তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী নিয়ে কিছু দিন ধরেই পরিকল্পনা করছিলাম। বিশেষ দিনটি একটু অন্য রকমভাবে উদ্যাপন করতে চেয়েছিলাম আমি আর আমার স্ত্রী পারমিতা তানজির, আমরা অবশ্য তাকে এ্যানি নামেই ডাকি। অন্য রকম মানে এমন কিছু করব, যেন মানুষের উপকার হয়। সেখান থেকেই এ্যানির মাথায় আসে মরণোত্তর চক্ষুদানের কথা। অবশ্য এ্যানির মাথায় চিন্তাটা একেবারে হুট করেও আসেনি। ছোটবেলা থেকেই ওর চক্ষুদানের ইচ্ছে। তার ছোটখাটো এমন অনেক উৎসাহের মূলে তার চিকিৎসক বড় মামা। তবে নানা ব্যস্ততায় এত দিন সেটাকে কাগজে–কলমে সিদ্ধ করা হয়ে ওঠেনি। আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে সেই সুযোগটাই হলো। আমিও তার ভাবনা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যাই।
আমাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল ২৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান কর্মসূচিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে আমরা দুজন মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করি। অনলাইনে মরণোত্তর চক্ষুদানের কাজটা খুব সহজ। প্রথমে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির ওয়েবসাইটে গিয়ে অঙ্গীকারপত্র পূরণ করি। পরের দিনই আমাদের দুটি দাতা কার্ড সরবরাহ করে চক্ষু ব্যাংক। সাধারণত মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ সন্ধানী ইউনিট অথবা সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিতে খবর পাঠাতে হয়। এ জন্য অঙ্গীকারপত্রে দুজন অভিভাবক মনোনীত করতে হয়। যেন মৃত্যুর পর তাঁরা সন্ধানীতে খবর দিতে পারেন। অভিভাবকদের রাজি করাতেও আমাদের বেগ পেতে হয়নি। এ কাজের জন্য ছোট ভাই-বোনদের বেছে নিয়েছিলাম।
মৃত্যুর পরও অন্যের মাঝে বেঁচে থাকার আনন্দটুকু আমরা নিতে চেয়েছিলাম। আর সে জন্যই মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার। দৃষ্টিহীন মানুষের কাছে এই পৃথিবী অন্ধকার। পৃথিবীর রং-রূপ তার কাছে অর্থহীন। অথচ কর্নিয়া দানের মাধ্যমে কেউ চাইলেই অন্ধজনের ভুবনটা ভরে দিতে পারেন আলোয় আলোয়। সন্ধানীর এক প্রতিবেদনে দেখেছি, প্রতিবছর সারা দেশে ১৪ লাখ মানুষের কর্নিয়ার প্রয়োজন হয়। অথচ বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কর্নিয়াপ্রাপ্তির সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি খুবই জরুরি। প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় ভুল ধারণা ভাঙতে পারলে অন্ধজন ফিরে পাবে আলো। দেখতে পাবে ভোরের অবাক সূর্যোদয় কিংবা আকাশের অসীম নীল।
অন্যদের মরণোত্তর চক্ষুদানে উৎসাহিত করতে চাই আমরা। নিজেদের অবস্থান থেকে দুজন মিলেই মানুষকে আরও বেশি সচেতন করতে চাই—আমাদের দেখে আরও অনেকে সাহস পাক, উৎসাহিত হোক।