গরম গরম মিষ্টি খেতে চাইলে ঘুরে আসুন বসুন্ধরার এই দোকানটিতে
সম্প্রতি ফেসবুকে দেখলাম বসুন্ধরার মিষ্টির এক দোকান বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেই দোকানের বিশেষত্ব হলো, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্রেতাদের সামনে সরাসরি মিষ্টি বানিয়ে দেন তাঁরা। ঢাকা শহরের ভূগোল আমার এখনো পুরোপুরি বুঝে ওঠা হয়নি, তাই কাজে এল ফেসবুক আর গুগল ম্যাপ। একবার রাস্তা একটু ভুল করলেও কয়েক মিনিটেই পৌঁছে গেলাম সেই লাইভ মিষ্টির দোকানে।
ছোটখাটো ছিমছাম দোকানটিতে ঢুকতেই নাকে এল গরম মিষ্টির ঘ্রাণ। দোকানের ক্রেতাদের এক বড় অংশের গলায় ঝুলছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড। ক্যাম্পাসের কাছে হওয়াতেই দলবলে খেতে এসেছেন। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাবিন বলেন, ‘চোখের সামনেই পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হতে দেখি বলে এ দোকানের মিষ্টি যেন আরও বেশি সুস্বাদু মনে হয়।’
চুলা থেকে গরম গরম যে মিষ্টি নামানো হবে, সেটি কিনতেও দাঁড়িয়ে ছিলেন কেউ কেউ। যেহেতু লাইভ মিষ্টির দোকান, সেখানকার রসুইঘরে তো একবার ঢুঁ মেরে দেখতেই হয়। দোকানের ভেতরে স্বচ্ছ কাচের ওপারেই রসুইঘর। একজন কারিগর আপন মনে ছানা মথছেন। এরপর সেই মথে রাখা ছানাকে দিলেন ছোট ছোট রসগোল্লার আকার। এরপর রসগোল্লাগুলো ঢেলে দেওয়া হলো ডুবোতেলে। কিছুক্ষণ পর তেল থেকে তুলে দেওয়া হলো চিনির শিরায়।
যদিও মিষ্টির প্রতি আগ্রহ আমার খুব একটা বেশি নেই, তবে গরম গরম রসগোল্লা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে দুটো খেয়ে নিলাম। এমন টাটকা মিষ্টি বোধ হয় শেষবার খেয়েছিলাম বছর তিনেক আগে, দাদুবাড়ির গ্রামের হাটে। মিষ্টি খাওয়া শেষ করতেই দেখি, আমার সামনে বানানো সেই রসগোল্লার অর্ধেকের বেশি ততক্ষণে বিক্রি হয়ে গেছে!
কথা বলে জানলাম, দোকানের স্বত্বাধিকারী দুজন। তাঁদের একজন মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ, গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া হলেও একটা বড় সময় থেকেছেন চট্টগ্রামে। তবে কেন জানি চট্টগ্রামের মিষ্টি তার খেতে ভালো লাগত না। ভালোবাসতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টি। এ জন্য সেই ছোটবেলা থেকেই চট্টগ্রামে মিষ্টির দোকান দেওয়ার কথা ভাবতেন ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ।
২০২০ সালে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তাঁর স্কুল জীবনের বন্ধু ফজলে রাব্বি সিয়ামকে নিয়ে চট্টগ্রামে শুরু করেন মিষ্টির দোকান ক্ষীরওয়ালা প্রিমিয়ামের। মানুষকে টাটকা মিষ্টি খাওয়ানোর চিন্তা থেকেই লাইভ মিষ্টির আইডিয়া এসেছে বলে জানান মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ। এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের মোট চারটি শাখা রয়েছে।
দুই মাস আগে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে যাত্রা শুরু করে ক্ষীরওয়ালা প্রিমিয়াম। এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে দোকানটি। রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে মিষ্টিপ্রেমীরা আসছেন এখনকার গরম মিষ্টি চেখে দেখতে। শহরের আনাচে-কানাচে আজকাল এমন অনেক খাবারের দোকান হয়েছে, যেখানে খাবার তৈরির প্রক্রিয়াটি থাকে সবার সামনে উন্মুক্ত। নানান ভেজাল খাবারের ভিড়ে এসব দোকানের খাবার যেন কিছুটা স্বস্তিই দিচ্ছে ক্রেতাদের। লাইভ বেকারি, লাইভ পিৎজা আরও কত কী! এই তালিকায় যুক্ত হলো লাইভ মিষ্টির দোকান।
কাশ্মীরি গোলাপজামুন, তুর্কিশ লোকুম, রাজমোহন, কমলাভোগ, স্পঞ্জ রসগোল্লা ও রাবড়ি জিলাপি—এই ছয়টি মিষ্টি ক্রেতাদের সামনে ক্ষীরওয়ালা প্রিমিয়ামের লাইভ সেকশনে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া দোকানটিতে সব সময় পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশের মিষ্টান্ন।
ভবিষ্যতে ঢাকায় ক্ষীরওয়ালার আরও কয়েকটি ব্রাঞ্চ দেওয়ার ইচ্ছে আছে বলে জানান মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে ক্ষীরওয়ালা প্রিমিয়াম। তবে সরাসরি মিষ্টি বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় সকাল আটটার পর।