নাম মেসি, পছন্দ করেন না ফুটবল
৩১ অক্টোবর রাজধানীর আসাদ গেটের সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্ব। দিনব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ঘুরে ঘুরে দেখলাম অভিনব, মজার কিছু ঘটনা।
রোবট দিয়ে উদ্বোধন
জগৎটাকে এক সময় নাকি রোবট দখল করে নেবে। এআই এসে সেটা হাতেকলমে বুঝিয়ে দিচ্ছে। ‘নাও’ নামের এক ছোট্ট রোবটের ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবারের বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্ব।
উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরেই মূল মঞ্চে দেখা গেল সেই রোবট নাওয়ের হিপহপ ড্যান্স। তবে মজার ব্যাপার হলো, হিপহপ ড্যান্সের একপর্যায়ে মঞ্চেই হঠাৎ পড়ে যায় নাও। সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোবট নাও বলে ওঠে ‘আউচ’। এতে তো দর্শক হেসে কুটি কুটি।
নিজের নাম লিওনেল মেসি, ভাইয়ের নাম ক্রিশ্চিয়ানো
উৎসবে ঘুরে হঠাৎ দেখা মিলল লিওনেল মেসির। না, ফুটবল তারকা মেসি নয়, বরং এই মেসি বিজ্ঞান উৎসবের আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ী। এসেছে বরিশাল থেকে। মজার ব্যাপার হলো, সে নিজে তো মেসি বটে, তার ভাইয়ের নাম ক্রিশ্চিয়ানো। কেন এই নাম, জিজ্ঞেস করতেই মেসি বলল, ‘আমার বাবা বিশাল বড় ফুটবল ভক্ত। আমাদের জন্মের আগে থেকেই তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন এই নাম।’ তোমারও কি তবে ফুটবল পছন্দ?-এমন প্রশ্ন করতেই সে অবাক করে দিয়ে বলল, ‘না। আমার ফুটবল পছন্দ না আসলে।’ ভাবা যায়, নাম লিওনেল মেসি, তার নাকি ফুটবল অপছন্দ!
সূর্যের আলোতে সেদ্ধ ডিম
উৎসবের দিন ছিল কাঠ-ফাটা রোদ। এমন রোদ যে মাথায় চাল চড়িয়ে দিলে হয়ে যাবে ভাত। তবে ভাত না হলেও হয়েছে ডিম সেদ্ধ। এবারের আয়োজনে সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের তিন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে এমন এক প্রজেক্ট নিয়ে—নাম ‘বক্স সোলার কুকার’। কাঠের এক বাক্সে ঢাকনার ভেতর রাখা দুটি ডিম—আয়োজনের মাঠে সারা দিনব্যাপী দেখা গেল এই দৃশ্য। উৎসুক সবাই গোল হয়ে বারবার দেখছিল, কী ‘কুক’ হচ্ছে? সবার প্রশ্ন একটাই, ডিম কি সত্যিই সেদ্ধ হবে? উত্তর পাওয়া গেল বিকেল বেলা। দেখা গেল সত্যিই কাচা ডিম পরিণত হয়েছে সেদ্ধ ডিমে, তা-ও আবার সূর্যের তাপে। সেটা আবার দুই স্বেচ্ছাসেবক খেয়ে প্রমাণ করেও দেখাল।
এআই-এর নাম রাসেল এআই
চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, ডিপসিক, সবকিছু ছাড়িয়ে এবার এল নতুন এআই—রাসেল এআই। এবারের বিজ্ঞান উৎসবে যশোর শিক্ষা বোর্ড স্কুলের শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসান ও এস এম আলিউল হোসাইন নিয়ে এসেছে এই ‘ফুল পাওয়ার্ড বাংলা ইন্টার্যাক্টিভ এআই মডেল’ (রাসেল এআই)।
এত নাম থাকতে রাসেল কেন? এমন প্রশ্ন করতে তাহমিদ বলে, ‘আসলে এআইটি বানানোর পর কী নাম দেওয়া যায়, তা নিয়ে বেশ ঝামেলা হচ্ছিল আমাদের মধ্যে। তাই এসব এড়াতে কোন কারণ ছাড়াই নাম দিই রাসেল এআই।’
রাসেল এআই-এর মাধ্যমে তাহমিদ ও আলি বিজ্ঞান উৎসবের খুলনা পর্বে প্রথম স্থান অর্জন করে জাতীয় পর্বে এসেছে।
বিজয়ী টি-শার্ট পরে ঘোরাঘুরি
এবারের উৎসবে এমন একজনকে দেখা গেল, যে কিনা বিজয়ী না হয়েও বিজয়ীর টি-শার্ট পরে কাটিয়ে দিয়েছে সারা দিন। প্রতিবারের মতো আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের জন্য ছিল কিছু আলাদা টি-শার্ট। তবে আয়োজনের সকালবেলা স্বেচ্ছাসেবকদের টি-শার্ট দেওয়ার সময় ভুলে একজনকে দেওয়া হয় বিজয়ী টিশার্ট। ফলাফল—স্বেচ্ছাসেবকদের একজন টের পাওয়া অব্দি সেই টি-শার্ট পরেই ঘুরে বেড়িয়েছে সেই ‘নকল বিজয়ী’ স্বেচ্ছাসেবক।
মাত্র ২৪ সেকেন্ডে রুবিকস কিউব মিলিয়ে বাজিমাত
এবারের বিজ্ঞান উৎসবে কুইজ, প্রজেক্ট প্রদর্শনী, সুডোকু ছাড়াও ছিল রুবিকস কিউব প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতায় মাত্র ২৪ সেকেন্ডে রুবিকস কিউব মিলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বরিশাল থেকে আসা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী দিলশার। মজার ব্যাপার হলো, আগের রাতে ঢাকা আসার সময় সঙ্গে করে রুবিকস কিউব আনতে চায়নি সে। মায়ের জোরাজুরিতেই নাকি নিয়ে আসে দিলশার। সে রুবিকস কিউব মেলানো শুরু করেছিল তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে।