ফার্মগেটের যেখানে মিলবে ফল ও বাদামের শরবত থেকে ঠান্ডা কফি

ফার্মগেটের বিজ্ঞান কলেজে সামনের রাস্তায় জুস বিক্রি করছেন আলি আহসান
ছবি : সুমন ইউসুফ

লেবুর রসের সঙ্গে বরফকুচি, পুদিনাপাতা, চিনি ব্লেন্ড করে তাতে একটুখানি সোডা, ব্যস! হয়ে গেল ঝাঁজালো ঠান্ডা মিন্ট লেমোনেড। প্রচণ্ড গরমে আজকাল অনেক জায়গায়ই বিক্রি হচ্ছে এ ধরনের বিভিন্ন স্বাদের পানীয়। রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা ফার্মগেটের বিজ্ঞান কলেজের রাস্তায় এমন পানীয়ই বিক্রি করেন আলি আহসান। বৃত্তাকার একটি কার্ট আছে তাঁর, নাম ‘ফুড অ্যান্ড ড্রিংকস ল্যাব’। নানা রকম ফল ও বাদামের শরবতের পাশাপাশি সেখানে পাবেন ঠান্ডা কফি। দাম শুরু মাত্র ৩০ টাকা থেকে।

ঠান্ডা জুস থেকে কফি সবই মিলবে এখানে
ছবি : সুমন ইউসুফ

৬ জুন, বেলা দেড়টা। আশপাশের স্কুলগুলোয় ছুটি হয়েছে। রোদের তীব্রতাও যেন সহনীয়তার সীমা অতিক্রম করেছে। গরমে দরদর করে ঘামছে শিক্ষার্থীরা। একটু আরামের খোঁজে তাদের অনেকেই ঠান্ডা জুস অথবা কফি খেতে কার্টটির সামনে ভিড় করছে। ভিড় সামাল দিতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন দোকানটির উদ্যোক্তা ২১ বছর বয়সী আলি আহসান। কার্টের পেছনে পাতা বেঞ্চে বসতে বললেন। সেখানে বেশ কয়েকজন স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ে বসে মিন্ট লেমোনেড খাচ্ছে। কাজ খানিকটা শেষ করে আহসান এসে বসলে তার কাছে ব্যবসার শুরুর গল্পটা জানতে চাইলাম। বললেন, ‘ব্যবসা করার ইচ্ছা নিয়ে প্রথম যেদিন ঢাকায় আসি, এই ফার্মগেট এলাকাটাকেই বেশ ভালো মনে হয়েছিল। আশপাশে অনেকগুলো স্কুল আছে, অফিস আছে। অনেক মানুষের যাতায়াত। চিন্তা করে বুঝলাম এই গরমে ঠান্ডা জিনিসের বিক্রি ভালো হবে। এভাবেই শুরু।’

আরও পড়ুন
আহসান নিজেই এই কার্টটির ডিজাইন করেছে
ছবি : সুমন ইউসুফ

আহসানের কার্ট গাড়িটি দেখতে বেশ স্মার্ট। নিজেই সে এটির ডিজাইন করেছে জানিয়ে বলল, ‘রাস্তায় ব্যবসা করলে সুন্দরভাবে করা যাবে না, এটা মানতে পারি না। ইন্টারনেটে বিদেশের কার্ট গাড়িগুলো দেখে নিজেই বানিয়ে নিয়েছি।’

এরই মধ্যে আবারও আহসানের ডাক পড়ল। দুজন দুটি ঠান্ডা কফি দিতে বলল। তারা দুই বন্ধু সরকারি বিজ্ঞান কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র। জানাল, ক্লাস শেষে প্রায়ই এখানে এসে ঠান্ডা কিছু খায় তারা। ঠান্ডা কফিই তাদের বেশি পছন্দ। বুঝলাম এখানে আসলে দুটো দল। এক দল লেমোনেডের ভক্ত, আরেক দলের পছন্দ ঠান্ডা কফি। ‘এই গরমে কফির চেয়ে লেমোনেড বেশি সতেজকারী, তবে কফিটাও খারাপ নয়,’ বলছিল হলিক্রস কলেজের শিক্ষার্থী মুমতাহিনা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার দুই বান্ধবী মীম ও জাহিনেরও পছন্দ লেমোনেড।

বিজ্ঞান কলেজে পড়ুয়া ছেলে প্রিওম ঘোষ ও তার মা সুনন্দা বসাক মেনু থেকে বেছে দুটো ব্লু-লেগুন দিতে বলল। এটিও লেবুর পানীয়; তবে মিন্ট লেমোনেডের সঙ্গে পার্থক্য হচ্ছে, এতে মিন্ট অর্থাৎ পুদিনাপাতা থাকে না। এই পানীয়টি দেখতে বেশ সুন্দর, রং নীল। ‘এই গরমে ঠান্ডা লেবুর শরবতের চেয়ে উপকারী আর কী হতে পারে’ বলছিলেন সুনন্দা বসাক।

ব্যবসাটার বয়স মোটে দুই মাস হলে কী হবে, ভালোই সাড়া পাচ্ছেন আহসান। সবকিছুর দাম ৯০ টাকার মধ্যে হওয়ায় স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্য পেশার মানুষেরাও সহজে কিনে খেতে পারছেন জানিয়ে বলেন, ‘সবাই আমাকে বলে দাম যেন সব সময় এমনই কম রাখি। আমিও চেষ্টা করি সব সময় কম রাখতে। ভবিষ্যতেও চেষ্টা করব।’