খাওয়ার পরপরই যাঁরা বাসন পরিষ্কার করেন, তাঁরা কেন অনন্য, জেনে নিন তাঁদের ৮টি গুণ
খাওয়ার পরপরই বাসনকোসন মেজে ফেলা খুব সাধারণ একটি ঘরের কাজ বলেই ধরে নিই আমরা। কিন্তু মনোবিজ্ঞানীদের মতে এই অভ্যাসই একজনের ব্যক্তিত্বের কিছু অসাধারণ দিক তুলে ধরে।
খাওয়ার পরপরই বাসনকোসন পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে নিয়মানুবর্তিতা, মনোযোগ ও নম্রতা প্রকাশ পায়। অনেকেই যৌথ পরিবার বা মেসে থাকেন। তাঁদের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস অপরকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা প্রকাশ করে।
এ ছাড়া এই অভ্যাস রুটিন মেনে চলা, অবসাদ কমানো, নিজের যত্ন নেওয়া এবং দায়িত্বশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকেই ঘরের কাজ জমিয়ে রাখেন; কিন্তু যাঁরা খাওয়ার পরপরই বাসনকোসন পরিষ্কার করেন, তাঁরা ঘরের কাজও সেরে ফেলেন চটজলদি। এতে তাঁদের দূরদৃষ্টি এবং উপস্থিত বুদ্ধি প্রকাশ পায়।
তাঁরা কাজ ফেলে রাখেন না
এ ধরনের ব্যক্তিরা বাসন মাজা শেষ না করলে খাওয়া শেষ হয়েছে বলেই মনে করেন না। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এই আচরণ ‘জিগারনিক প্রভাব’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত।
মনোবিজ্ঞানে জিগারনিক প্রভাব বলতে বোঝায়, এমন এক মানসিক প্রবণতা, যেখানে কোনো কাজ মাঝপথে থেমে গেলে বা অসম্পূর্ণ থাকলে তা সম্পূর্ণ হওয়া কাজের তুলনায় মানুষের মনে বেশি সময় ধরে থাকে। সহজভাবে বললে, মানুষ অসমাপ্ত বা বাধাগ্রস্ত কাজগুলো সম্পন্ন কাজের চেয়ে ভালোভাবে মনে রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অসমাপ্ত কাজ কীভাবে আমাদের মনে গেঁথে থাকে। কাজ জমিয়ে রাখলে সেসবের কথা আমাদের সব সময় মনে পড়তে থাকে। এতে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
ঘরের কাজগুলো সময়মতো সেরে ফেললে মন থাকে চাপমুক্ত। কাজ সময়মতো সেরে ফেললে মনে শান্তি আসে। কাজ অসমাপ্ত না রাখার এই অভ্যাসের সুফল শুধু রান্নাঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সময়মতো অফিসে আসা, প্রজেক্ট শেষ করা, রোজকার সব কাজেই প্রতিফলিত হয়।
তাঁরা অপরকে সম্মান দেন
দ্রুত বাসন মেজে ফেলা মানুষেরা দলবদ্ধভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নোংরা ময়লা তাঁরা বাড়ির অন্যদের জন্য ফেলে রাখেন না। কাজটি নিজে করে ফেলে জায়গাটি পরিষ্কার রাখেন। এ ধরনের মানুষ অন্যের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেন।
ছোট ছোট কাজগুলো তাঁরা নিজেরাই করেন। যেমন রান্নাঘর পরিপাটি রাখা, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া কিংবা ডিশওয়াশার শেষ হয়ে গেলে বোতলটা আবার ভরে রাখা। এসব কাজ বাড়ির অন্য সদস্যদের প্রতি তাঁদের সম্মান ও বিবেচনাবোধ প্রকাশ করে।
তাঁরা রুটিন মেনে চলেন
খাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে বাসন মেজে ফেলা আদতে তাঁদের দৈনন্দিন রুটিনেরই অংশ। এই ছোট একটি কাজই প্রমাণ করে তাঁরা সময়ের কাজ সময়ে করতে কতটা পছন্দ করেন। ছোট ছোট কাজগুলো জমিয়ে না রাখার কারণে আরও বড় বড় কাজ করার জন্য তাঁরা যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে পারেন।
