেন।

একদিন ক্লাসে কে যেন বলে বসলেন, তাঁরা নাকি ‘আয়রনম্যান’ প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হচ্ছেন। আয়রনম্যান কী, তা জানতাম না। আগ্রহী হয়ে গুগলে খুঁজে চক্ষু চড়কগাছ। আয়রনম্যান প্রতিযোগিতার জন্য সাঁতার কাটতে হবে ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার, তারপর সাইকেল চালাতে হবে ১৮০ দশমিক ২ কিলোমিটার এবং পরিশেষে দৌড়াতে হবে ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার। প্রতিযোগিতা শুরু হয় সকাল ৭টায়। সবকিছু শেষ করার জন্য সময় মেপে দেওয়া হয় রাত ১২টা পর্যন্ত।

আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া—এটা অতিমানবিক এক কাজ। আমার জন্য ব্যাপারটি অসম্ভব হলেও কেন জানি আয়রনম্যানের চিন্তাটা মাথা থেকে ফেলে দিতে পারিনি। আমি এক ছাপোষা চল্লিশোর্ধ শিক্ষক। প্রতিদিন আটটা থেকে পাঁচটা অবধি কাজ করতে হয়। আমার সহধর্মিণীরও একই অবস্থা। বাসায় আমাদের দুইটি নাবালক সন্তান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শরীরচর্চায় আমার কোনো অভিজ্ঞতা বা নিপুণতা নেই। তাহলে কী করে পারব খেলাধুলার জগতের সবচেয়ে শ্রমসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করতে?

প্রশিক্ষণ পর্বে সাইকেল চালাচ্ছেন লেখক

আয়রনম্যানে অংশগ্রহণ করার জন্য সাঁতার নাহয় শিখে ফেললাম। সাইকেল নাহয় প্যাডেল দিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু দৌড়ের অবস্থা যে আমার ভয়াবহ। প্রাথমিকের পর আর কখনো দৌড়াইনি। এখন সিকি কিলোমিটার দৌড়াতে গেলেও গায়ে জ্বর আসে, হাঁটতে কষ্ট হয়। বুঝেছিলাম যে আবার নতুন করে দৌড়াতে হলে শুরু করতে হবে ধীরগতিতে, তবে নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে। একদিন অন্তর দৌড়ানোর অভ্যাস শুরু করলাম—আধা কিলোমিটার, এক কিলোমিটার, দেড় কিলোমিটার…। এইভাবে ধীরে ধীরে কয়েক মাসের মধ্যে একটু দৌড়, একটু হাঁটা করতে করতে পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ের নতুন রেকর্ড করলাম। বুঝতে পারলাম, লেগে থাকলে দৌড়ের দূরত্ব বাড়ানোটা সময়ের ব্যাপারমাত্র।

প্রথমে গেলাম ট্রায়াথলনে

২০২১ সালের জুন মাস। জীবনের প্রথম ট্রায়াথলনে নাম লিখিয়েছি। এটি স্প্রিন্ট ট্রায়াথলন। ৭৫০ মিটার সাঁতার, ২০ কিলোমিটার সাইকেল এবং ৫ কিলোমিটার দৌড়। কাকভোরে গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম প্রতিযোগিতার মিলনস্থলে। যাত্রাটি ছিল ৫০ মিনিটের। পুরো সময়টা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। বারবার মনে হচ্ছিল, সাঁতার কাটতে গিয়ে আজ নির্ঘাত পানিতে ডুবে যাব। বারবার মনে হচ্ছিল ট্রায়াথলন বাদ দিয়ে বাসায় গিয়ে আবার ঘুমিয়ে থাকি। সেদিনের যুদ্ধটি ছিল ঐতিহাসিক। নিজের মনের সঙ্গে এসব ছোট যুদ্ধই নির্ধারণ করে দেয়, জীবনে আপনি কত দূর যাবেন!

