লিফটে উঠে কোন দিকে তাকাবেন?

কয়েক সেকেন্ড থেকে বড়জোর কয়েক মিনিট—এ সময়ে একজন মানুষকে বিচার করা কঠিন। তবে কিছু জায়গা আছে, যেখানে এই স্বল্প সময়েও একজন মানুষ আপনার মধ্যে বিরক্তি উৎপাদনে সক্ষম। লিফট তেমনই একটি জায়গা। লিফটে কোন ধরনের কাজগুলো করা যাবে আর কী কী করা যাবে না, এসব বিষয়েই পরামর্শ দিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা মোস্তফা খানম ও লিফট সার্ভিস–বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘মান বাংলাদেশ লিমিটেড ’–এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত বিভাগের ইনচার্জ মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন

মোবাইল ফোনে উঁচু গলায় লিফটে কথা বলা উচিত নয়মডেল: মিথুন, বাঁধন, মিজান ও অভি। ছবি: অধুনা

কোন দিকে তাকাবেন

লিফটে উঠে কোন দিকে তাকাবেন, তা নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়েন। কেউ হয়তো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন। এতে সামনের মানুষটির বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা মোস্তফা খানম বলেন, ‘আমরা তো লিফটে কয়েক সেকেন্ড বা বড়জোর মিনিটের জন্য উঠি। এই পুরো সময়টা কারও দিকে তাকিয়ে থাকলে সে অবশ্যই বিব্রত হবে।

তাই লিফটে উঠে কখনোই কারও দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকা উচিত নয়। বরং নিচের দিকে তাকানো যেতে পারে। লিফটি কত তলায় রয়েছে বা আমি যে তলায় যাওয়ার জন্য লিফটে উঠেছি, তা আসতে কতক্ষণ, সেটি দেখার জন্য মাঝেমধ্যে লিফটে থাকা ছোট স্ক্রিনে তাকাতে হয়।’

অন্যের জন্য জায়গা করে দিন

অধ্যাপক সুলতানা মোস্তফা খানম বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, লিফটে উঠেই কেউ কেউ সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে তাঁর পরে যে ব্যক্তি লিফটে ওঠেন, তাঁর ভেতরে যেতে অসুবিধা হয়। লিফটে জায়গাস্বল্পতার জন্য এ সময় হয়তো কারও সঙ্গে ধাক্কাও লেগে যেতে পারে। তাই লিফটে যে প্রথমে উঠবেন, তাঁর উচিত ভেতরের দিকে চলে যাওয়া।’

প্রথমে যাঁরা লিফটে উঠবেন, তাঁরা লিফটের চারদিক ঘেঁষে দাঁড়ালে এরপর যাঁরা উঠবেন, তাঁরা লিফটের মাঝের ফাঁকা স্থানে সহজে দাঁড়াতে পারবেন। লিফটে এমনভাবে দাঁড়ান, যাতে আপনার সামনে বা পেছনের ব্যক্তির অস্বস্তি না হয়।

আরও পড়ুন

লিফটের কাছাকাছি এলে অপেক্ষা করুন

রিনার (ছদ্মনাম) অফিসে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং রয়েছে। যানজটের কারণে তাঁর এমনিতেই কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। অফিসে পৌঁছে দেখলেন, লিফটের দরজাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দৌড়ে লিফটের বোতাম চাপার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।

অথচ লিফটের ভেতর থেকে কেউ রিনাকে দেখে লিফটের দরজা খোলার বোতাম চাপলেই তিনি লিফটে উঠতে পারতেন। এমন ঘটনার সঙ্গে হয়তো আমরা অনেকেই পরিচিত। আমাদের উচিত, দূর থেকে কাউকে আসতে দেখলে তাঁর জন্য লিফটের দরজা খুলে দেওয়া। এটা একধরনের সৌজন্যবোধ।

ব্যক্তিগত আলাপ থেকে বিরত থাকুন

লিফটে উঠে সবাই যদি গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাহলে যেমন বিষয়টি দেখতে ভালো লাগে না, ঠিক তেমনি কেউ খুব ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করলে অন্যরা বিব্রত হতে পারেন।

লিফটে উঠে পরিচিত বা অপরিচিত যে-ই থাকুক না কেন, তাঁর দিকে সৌজন্যতামূলক হাসি দিন। এতে লিফটে গুরুগম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টি হবে না। চাইলে দু-একটা কথাও বলা যেতে পারে, তবে খুব উচ্চ স্বরে নয়।

আর লিফট যেহেতু খুব ছোট জায়গা এবং না চাইলেও আপনার কথা আরেকজনের কানে পৌঁছে যাবে, তাই লিফটে কোনো ব্যক্তিগত কথা বলবেন না।

আরও পড়ুন

মুঠোফোনের ভলিউম কমিয়ে রাখুন

লিফটে সাধারণত মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তবে অনেকে লিফটে মুঠোফোনে উচ্চ স্বরে কথা বলে বা কথা বলার চেষ্টা করেন। খুব জরুরি না হলে লিফটে উঠে মুঠোফোন রিসিভ না করাই ভালো।

আবার হুট করে আপনার ফোনের কোনো ভিডিও চালু হয়ে গেলে আপনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। তাই মুঠোফোনের ভলিউম কমিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন।

যদি আগে থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে লিফট চলে আসেন, তাহলে অপর প্রান্তের থাকা ব্যক্তিকে জানিয়ে দিন, আপনি লিফটে উঠছেন। লিফট থেকে নেমে ফোনে যুক্ত হবেন জানিয়ে রেখে দিতে পারেন।

অযথা বোতাম চাপবেন না

লিফট দেখভাল করাটাও আমাদের দায়িত্ব। বারবার অতিরিক্ত শক্তি দিয়ে লিফটের বোতাম চাপা হলে বোতাম নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে লিফটের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

লিফট সার্ভিস–বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘মান বাংলাদেশ’–এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত বিভাগের ইনচার্জ মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন বলেন, ‘প্রতিটি লিফটেই ধারণক্ষমতা লেখা থাকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ওজনের বস্তু লিফটে ওঠানো উচিত নয়। এ ছাড়া তরল পদার্থ নিয়ে লিফটে ওঠা উচিত নয়। কোনোভাবে তরল পদার্থ লিফটের যন্ত্রাংশে প্রবেশ করলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।’

আরও পড়ুন