ফ্লাডলাইটিংয়ের প্রভাবে প্রেমে পড়ছেন না তো
সময়ের সঙ্গে ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়ছে আধুনিক রোমান্টিক সম্পর্ক। কিছুদিন পরপরই জেন-জিদের ডেটিং ডিকশনারিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন টার্ম। তারই ধারাবাহিকতায় এখন ট্রেন্ডে আছে ফ্লাডলাইটিং।
ফ্লাডলাইটিং কী
ফ্লাডলাইটিং হলো সম্পর্কের একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় নিজের অনেক ব্যক্তিগত, সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে অপর পক্ষকে দ্রুত গভীর সম্পর্কে জড়াতে প্রভাবিত করার প্রবণতা। ধরুন, প্রথম ডেটেই একজন তার অতীতের সম্পর্কে সে কতটা অবহেলিত, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেই গল্প করল। আর আপনি সেসব শুনে তার প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল হয়ে উঠলেন। তাকে আবেগপ্রবণভাবে সমর্থন জোগানোর জন্য, সেরে ওঠার জন্য, সর্বোচ্চ ভালো বোধ করানোর জন্য মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে উঠলেন। সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ডও করতে শুরু করলেন। এভাবে সে সম্পর্কে খুব অল্প সময়ে প্রভাবশালী ও সুফলভোগী হয়ে উঠল। আর নিজের আবেগময় সমর্থনের জন্য আপনাকে ব্যবহার করতে শুরু করল। অথচ সে আপনাকে একই ধরনের আবেগময় সমর্থন দিতে রাজি নয়। অর্থাৎ সে নিজের কথা বলতে যতটা আগ্রহী, আপনার কথা শুনতে ততটা নয়। আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব না নিয়েই সে নিজে ভালো থাকার জন্য আপনাকে ব্যবহার করতে চাইছে।
কেন ফ্লাডলাইটিং করে
ব্রিটিশ লেখক ও ডেটিং বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ হাসির মতে, মানুষ সম্পর্কে মূলত ৩টি কারণে ফ্লাডলাইটিং করে।
১. সে সম্পর্কে সময় না দিয়ে দ্রুত অপর পক্ষকে তার পক্ষে আনতে চায় এবং সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। অপর পক্ষকে তার প্রতি আবেগপ্রবণ হতে প্রভাবিত করে। এক কথায় অপর পক্ষকে সম্পর্কে জড়াতে বা প্রেমে পড়তে একরকম বাধ্য করে।
২. সে যে অভিজ্ঞতা বা অনুভূতির ভেতর দিয়ে গেছে, তার আবেগময় ভার সে একা বইতে পারে না। এ জন্য সে দ্রুত অন্যের ঘাড়ে কিছুটা চাপিয়ে দিয়ে নিজে হালকা হতে চায়। অন্যের সহানুভূতির মাধ্যমে সেরে উঠতে চায়। সে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকেও একই ধরনের সহানুভূতি বা আবেগময় সমর্থন নিতে পারে।
৩. নিজে জেনেবুঝে সম্পর্কের প্রাথমিক অবস্থায়ই ‘আবেগে ভেসে গিয়ে’ অপর পক্ষ তার বিষয়গুলো কতটা ‘নিতে পারে’ বা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটিও চট করে যাচাই করে নেয়। যদি সে ‘যথেষ্ট সহানুভূতি’ না পায় বা অপর পক্ষকে তার সম্পর্কে পর্যাপ্ত আগ্রহী হতে না দেখে, তাহলে সে দ্রুত নতুন কাউকে খুঁজতে শুরু করে।
ফ্লাডলাইটিংয়ে সমস্যা কোথায়
সম্পর্কে এমন সব মুহূর্ত আসে, যখন একজন অথবা উভয়েই মন খুলে নিজের অনেক গোপন কথা, দুর্বলতা, সূক্ষ্ম অনুভব বা অজানা অতীত প্রকাশ করে ফেলে। সেটা খুবই স্বতঃস্ফূর্ত একটা প্রক্রিয়া। আর এর মাধ্যমে দুজনের আবেগময় নির্ভরশীলতা, ভরসার সম্পর্ক পাকাপোক্ত হয়। কিন্তু ফ্লাডলাইটিং হচ্ছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে উদ্দেশ্যমূলক প্রভাবিত করার প্রক্রিয়া।
ফ্লাডলাইটিং একপক্ষীয় একটি বিষয়। সে আবেগময় সমর্থনের জন্য আপনাকে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু একই ধরনের আবেগময় সমর্থন জানাতে সে মোটেই উৎসাহী নয়। এটা টক্সিক নার্সিসিজমেরই বহিঃপ্রকাশ।
ফ্লাডলাইটিংয়ে প্রাথমিকভাবে আপনার মনে হতে পারে, আপনাকে অপর পক্ষ এতটা বিশ্বাস আর ভরসা করছে, এটা আপনার প্রতি তার আবেগময় দুর্বলতা আর ভালোবাসারই লক্ষণ। আপনি নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে এর প্রতিদান দেবেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার মনে হবে, সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কেবল ব্যবহৃত হয়েছে, মূল্যায়িত হয়নি। আপনি একসময় মানসিকভাবে সমর্থন করতে করতে এবং সমর্থন না পেতে পেতে নিঃশেষিত অনুভব করবেন। কেবল তখনই আপনি বুঝতে পারবেন, সম্পর্কে ফ্লাডলাইটিং কতটা টক্সিক!
সূত্র: টুডে