ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্যের উৎসবে শামিল সবাই

বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন শিক্ষার্থীরাছবি: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সৌজন্যে

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে যে একটা উৎসব চলছে, ক্যাম্পাসে ঢুকেই তা টের পাওয়া গেল। বলছি ‘ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি লিট-কার্নিভাল ২০২৫ ’-এর কথা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি বিভাগের এ আয়োজনে অংশ নিয়েছে দেশের ২২টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৬ অক্টোবর দিনব্যাপী চলা এ আয়োজনের অন্যতম সহযোগী ছিল ‘স্বপ্ন নিয়ে’।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। পরে তিনি উৎসব উপলক্ষে বসানো স্টলগুলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

উৎসবকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর ছিল পুরো ক্যাম্পাস। সাহিত্য রচনা, শৈল্পিক উদ্ভাবন এবং সৃজনশীল কাজকে উৎসাহিত করতে উৎসবে ছিল বর্ণিল নানা আয়োজন। স্পট পোয়েট্রি ও আবৃত্তি, কমিক-কন ও কসপ্লে, পোস্টার প্রদর্শনী এবং নাটক—এই চার বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতা। অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা দুই শর বেশি শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতাগুলো অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুর এলাহী মিলনায়তনে।

নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অদিতি সরকার। নাটক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে তাঁদের ১০ জনের দল। নাটকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের মুক্তির চেতনাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন তাঁরা। অদিতি বলেন, ‘আমাদের নাটকের নাম মুক্তি। আমরা এখানে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বিভিন্ন লেখায় “মুক্তি” শব্দটির যে অনুপ্রেরণা, তারই সম্মিলন ঘটাতে চেয়েছি।’ অদিতি জানান, ইংরেজি ক্লাবের শিক্ষার্থীরা মিলে এক সপ্তাহের অনুশীলনে নাটকটি মঞ্চস্থ করেছেন।

আরও পড়ুন

উৎসব উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণজুড়ে বসেছিল ছোট ছোট স্টল। স্টলগুলোয় খাবার, গয়না, সুগন্ধী কিনতে ভিড় করে শিক্ষার্থীরা। পুরোনো বই বিনিময়ের জন্যও ছিল আলাদা স্টল। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত হোসেন বন্ধুদের নিয়ে ঘুরছিলেন স্টলে স্টলে। তিনি বলেন, ‘সকালে ক্লাস ছিল, তাই একটু দেরি হয়ে গেল। স্টলগুলো ভালো লেগেছে, তবে খেলার স্টলে যাওয়া এখনো বাকি। সব কটিই ঘুরে দেখব।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
ছবি: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সৌজন্যে

ইংরেজি বিভাগের চেয়ারপারসন ও সহযোগী অধ্যাপক আখতার জাহান বলেন, ‘এবারই প্রথমবারের মতো আমরা আয়োজনটি করেছি। শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহ নিয়ে অংশ নিয়েছে। ঢাকার বাইরের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শিক্ষার্থীরা এসেছেন। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা দেখাতে চেষ্টা করেছি সাহিত্য কেবল বইয়েই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের জীবনের সঙ্গেও এটি জড়িত।’ আখতার জাহান জানান, প্রতিবছরই এই উৎসব আয়োজনের কথা ভাবছেন তাঁরা।

সন্ধ্যায় মঞ্জুর এলাহী মিলনায়তনে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা। এর আগে মুখোশ এবং বিশেষ পোশাকের আড়ালে নিজেদের পরিচয় গোপন করে ‘মাস্ক্যারেড’–এ অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক শামস রহমান। ৪০ বছর আগের স্মৃতি স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমাদের দেখে আজ আমার নিজের তরুণ বয়সের কথা মনে পড়ছে। আমি তখন ২০ বছরের যুবক। তোমাদের মতো আমারও নাচের শখ ছিল। কিন্তু তোমাদের মতো এত ভালো পারতাম না, তোমরা আমার চেয়ে অনেক ভালো।’ পুরো আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল আমি যেন ষোড়শ শতকে, শেক্‌সপিয়ারের সময়ে আছি। নিজেকে সে সময়ের ভেনিসের বাসিন্দা মনে হচ্ছিল। মঞ্চটি লাগছিল প্রাসাদের মতো।’

এমন অনুষ্ঠান প্রতি বছরই করার ইচ্ছে আয়োজকদের
ছবি: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সৌজন্যে

আয়োজন শেষে আলিফ ইসলামকে বন্ধুদের সঙ্গে উদ্‌যাপন করতে দেখা গেল। নাটক বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে তাঁর দল। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষার্থী জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। আর কিছুদিন পরই তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ হতে চলেছে। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘আগেও বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিই হয়তো আমার শেষ পুরস্কার। এ জন্য এই প্রাপ্তিটা আমার জন্য বিশেষ।’

আরও পড়ুন