বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ক্লাবের সদস্যরা যেভাবে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হচ্ছেন

দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়েই ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের আলাদা সংগঠন আছে। এই সংগঠনগুলো মূলত কী ধরনের কাজ করে? কীভাবে সংগঠনের সদস্যরা ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হচ্ছেন? খোঁজ নিয়েছেন ছিদরাতুল মুনতাহা

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ফার্মাসিউটিক্যাল ক্লাব

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ফার্মাসিউটিক্যাল ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে। ক্লাসে বা ল্যাবে শেখা তত্ত্বগুলো ঝালাইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলা ক্লাবের লক্ষ্য। সদস্যদের সব সময় সক্রিয় রাখতে ক্লাবের পক্ষ থেকে সারা বছরই বিভিন্ন কর্মসূচি থাকে। ফিল্ড ট্রিপ, ফার্মা ক্যাম্প বা স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ছাড়াও রক্তদান, বন্যায় ত্রাণ বিতরণ, খেলাধুলা, নানা কার্যক্রমে সরব থাকে নর্থ সাউথের ফার্মা ক্লাব।

ফিল্ড ট্রিপ, ফার্মা ক্যাম্প বা স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ছাড়াও রক্তদান, বন্যায় ত্রাণ বিতরণ, খেলাধুলা, নানা কার্যক্রমে সরব থাকে নর্থ সাউথের ফার্মা ক্লাব
ছবি: ক্লাবের সৌজন্যে

ক্লাবের সদস্যদের দাবি, দেশের সবচেয়ে বড় ফার্মাসিউটিক্যাল উৎসবের (ফার্মা ফেস্ট) আয়োজক তাঁরা। দুই দিনের এই উৎসব দেশের সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও হাসপাতালের প্রতিনিধি—সবাইকে এক ছাদের নিচে আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা তাঁদের ফার্মেসিভিত্তিক উদ্ভাবনী ধারণা স্টলের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিও ক্যাম্পাসে বুথ স্থাপন করে। এ ছাড়া উৎসবে থাকে অলিম্পিয়াড, পোস্টার প্রেজেন্টেশন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা। এসবে দল বেঁধে অংশ নেওয়ার সুবাদে হয় নেতৃত্বের চর্চাও।

ওষুধশিল্প বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কর্মশালা ও সেমিনারেরও আয়োজন করে ফার্মাসিউটিক্যাল ক্লাব। এর মাধ্যমে পেশাজীবীদের সঙ্গে তাঁদের নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। শুরুতে ৫০ জনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করা ক্লাবের সদস্যসংখ্যা এখন প্রায় ছয় শ। বর্তমান সভাপতি রাহিল রাইয়ান বলেন, এই ক্লাবের কার্যক্রম শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পেশাগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

ক্লাবের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। তার মধ্যে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড অন্যতম। ক্লাবের প্রাক্তন সদস্যরাও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, হেমোকিউ, স্কয়ার, ইনসেপ্টা, রেনেটা ও বেক্সিমকোর মতো দেশ-বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে।

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মা ক্লাব

ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্মে একত্র করা, একাডেমিক ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা এবং সমাজসেবা ও নেতৃত্বমূলক কাজে সম্পৃক্ত করা—এসব লক্ষ্যে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মা ক্লাব। তবে একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্লাব পরিচালনাটা ছিল বেশ কঠিন। তা ছাড়া বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা, সদস্যসংখ্যা বাড়ানো, এসব চ্যালেঞ্জও সামাল দিতে হয়েছে। সব সামলেই নিজের একটা অবস্থান তৈরি করেছে এই সংগঠন।

শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মা ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়
ছবি: ক্লাবের সৌজন্যে

ক্লাবের যোগাযোগ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক তাহমিদ চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের ভিন্ন ভিন্ন শহর, মফস্বল, গ্রাম থেকে উঠে আসে। অন্যান্য ক্লাবে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে কাজ করেন, তাই অনেকে অনেক সময় নিজেকে প্রকাশ করতে সংকোচবোধ করেন। নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই সংকোচ অনেকটাই কমে আসে। ফলে বিভাগের ক্লাবগুলোতে সবাই পরিচিত হওয়ায়, শেখার আরও বেশি সুযোগ পান।’

শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। বিদেশে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সেমিনার, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা, পোস্টার প্রেজেন্টেশন, অলিম্পিয়াড, ফার্মা ফেস্ট ও ইনডোর খেলাধুলা (দাবা, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস) চলে নিয়মিত। এসবের পাশাপাশি শীতবস্ত্র বিতরণের মতো সামাজিক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়। ক্লাবের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ফার্মা ফেস্ট’। যেখানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্স ও ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের উপস্থাপন দক্ষতা, নেতৃত্বগুণ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সুযোগ পান। পাশাপাশি এসবের মধ্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও একটা যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায়।

ফার্মা ক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামী প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ছেন। কেউ চাকরি করছেন, কেউ গবেষণা করছেন। ফলে অনুজদের জন্যও সামনের যাত্রাটা সহজ হচ্ছে।

তাহমিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের বর্তমান সদস্যসংখ্যা ২০০। এত সদস্যকে সুশৃঙ্খল ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা আশা করি ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেমিনার এবং সম্মেলন আয়োজন করার মতো সক্ষমতাও আমাদের হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সঙ্গেও একটা পার্টনারশিপ গড়ে উঠবে। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্যারিয়ার নিয়ে বাস্তবিক নির্দেশনা পাবেন।’

আরও পড়ুন

ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ফার্মা ক্লাব

ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ফার্মা ক্লাব (আইইউবি ফার্মা ক্লাব) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাডেমিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানোই ছিল লক্ষ্য। পাশাপাশি ফার্মাকোলজি, মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞান শিক্ষার্থীরা যেন বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারেন, সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে ক্লাবটি কাজ করে যাচ্ছে।

আইইউবি ফার্মা ক্লাব সারা বছর ধরেই বিভিন্ন একাডেমিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। তার মধ্যে আছে সেমিনার, ড্রাগ ডিজাইনিং ও ফার্মা মার্কেটিং–বিষয়ক কর্মশালা, ফার্মা ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট, ক্যারিয়ার গাইডলাইন সেশন ও সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম। শিল্পবিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার ও ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানও আয়োজন করেন তাঁরা। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও আয়োজন করা হয়। যেমন ফার্মা জিনিয়াস চ্যালেঞ্জ, ফার্মা অলিম্পিয়াড, রিসার্চ পেপার প্রেজেন্টেশন, কেস স্টাডি প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পোস্টার প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি। খেলাধুলার দিকেও দেওয়া হয় বিশেষ নজর।

আইইউবি ফার্মা ক্লাব সারা বছর ধরেই বিভিন্ন একাডেমিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে
ছবি: ক্লাবের সৌজন্যে

ক্লাবের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্পের কাজও সম্পন্ন হয়েছে, জানালেন বর্তমান সভাপতি মো. আবেদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব শিক্ষাবিষয়ক চাহিদা ও ক্যারিয়ার গোল থাকে। তাই শিক্ষার্থীরা ডিপার্টমেন্টভিত্তিক ক্লাবগুলো থেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতা, গবেষণাপদ্ধতি, ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির বাস্তব জ্ঞান, নেটওয়ার্কিং ও দলবদ্ধভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যা তাঁর ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে কাজে লাগে।’ ক্লাবটিতে বর্তমানে সক্রিয় সদস্য আছেন ৬০০ জনের বেশি, যাঁদের অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে গবেষণাপত্র প্রতিযোগিতা ও কর্মশালায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন।

আবেদুজ্জামান জানালেন, প্রাক্তন সদস্যরা অনেকে রেনেটা, স্কয়ার, ইনসেপ্টা, বিকন, বায়োফার্মা, সাইনোভিয়া, ল্যাবএইডের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করছেন। কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াতেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন কেউ কেউ। ক্লাবের সঙ্গে ইনসেপ্টা, স্কয়ার, এসিআই, জেনফার ডিবিএল ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের মতো প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব আছে, যারা বিভিন্ন আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে। ক্লাবের সভাপতি বলেন, ‘আমরা চাই আইইউবি ফার্মা ক্লাব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি সম্মানজনক রিসার্চ ও ইনোভেশন প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠুক। সদস্যদের জন্য শিল্প খাতের সঙ্গে সংযোগ, বৃত্তি ও গবেষণার সুযোগ আরও বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য।’

আরও পড়ুন