ঢাকায় উটের দুধের চা পাবেন কোথায়, দামই–বা কত

পথের ধারে চিনি ছাড়া কনডেন্সড মিল্কের চা-ই পান করি দিন থেকে রাত অবধি। কিন্তু নতুন স্বাদের চা পেলে চেখে দেখার চেষ্টা করি। তাই গত শনিবার রাতে যখন শুনলাম ঢাকায় উটের দুধের চা পাওয়া যাচ্ছে, তখন আর দেরি করিনি। শুধু জেনে নিয়েছিলাম দোকানটা খোলা আছে কি না।

চায়ের রঙে সাদার উপস্থিতি বেশ
ছবি: সংগৃহীত

রাত একটার দিকে পৌঁছে গেলাম গুলশান-২ এলাকার ৫২ নম্বর। কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ ধরে এগোলে গুলশান-২ গোল চত্বরের ঠিক আগে (ল্যাবএইডের উল্টো দিকে) ৫২ নম্বর সড়ক। রাত একটা কিন্তু সেই সড়ক তখনো জমজমাট। ৫২ নম্বর সড়কে ঢুকতেই হাতের বাঁয়ে ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের পাশে নতুন রেস্তোরাঁ ব্যাচেলরস এক্সপ্রেস। চালু হয়েছে গত ৬ ফেব্রুয়ারি। দোতলার কাজ চলছে। এখন নিচতলায় চেয়ার-টেবিলে বসার জায়গা।

ব্যাচেলরস এক্সপ্রেসেই উটের দুধে তৈরি চা পাওয়া যায়। তরুণ দুই বন্ধু মাহবুব হাসান ও আমিনুল ইসলাম ব্যাচেলরস এক্সপ্রেসের উদ্যোক্তা। মাহবুব হাসানের কাছে জানতে চাই, এত থাকতে উটের দুধের চা কেন? মাহবুব বলেন, ‘উটের দুধের নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে। দেশে এই দুধে তৈরি চা পাওয়া যায় না। আরেকটা কারণ হলো এখন কোনো রেস্তোরাঁ চলে ভাইরালের ওপর। ভাবলাম, নতুন আইটেম হিসেবে উটের দুধ দিয়ে চা বানালে মানুষ পছন্দ করতে পারেন। এই চায়ের জন্য আমাদের রেস্তোরাঁয় মানুষ আসবেন, তখন অন্য খাবারগুলোও বিক্রি হবে।’

দেশে উটের দুধ বিরল ও দুর্লভ। ব্যাচেলরস এক্সপ্রেস এই দুধ পায় কোথায়? প্রশ্নের উত্তরে মাহবুব বলেন, ‘দুবাই থেকে প্যাকেট দুধ আনি আমরা।’ সেই প্যাকেট দেখালেন। সংযুক্ত আরব-আমিরাতে তৈরি ক্যামেলিসাস ব্র্যান্ডের ক্যামেল মিল্ক পাউডার। অর্থাৎ উটের দুধের গুঁড়া। মাহবুব জানান, দুবাইয়ের সঙ্গে তাঁদের ব্যবসা আছে। আগের দিন জানালে পরের দিন এই গুঁড়া দুধ হাতে চলে আসে। মোড়কের গায়ে দেখা গেল, প্রতি প্যাকেট উটের গুঁড়া দুধের মেয়াদ এক বছর করে।

রমজান মাসে ভোর ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ব্যাচেলরস এক্সপ্রেস
ছবি: সংগৃহীত

কথা বলতে বলতেই চলে এল উটের দুধের চা। চা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে কাজী অ্যান্ড কাজী টির প্রিমিয়াম চা। চায়ের রঙে সাদার উপস্থিতি বেশ। চুমুক দেওয়ার আগে আগে বড় করে শ্বাস নিলাম। হ্যাঁ, পার্থক্যটা টের পাওয়া যায়। গন্ধটা গাভির দুধের চেয়ে একটু জোরালো। একটা তাজা ভাব রয়েছে। এবার চুমুক দেওয়ার পালা। প্রথম চুমুকেই নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ পেলাম। গাভির দুধের চায়ের চেয়ে কড়া। চা–পাতার স্বাদ ছাপিয়ে উটের দুধের স্বাদ জোরালো। গরম চা ধীরে ধীরে পান করা হলো। স্বীকারও করতে হলো, পুরোই ভিন্নধর্মী স্বাদ আর সুস্বাদু।

আরও পড়ুন
উটের দুধের এক মগ চায়ের দাম ৪০০ টাকা
ছবি: সংগৃহীত

ব্যাচেলরস এক্সপ্রেসে উটের দুধের এক মগ চায়ের দাম ৪০০ টাকা। মাহবুব জানান, উটের গুঁড়া দুধ বেশ উচ্চ মূল্যে আনতে হয় দুবাই থেকে। আরও কয়েক পদের চা রয়েছে ব্যাচেলরস এক্সপ্রেসে। মাসালা চায়ের দাম ২০০ টাকা। অন্যগুলো ৩০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। শুধু চা নয়, ব্যাচেলরস এক্সপ্রেসে ফলের রসও আছে। আর আছে পিৎজা, পাস্তা, মাঞ্চিস, বার্গার ইত্যাদি ফাস্ট ফুড। এমনিতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রমজান মাসে দুপুর ১২টা থেকে রাত পেরিয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ব্যাচেলরস এক্সপ্রেস।

চা–পাতার স্বাদ ছাপিয়ে এখানে উটের দুধের স্বাদই জোরালো
ছবি: লেখক

গাভির তরল দুধে বানানো চায়ের মতো উটের তরল দুধের চা কি পাওয়া সম্ভব? মাহবুব হাসান বলেন, ‘সেই চেষ্টা করছি। ঢাকায় যে উটের একটা খামার আছে, সেখানে খোঁজ নিয়েছি। এখন একটা উট দুধ দিচ্ছে, তাই আমাদের চাহিদামতো দুধ পাওয়া যাবে না। কিছুদিন পর আরও দুটি উট শাবক প্রসব করবে, তখন হয়তো সরাসরি উটের তরল দুধ সংগ্রহ করতে পারব। ইচ্ছে আছে সেই দুধের চা পরিবেশন করার।’

সে না হয় হবে, আপাতত উটের গুঁড়া দুধের চা-ই পান করা যাক।