মঞ্চের পেছনের তারকা

শামীর আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

শামীর আহমেদ বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকার গোপীবাগে। ছেলেবেলা থেকেই বন্ধুদের নিয়ে এলাকায় ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রকাশ,  শ্রাবণ মেলাসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন। ছবি আঁকার পাশাপাশি ছোট বেলা থেকে দেশি-বিদেশি নানা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান দেখার ঝোঁক থেকে মঞ্চসজ্জার (সেট ডিজাইন) প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি স্টুডিও অ্যাশের স্বত্বাধিকারী। বাংলাদেশে মঞ্চসজ্জার জন্য যে কটা প্রতিষ্ঠান বেশ পরিচিত, তার মধ্যে স্টুডিও অ্যাশ অন্যতম।
পুরান ঢাকার সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে উঠেছেন শামীর আহমেদ। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। আট বছর বয়সে যখন বাবা মারা যান, সংসারের হাল ধরেন বড় বোন আফসার জাহান। শিক্ষকতার পাশাপাশি টিউশনি করে ছোট ভাইবোনদের বড় করেছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার উৎসাহ দিয়েছেন সব সময়। বড় বোন আফসার জাহান ও সেজ বোন মেহেরুন্নেসার উৎসাহেই ২০০২-০৩ সেশনে শামীর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। বিভাগ—অঙ্কন ও চিত্রায়ণ। চারুকলায় বন্ধুদের নিয়ে তিনি গড়েছিলেন ইসকা নামের একটি সংগঠন; যারা ছবি প্রদর্শনী, ফ্যাশন শোসহ নানা আয়োজন করে।
পেশাগত জীবনের শুরুতে কিছুদিন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেছেন শামীর। ২০০৬ সাল থেকে চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা পিপলু আর খানের সঙ্গে শিল্প নির্দেশক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তখন মূলত বিজ্ঞাপনের সেট ডিজাইন করতেন। তবে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জার প্রতি ছেলেবেলায় সেই যে আগ্রহ জেগেছিল, সেটা তখনো হারিয়ে যায়নি। শুরু হলো বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার হয়ে মঞ্চ সজ্জার কাজ।

আরও পড়ুন

২০০৮ সালে ‘প্যানটিন ইউ গট দ্য লুক’ প্রতিযোগিতার সেট ডিজাইনের বড় দায়িত্ব পড়ে তাঁর কাঁধে। এরপর ধীরে ধীরে ২০১০ সালে প্রথম আলোর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, গ্রামীণফোনের একাত্তরের চিঠি, আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড, মেরিল আদরে গড়া ভবিষ্যৎ, গ্রামীণফোন আমার দেশ আমার গর্ব, দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিট, ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেট, প্রথম আলোর ক্রীড়া ও বই পুরস্কার, ঢাকা লিট ফেস্ট, মন উৎসব, বর্ণমেলা, চরকি কার্নিভালসহ নানা আয়োজনে সেট ডিজাইন করেছেন। মঞ্চের নকশার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁরা নিজস্ব ভাবনা।

টানা বেশ কয়েক বছর মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন তিনি
ছবি: সংগৃহীত

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজানোর দায়িত্ব প্রথমবার পেয়েছিলেন ২০১০ সালে। সেবার তাঁর কাজ বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। এরপর ২০১১, ২০১৫-২০২৩, সর্বশেষ এ বছরও তিনিই ছিলেন দায়িত্বে। মঞ্চসজ্জায় আধুনিক প্রযুক্তি ও দেশীয় কারুশিল্পের সংমিশ্রণ ঘটানোর মধ্য দিয়েই নিজের একটা স্বকীয়তা তৈরি করেছেন শামীর আহমেদ। নানা সময়ে ভিনদেশের প্রদর্শনীতেও আমন্ত্রণ পেয়েছেন এই শিল্পী। ভারত, নেপাল, চীন, হংকং, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে।
২০১১ সালে স্টুডিও অ্যাশ দাঁড় করানোর পর শুরু থেকেই পাশে ছিলেন বন্ধু সায়েম সাদাত। ২০১৫ সালে হঠাৎ সাদাতের মৃত্যুতে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ভালো কাজের প্রত্যয়ে।

শামীর আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

শামীর আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে মঞ্চসজ্জার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা উচিত। পাশাপাশি যদি আলোকিত মঞ্চসজ্জার নেপথ্যের কারিগরদের যথোপযুক্ত সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়া যায়, তবে তরুণেরা এই পেশায় আরও আগ্রহী হবে। তিনি বলেন, ‘পেশাদার সেট ডিজাইনারের আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি আমাদের দেশীয় কারুশিল্প সম্পর্কেও ধারণা রাখা দরকার। আমাদের দেশে বড় ইভেন্টগুলোতে বিদেশ থেকে টেকনিশিয়ান আনতে হয়। কিন্তু আমরা যদি নিজেদের লোকদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিই, ভালো কাজের স্বীকৃতি দিই, তাহলে দেশেই দক্ষ টেকনিশিয়ান গড়ে তোলা সম্ভব। এই খাতে তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুললে বৈশ্বিক বাজারেও আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারব।’

আরও পড়ুন