এই ছোট ছোট অভ্যাস জীবনে স্থিতিশীলতা আনে। আরও অনেক ইতিবাচক আচরণ দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। জীবনের কঠিন সময়গুলোয় তাঁরা সামলে নেন ভালোভাবে। সকালে হাঁটতে বের হওয়া, সন্ধ্যায় বই পড়ার মতো উপকারী অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট সময় পান তাঁরা।
তাঁরা নিয়মশৃঙ্খলা মানেন
খাওয়ার পর বাসন পরিষ্কার করার চেয়ে একটু বিশ্রাম করা যে কত সহজ, তা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। একটু বিশ্রামের তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে পাশ কাটিয়ে অনেকে এই পরিশ্রমের কাজটি বেছে নেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা জীবনে শৃঙ্খলা মেনে চলেন।
আর এই সাময়িক আরামের চেয়ে দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য বয়ে আনে। এই নিয়মানুবর্তিতা তাঁদের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যায়। যেমন নিয়মিত ব্যয়াম করে শরীর সুস্থ রাখা, টাকাপয়সা জমানো, চ্যালেঞ্জিং কাজ সম্পন্ন করা ইত্যাদি। এই ছোট ছোট কাজগুলোই ধীরে ধীরে মানসিক দৃঢ়তা ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
তাঁরা মনোযোগী
বাসন মাজা শুধু পরিচ্ছন্নতার সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয়। কাজটি মনোযোগেরও বটে। কাঁচের বাসনকোসন নাড়াচাড়ায় সাবধানী হতে হয়। পানির তাপমাত্রা কতটুকু থাকবে, কতটুকু সাবান লাগবে—এসব খেয়াল রাখতে হয়। সঙ্গে যুক্ত হয় বাসনের ঝনঝনানির শব্দ।
সব মিলিয়ে এসব কারণে সচেতনতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এই মনোযোগ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজে লাগে। যেমন মনোযোগ দিয়ে শোনা, ছোট ছোট বিষয়ের প্রশংসা করা, প্রতিদিনের অভিজ্ঞতাকে উপভোগ করা ইত্যাদি।
তাঁরা অবসাদ কমাতে নয়, বরং এড়াতে চান
রান্নাঘরে একগাদা এঁটো বাসন জমা হওয়া মানেই পরে প্রচুর কাজের চাপ ও অবসাদ। যাঁরা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাসন মেজে ফেলেন, তাঁরা অন্যান্য কাজও তাৎক্ষণিকভাবে সেরে ফেলেন।
যেমন সময়মতো বিল পরিশোধ, অপরের সঙ্গে বিরোধ থাকলে দ্রুত মিটিয়ে ফেলা ইত্যাদি। সমস্যা জমে না থাকার কারণে তাঁদের জীবন হয় চাপমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ।
তাঁরা ভারসাম্য রক্ষা করেন
তাৎক্ষণিকভাবে এঁটো বাসন ধুয়ে ফেলা মানুষেরা অন্যের সুস্থতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যকে গুরুত্ব দেন। তাঁরা কখনোই নোংরা বাসন জমিয়ে রুমমেট কিংবা বাড়ির অন্য সদস্যদের বিরক্ত করতে চান না। তাঁরা অন্যের ওপর কাজ চাপিয়ে দেন না।
এ ধরনের ব্যক্তিরা নিজেদের আরামের কথা না ভেবে দায়িত্ব পালন করে যান। নিজের যত্ন এবং সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেন।
তাঁরা অত্যন্ত নম্রভদ্র
সর্বোপরি বাসন সময়মতো মেজে ফেলা নম্রতার লক্ষণ। এই কাজের কোনো পুরস্কার নেই, কোনো স্বীকৃতি নেই। তারপরও কেউ এই কাজ করার অর্থ হলো, তাঁদের কাছে প্রশংসা নয়, অবদান রাখাই গুরুত্বপূর্ণ।
এই অভ্যাসই তাঁদের চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে। এতেই বোঝা যায়, তাঁরা বড় বড় কল্যাণের জন্যই ছোট ছোট দায়িত্ব নেন। তাঁদের এই বিনয়ী আচরণই পরিবার, কর্মস্থল ও সমাজকে সচল রাখে। বিনিময়ে তাঁরা কিছুই চান না।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট