মোমো কি স্বাস্থ্যকর খাবার
রাস্তার ফুড কার্ট হোক কিংবা অভিজাত রেস্তোরাঁ—ধোঁয়া ওঠা এক প্লেট মোমো আর সঙ্গে চাটনি হলে আর কী চাই! ফলে অনেকের কাছেই মোমো ‘কমফোর্ট ফুড’। যেকোনো সময়ে এক প্লেট মোমো মনে এনে দিতে পারে প্রশান্তি। কিন্তু আজকের স্বাস্থ্যসচেতন বিশ্বে পছন্দের বা অপছন্দের সব খাবারকেই ফেলা হয় আতশি কাচের নিচে। আপাতদৃষ্টে যতটা নিরীহ মনে হয়, মুখরোচক মোমো কি ততটাই নিরীহ? নাকি ক্যালরি ও অস্বাস্থ্যকর চর্বিতে ভরা এক ছোট বোমা?
মোমোর উৎপত্তি তিব্বত ও হিমালয়ের আশপাশের অঞ্চলে। ধীরে ধীরে সেই খাবার জনপ্রিয় হতে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ায়। ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ যুক্ত হয়েছে মোমোতে। বাংলাদেশেও আছে বিভিন্ন স্বাদের মোমো। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো স্টিমড, তন্দুরি আর ফ্রায়েড। মোমোর রেসিপি বেশ সাধারণ—সামান্য ময়দা, সবজি, মাংস আর ভাপ। শুনতে বেশ স্বাস্থ্যকর লাগলেও খাবারটা কি স্বাস্থ্যকর?
বানানোর পরিবেশ
মোমোর ধরন আর বানানোর ওপর নির্ভর করে এটি কতটা স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে রাস্তার পাশে ফুডকার্টে বানানো মোমো কতটা স্বাস্থ্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সে তুলনায় ঘরে বানানো মোমো যে বেশি স্বাস্থ্যকর, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। এতে স্বাস্থ্যকর উপাদান থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম।
ফ্রায়েড মোমোয় অস্বাস্থ্যকর তেল
ফ্রায়েড বা তেলে ভাজা মোমোয় অতিরিক্ত তেল ও চর্বি থাকতে পারে। অন্যান্য মোমোর তুলনায় তেলে ভাজা মোমো তাই কিছুটা অস্বাস্থ্যকর।
অস্বাস্থ্যকর চাটনি
মোমোর সঙ্গে দেওয়া চাটনি কী ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি, তা আমরা অনেকেই জানি না। ফলে রাস্তার পাশে ফুড কার্ট থেকে চাটনি নেওয়ার আগে ভাবুন। কারণ, এ ধরনের চাটনিতে অতিরিক্ত লবণ ও অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকতে পারে। এসব ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য হৃদ্রোগের কারণ হতে পারে।
তাই বলে কি মোমো খাবেন না
প্রশ্ন করতে পারেন, তাই বলে প্রিয় খাবারটা খাব না? এর কি কোনো উপকারিতাই নেই? না, আছে। মোমো স্বাদে যেমন দারুণ, উপকারিতাও কম নয়, যদি বানানো হয় নিয়ম মেনে।
স্টিমড মোমো ভালো
তন্দুরি বা ফ্রায়েড মোমোর তুলনায় স্টিমড মোমোকে সাধারণত স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ধরা হয়। কারণ, এতে ক্যালরির পরিমাণ কম। এ ছাড়া ভাপে তৈরি হয় বলে এতে তেল-চর্বিও খুব একটা থাকে না। ভাপে মাংস আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে, একইভাবে সবজিও।
পুষ্টিকর উপাদান
ঘরের তাজা ও পরিষ্কার উপাদান দিয়ে মোমো তৈরি করা হলে আপনি পাবেন প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। কম চর্বিযুক্ত মাংস ও বিভিন্ন ধরনের সবজি ব্যবহার করলে প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইবারের ভালো উৎস হতে পারে মোমো।
পরিমিত পরিমাণে খান
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়, সেটা স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও। পরিমিত পরিমাণে খেলে মোমো একটি সুষম খাদ্যের অংশ হতে পারে। এটিকে নিয়মিত খাবার হিসেবে না খেয়ে মাঝেমধ্যে খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো কমানো সম্ভব।
এক প্লেট ধোঁয়া ওঠা মোমোর ঘ্রাণ একবার যাঁর নাকে ঠেকেছে, তাঁর পক্ষে মোমোর লোভ ছাড়া মুশকিল। কিন্তু স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে চাইলে একটু তো মেনে চলতেই হবে। যে দোকান বা রেস্তোরাঁ থেকে মোমো খাচ্ছেন, তার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
সূত্র: হেলদি লাইফ