বস ভুল ছিলেন: ডিজনির সিইও

১৬ অক্টোবর ডিজনির ১০০ বছর পূর্ণ হলো। এক শতাব্দী ধরে কত চমকপ্রদ গল্পই না হাজির করেছে এই প্রতিষ্ঠান। এ উপলক্ষে ডিজনির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বব আইগারের কিছু কথা শোনা যাক। ২০২১ সালের ২২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনে সমাবর্তন বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি।

ডিজনির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বব আইগার
ছবি: রয়টার্স

আজ কী বলব, ভাবতে বসে পুরোনো স্মৃতিতে ডুব দিয়েছিলাম। আমি সমাবর্তন নিয়েছি আজ থেকে ৪৮ বছর আগে। আমার সময়ে সমাবর্তন বক্তা কে ছিলেন, এখন আর মনে নেই। আমার ধারণা, বড়জোর ৬ শতাংশ মানুষ সমাবর্তন বক্তাকে মনে রাখে। তোমাদের হাতে অবশ্য ক্যামেরাসহ মুঠোফোন আছে। অতএব অর্ধশত বছর পরও আমার মুখটা তোমরা স্মরণ করতে পারবে, এ আশা করতেই পারি।

তবে হ্যাঁ, একটা ব্যাপার আমার মনে আছে। তোমাদের বয়সে, তোমাদের জায়গায় বসে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমিও একেবারেই অনিশ্চিত ছিলাম। কখনো ভাবতেও পারিনি, সমাবর্তন বক্তৃতা দিতে কেউ আমাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। ধন্যবাদ এ সুযোগের জন্য।

গত কয়েক বছরে দুটি প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি শুনেছি—

১. আপনার সবচেয়ে প্রিয় ডিজনি চরিত্র কোনটি?

২. আপনার সাফল্যের পেছনে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর: টিঙ্কারবেল। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো ‘সাহস’। আমি মনে করি, সাহসী হওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় এখন। নিজের অভিজ্ঞতা আর গুরুজন ও বন্ধুদের পরামর্শের ভিত্তিতে আজ বলতে পারি, জীবনে অর্থবহ কিছু করতে চাইলে সাহসী হওয়ার বিকল্প নেই। ভীরুতা দিন শেষে তোমাকে কোথাও পৌঁছে দেবে না। সাহসী হওয়া মানে কিন্তু ‘ভীরু না হওয়া’ নয়। সাহসী হওয়া মানে ভয় কিংবা অনিশ্চয়তার মুখেও দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

আরও পড়ুন

ব্যর্থতা পৃথিবীর শেষ নয়, এমনকি পথের শেষও নয়। তোমাদের বয়সে আমার স্বপ্ন ছিল সংবাদ উপস্থাপক হব। কলেজ শেষ করার পর যখন একটা ছোট টিভি স্টেশনে আবহাওয়ার সংবাদ উপস্থাপনের দায়িত্ব পেলাম, ভেবেছিলাম আমি ঠিক পথেই আছি। তবে কিছুদিনের মধ্যে টের পেলাম, আবহাওয়ার সংবাদ উপস্থাপনের কাজে আমি খুবই খারাপ এবং এ কাজ করে আদতে আমার স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। তাই ২৩ বছর বয়সে চাকরি ছেড়ে একেবারে অন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা কিন্তু বেশ সাহসের ব্যাপার।

কয় দিন পর আমি এবিসিতে খুব ছোট একটা চাকরি পেলাম। বলতে পারো খুবই নিচের দিকের পদ—প্রোডাকশন সহকারী। কয় দিন পর বস ডেকে জানিয়ে দিলেন, পদোন্নতি পাওয়ার লোক আমি নই। অতএব আমি যেন সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে অন্য কোনো চাকরি খুঁজে নিই।

বস ভুল ছিলেন। পরের চাকরিতেই আমি ঠিক পদোন্নতি পেয়েছি। বাকিটা সবার জানা।

এসব বলার অর্থ হলো—ধাক্কা খাওয়া, ‘না’ শোনা, এসব তো জীবনেরই অংশ। প্রত্যেক সফল মানুষই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে সংগ্রাম করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন। স্টিভ জবসকে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত অ্যাপল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ওয়াল্ট ডিজনিকে বলা হয়েছিল, তাঁর নাকি কল্পনাশক্তির অভাব। ভাবতে পারো?

ওয়াল্ট জীবনে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু কখনো আশা হারাননি, সাহস হারাননি। আমরাও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চেষ্টা করেছি। সাহসী গল্প বলা অব্যাহত রেখেছি।

মেক্সিকোয় একটা বিশেষ উৎসব হয়—ডে অব দ্য ডেড। কয়েক বছর আগে এই উৎসবনির্ভর একটা গল্প নিয়ে আমাদের কাছে হাজির হয়েছিল পিক্সার। গল্পজুড়ে রঙিন সব চরিত্র আছে, লোকজ চিত্র আছে, ঐতিহ্যবাহী সুর আছে, সব ঠিকঠাক। কিন্তু সংশয়বাদীরা বলতে শুরু করল, পৃথিবীর এক কোণের একটা উৎসবের গল্পের সঙ্গে তো বাইরের মানুষ নিজেদের মেলাতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত তাদের কথা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কোকো পৃথিবীর যে প্রান্তেই মুক্তি পেয়েছে, দর্শক দারুণ পছন্দ করেছে। কারণ, এই ছবি আদতে মানুষের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, বেঁচে থাকার সৌন্দর্য উদ্‌যাপন করতে শেখায়।

একই ঘটনা ঘটেছে আরেকটি চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে। মার্ভেলের ব্ল্যাক প্যানথার, যে ছবি নিয়ে আমি সব সময় গর্ব করি। কৃষ্ণাঙ্গ পরিচালক রায়ান কুগলার হাজির হয়েছিলেন এক কৃষ্ণাঙ্গ সুপারহিরোর গল্প নিয়ে। যথারীতি অনেকে বলতে শুরু করেছিল, এই ছবি চলবে না। কিন্তু ব্ল্যাক প্যানথার তুমুল সফলতা পেয়েছে। একটি সাহসী সিদ্ধান্ত সুপারহিরোদের প্রতি মানুষের ধারণা বদলে দিয়েছে এবং এই পরিবর্তনই হয়তো সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।

অতএব যেভাবে, যে ভূমিকাই রাখো না কেন, হোক গল্প বলার মাধ্যমে কিংবা অন্য কিছু, এ পৃথিবীর স্বার্থে তোমাকে সাহসী হতে হবে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প হাতে নিতে হবে। ভেবে দেখো, তোমরা প্রত্যেকে যদি অন্তত একটা সাহসী পদক্ষেপ নাও, হোক খুব ছোট পরিসরে, তাতেও পৃথিবীতে কত বড় পরিবর্তনই–না আসবে! (সংক্ষেপিত)

ইংরেজি থেকে অনূদিত

আরও পড়ুন