সেদিনের স্প্রিন্ট ট্রায়াথলনের খোলা পানিতে সাঁতারের অভিজ্ঞতা ছিল সবচেয়ে কঠিন। পানির নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দম শেষ হয়ে গেলেই তলিয়ে যাব লেকের গভীর পানির অতলে। দ্রুত আমার হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একটাই উপায়—মনকে শান্ত করা। আমি সাঁতারের সময় নিজের সঙ্গে কথা বলতে লাগলাম, ‘সাঁতারের কৌশল আমার জানা আছে। কৌশল ব্যবহার করে ধীরে ধীরে আমাকে শুধু এগিয়ে যেতে হবে। আজ আমার কোনো তাড়াহুড়া নেই। এগোতে থাকলে কোনো না কোনো সময় তীরে আমি পৌঁছাবই।’

আয়রনম্যান শেষ করতে মোট ১৮০ দশমিক ২ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হয়েছে

এই কৌশলে কাজ হলো। একসময় তীরে পৌঁছালাম। ৯৫ ভাগ প্রতিদ্বন্দ্বী আমার আগেই সাঁতার শেষ করে ফেলেছেন। তারপরও মনে ছিল বিশ্বজয়ের আনন্দ। কারণ, সময় যতই লাগুক না কেন, সাইকেল আর দৌড় শেষে আজ আমি জীবনে প্রথম ট্রায়াথলন শেষ করতে পারব। এটি ছিল আমার জীবনের আনন্দময় মুহূর্তগুলোর অন্যতম।

এবার দ্বিগুণ চ্যালেঞ্জ

স্প্রিন্ট ট্রায়াথলন শেষ করেই নাম লেখালাম অলিম্পিক দূরত্বের ট্রায়াথলনে, যা স্প্রিন্টের দূরত্বের দুই গুণ। অনুষ্ঠিত হবে আরও দুই মাস পর, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে। ভেবেছিলাম, শূন্য থেকে যদি আজ স্প্রিন্ট ট্রায়াথলন শেষ করতে পারি, তবে দুই মাসে অলিম্পিক দূরত্ব অবশ্যই অতিক্রম করতে পারব।

অলিম্পিক ট্রায়াথলন প্রতিযোগিতার দিন আমার সহধর্মিণী এবং আমাদের দুই সন্তান বসে ছিল ফিনিশিং লাইনে। ওরা জানত যে এই দূরত্ব অতিক্রম করার মুহূর্তটি হবে আমার জীবনের এক স্মরণীয় ঘটনা।

প্রতিযোগিতার সব প্রতিযোগী ধীরে ধীরে ফিনিশিং লাইন অতিক্রম করলেন। কিন্তু আমার পাত্তা নেই। একপর্যায়ে ঘোষণা দেওয়া হলো যে প্রতিযোগিতা শেষ। আমার পরিবার সেদিন বেশ ভয় পেয়েছিল। আমার স্ত্রী সন্তানদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাদের বাবা নিশ্চয়ই শেষ করতে পারেননি। তাঁকে হয়তো স্ট্রেচারে করে নিয়ে আসছে।’

তার কিছুক্ষণ পরই তাঁরা আমাকে ফিনিশিং লাইনের দিকে এগোতে দেখলেন। চারদিকে হইচই পড়ে গেল। আমাদের লোকাল ট্রায়াথলন ক্লাবের সব বন্ধু রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে ‘হাই-ফাইভ’ দিলেন।

আমার বড় ছেলে আনন্দিত হয়ে শেষ ৪০০ গজ আমার সঙ্গে দৌড়াল। ফিনিশিং লাইনে দুই বোতল পানি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল আমার ছোট ছেলে। ওর বয়স মাত্র পাঁচ বছর।

শেষের প্রতিযোগীর জন্য এ রকম রাজকীয় সংবর্ধনা দেখে আমার বউ অবাক। খুলে বললাম যে ট্রায়াথলন খেলাটা এ রকমই। প্রতিযোগিতায় কে প্রথম, কে দ্বিতীয় এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। শেষ করতে পারলেই আমরা সবাই রাজা।

লক্ষ্য আয়রনম্যান

অলিম্পিক ট্রায়াথলন শেষ করার পর চিন্তা করছিলাম, শূন্য থেকে যদি অলিম্পিক ট্রায়াথলন শেষ করতে পারি, তাহলে একেবারে আয়রনম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখা কেন বাদ দেব? ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অপরিণতভাবে নাম লেখালাম আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায়। প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। হাতে আছে এক বছর। এক বছরের অনুশীলন কি পর্যাপ্ত? অনুশীলনই বা শুরু করব কীভাবে?

দৌড়ানোর সময় পাশ থেকে অনেকে উৎসাহ দেয়
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

অনলাইন ঘেঁটেই পেলাম অনেক রকম তথ্য। আয়রনম্যান হওয়ার জন্য কী করে অনুশীলন করতে হবে, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। আছে অনেক রকম সূত্র। আপনাকে শুধু আঠার মতো লেগে থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০-২০ ঘণ্টার মতো অনুশীলন করতে হবে। লম্বা সময় নিয়ে নিয়মানুবর্তিতা ধরে রাখাই আয়রনম্যান হওয়ার মূলমন্ত্র।

আমি কঠোর অনুশীলনে লেগে রইলাম মাসের পর মাস। প্রতিযোগিতার এক মাস আগে থেকে প্রতি সপ্তাহে অনুশীলনের সময় দাঁড়িয়েছিল ২০-২৫ ঘণ্টা। অনেকটা একটি খণ্ডকালীন চাকরির মতো।

আয়রনম্যান প্রতিযোগিতার দিন, ভোর পাঁচটায় হাজির হয়েছেন হাজার হাজার প্রতিযোগী। সবাই দেখি গায়ে এক বিশেষ ধরনের মলম লাগাচ্ছেন। কারণ, নদীভর্তি জেলিফিশ। আর এসব মাছ নাকি কামড় দেয়। আমি আর গাঁইগুঁই করলাম না। এত দূর এসে জেলিফিশের কামড়ের ভয়ে পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। ডুবুরিদের সছিদ্র রাবারের পোশাক পরে নেমে গেলাম পানিতে।

একটু পরই টের পেলাম জেলিফিশের কামড়ের অনুভূতি। দাড়ি কামানোর পর ‘আফটার শেভ’ ব্যবহার করার জ্বলনের মতো। জেলিফিশের কামড়ে চারপাশ থেকে সাঁতারুদের ‘উহ-আহ’ আওয়াজ শুনতে শুনতে শেষ হয়ে এল ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার সাঁতার।

অলিম্পিক দূরত্বের ট্রায়াথলনে এহসান হকের সঙ্গে শেষ ৪০০ গজ দৌঁড়ালেন তাঁর বড় ছেলে, সামনে পানি নিয়ে ছোট ছেলের অপেক্ষা

এরপর ১৮০ দশমিক ২ কিলোমিটার সাইকেল চালানোর পালা। সৌভাগ্য, সাইকেল চালানোয় আমার প্রশিক্ষণ ছিল সবচেয়ে বেশি। খুব দ্রুতগতিতে ‘আপনাকে ওভারটেক করছি’ বলতে বলতে অতিক্রম করছিলাম সতীর্থ সাইক্লিস্টদের। সাইকেলের রাস্তায় ২৫ মাইল পরপর আছে ‘সাহায্য স্টেশন’। ওই স্টেশনে সব রকম পানীয় থেকে শুরু করে বরফ, ফল এবং অন্যান্য খাবার থাকে। সঙ্গে থাকে ভ্রাম্যমাণ টয়লেট। যে যাঁর প্রয়োজনমতো বিরতি নিতে পারেন।

৮৬ কিলোমিটারের নাগাদে আমার সাইকেলে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিল। আমি নিজে ঠিক করতে গিয়ে সাইকেলের চেইনে হাত কেটে দরদর করে রক্ত পড়তে লাগল। বুঝতে পারলাম যে আরেক জোড়া হাত ছাড়া আমার নিজের পক্ষে মেরামত সম্ভব নয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সতীর্থ সাইক্লিস্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাত নাড়াতে থাকলাম। কেউ থামলেন না। বোঝা যাচ্ছে যে কেউ নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাকে সাহায্য করতে আগ্রহী নন।

২০ মিনিট অপেক্ষার পর থামলেন এক সাইক্লিস্ট। নাম তাঁর ক্রিস। আমার ধড়ে প্রাণ ফিরে এল। ক্রিসের সাহায্যে সাইকেলের সমস্যা ঠিক করার চেষ্টা করলাম। কাজ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে মরিয়া হয়ে ক্রিসকে বললাম, ‘তুমি আর সময় নষ্ট কোরো না। এগিয়ে যাও। আমার কোনো একটা ব্যবস্থা হবে।’ ক্রিস নাছোড়বান্দা। আমার সাইকেল ঠিক না করে তিনি নড়বেনই না। আরও ১০ মিনিট গুতাগুতি করার পর ঠিক হলো আমার সাইকেল। ক্রিসকে ধন্যবাদ দিয়ে আবার সাইকেল চালানো শুরু করলাম। মনটা ভরে রইল মিষ্টি এক অনুভূতিতে। কী চমৎকার একজন মানুষ ক্রিস! কোনো কারণ ছাড়াই আমার মতো অচেনা–অজানা একজন মানুষের জন্য অকাতরে মূল্যবান সময় ব্যয় করলেন।

১৮০ দশমিক ২ কিলোমিটার সাইকেল চালানোর পর শুরু হলো দৌড়ানোর পালা। দৌড়াতে হবে ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার। ৭ ঘণ্টা সাইকেল চালানোর পরই দৌড়ানো শুরু করা অনেক কঠিন। প্রথম এক মাইল দৌড়াতে গিয়ে অনেক কষ্ট হলো। মনে মনে ঠিক করেছিলাম, এইভাবে চলতে থাকলে প্রতিযোগিতা ত্যাগ করব। পেটে ছিল প্রচণ্ড খিদে। সামনেই এল ‘সাহায্য স্টেশন।’ সেখানে ছিল হরেক রকম খাবার—চিপস, ফল, পানীয় এবং মুরগির স্যুপ। পেটে একটু খাবার পড়তেই ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলাম।

ক্রিসের সঙ্গে এহসান হক

এভাবেই দৌড়ালাম ১৬ কিলোমিটার। হঠাৎ কাকতালীয়ভাবে দৌড়ের ময়দানে দেখা পেলাম ক্রিসের, যিনি আমার সাইকেল ঠিক করতে সাহায্য করেছিলেন। সামনে আরও ২৬ কিলোমিটার দৌড়াতে হবে। দৌড়াতে দৌড়াতে কথা বলতে থাকলাম ক্রিসের সঙ্গে। এর আগে তিনি ১০টা আয়রনম্যান শেষ করেছেন। স্বভাবতই ক্রিস অনেক অভিজ্ঞ এবং আমার চেয়ে অনেক ভালো দৌড়বাজ। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে ক্রিসের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে পাল্লা দিয়ে আমি দৌড়াতে পারছি। অনেকটা সঙ্গদোষে লোহার পানিতে ভেসে থাকার মতো।

ক্রিস আমাকে পুরোটা সময় দৌড়াতে নিষেধ করলেন। বললেন, ময়দানে তিন থেকে চার কিলোমিটার পরপরই আছে ‘সাহায্য স্টেশন’। দৌড়াতে হবে এক ‘সাহায্য স্টেশন’ থেকে আরেক ‘সাহায্য স্টেশন’ পর্যন্ত। বিরতি নেব সাহায্য স্টেশনে। বিরতির সময় প্রয়োজনমাফিক খাবার আর পানীয় দিয়ে শরীরে পুষ্টির পরিমাণ ঠিক রাখব।

জীবনে যেকোনো বয়সে কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়

ক্রিসের কৌশল কাজে দিল। অবলীলায় ক্রিসের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থেকে পাড়ি দিলাম ৪২ কিলোমিটার। ফিনিশিং লাইনটি তখন আর মাত্র ২০০ গজ দূরে। রাস্তার দুই পাশের দর্শকদের কান ফাটানো গর্জনকে মনে হচ্ছিল রণক্ষেত্রের জয়ধ্বনির মতো। ওই মুহূর্ত ভোলার নয়।

পাশ থেকে দৌড়াতে থাকা ক্রিস ধীরে ধীরে তাঁর গতি কমালেন। আমার পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন, ‘এগিয়ে যাও, উপভোগ করো তোমার পরিশ্রমের ফসল। আমি আছি তোমার পেছনে।’

আমার তখন সারা শরীরে এত ব্যথা যে মুখ ফুটে ধন্যবাদ না দিয়ে শুধু মাথা নাড়লাম। মুখটাকে শক্ত করে দুই হাত উঁচিয়ে উঁচিয়ে এক অনাবিল আত্মতৃপ্তির সঙ্গে অতিক্রম করলাম ফিনিশিং লাইন।

কঠোর পরিশ্রম এবং নিয়মানুবর্তিতার সমন্বয় করতে পারলে, জীবনে যেকোনো বয়সে কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়। আমাদের শুধু আশান্বিত হয়ে লেগে থাকতে হবে। কিন্তু তারপরও যদি নিয়তি আপনার সঙ্গে না থাকে, তাহলে সৃষ্টিকর্তা কাউকে না কাউকে পাঠাবেন আপনার সাহায্যের জন্য। যেমনটি আমার জন্য পাঠিয়েছিলেন ক্রিস নামক এক অসাধারণ মানুষকে।

লেখকের ইমেইল: [email protected]