বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা কী তবে সন্তান পালনের নিয়ম জানেন না

সন্তান পালনে বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে মতের অমিল হতেই পারে, তবে তাঁরা কষ্ট পান, এমন মন্তব্য করা ঠিক নয়।
ছবি : প্রথম আলো

‘মায়ের কাছে বাচ্চাদের রাখতে দিলেই বিপদ! আমার মা আসলে বাচ্চাকাচ্চা পালতেই জানেন না।’

অদ্ভুত শোনালেও এমনটাই বলছিলেন দেশের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত একজন। সংগত কারণেই পরিচয়টা ঊহ্য রাখা হলো। সন্তান পালনের বিষয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে মতের অমিল হতেই পারে। তাই বলে এমন মন্তব্য করা ঠিক নয়। যে মা-বাবা আপনাকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে আসতে নিজেদের সাধ্যমতো সবটা উজাড় করে দিয়েছেন, আপনার এমন একটি মন্তব্য তাঁদের অন্তরটা চুরমার করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

সন্তান পালনে বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামত বিজ্ঞানসম্মত না হলে কোমল স্বরে বুঝিয়ে বলুন
ছবি : প্রথম আলো

বিশ্বায়নের যুগে বদলে গেছে সন্তান পালনের ধরন। তবে বয়োজ্যেষ্ঠদের কোনো উপদেশই কিন্তু একেবারে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া উচিত নয়। তাঁদের মনে আঘাত দেওয়া যাবে না। বাস্তবতার দাবিটাকে ব্যাখ্যা করতে হবে, সহজভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। তা ছাড়া তাঁদের যুক্তিযুক্ত উপদেশগুলো গ্রহণ করে নিজেদের প্যারেন্টিংয়ের ধরনে খানিকটা বদল আনলেও আসলে খুব একটা ক্ষতি হয় না। আপনার আচরণেই বুঝিয়ে দিন, নিজের সন্তান পালনে আপনি তাঁদের দেখানো পথকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন, তবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। কীভাবে সবটা সামলে নিয়ে পথ চলবেন আজকের মা-বাবা? জানালেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রশিদুল হক।

শুরু থেকেই সচেতনতা

শিশুর খাবার অভ্যাস থেকেই হতে পারে মতবিরোধের সূচনা। শালদুধ খাওয়ানো হবে কি না, মায়ের দুধ সন্তানের জন্য যথেষ্ট হচ্ছে কি না, দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুকে কীভাবে কোলে নেওয়া হবে, প্রথম গোসল কখন করানো হবে, চুল কখন ফেলা হবে, গোসলের আগে তেল মালিশ করা হবে কি না বা রোদে রাখা হবে কি না—নানা বিষয়েই মতের ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। এসব বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলে, জানুন। বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামত বিজ্ঞানসম্মত না হলে কোমল স্বরে বুঝিয়ে বলুন আধুনিক বিজ্ঞানের যুক্তি। বুঝিয়ে বলুন, বিজ্ঞান মেনে চললে সবার আদরের এই শিশুটির মঙ্গল হবে।

বয়োজ্যেষ্ঠদের কোনো কথায় শিশু আঘাত পেলে তাকেও ইতিবাচকভাবে বোঝান
ছবি : প্রথম আলো

নিজস্বতায় অনন্য

  • যুগের হাওয়ায় বহু কিছু বদলে গেলেও পারিবারিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে আপস করার সুযোগ নেই। সন্তানের চরিত্র ও জীবন গঠনে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আচরণের শিক্ষাও হয় পরিবারেই। আপনি যতটা আধুনিকই হন, এই বিষয়গুলোকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। পারিবারিক রীতিতেই একটি পরিবারের সদস্যরা অন্যদের চাইতে আলাদা, একটু বড় হলে বিষয়টি বুঝিয়ে দিন শিশুকে।

  • সন্তানের নিজের ভাষার ভিতটাকে মজবুত করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। অনেক সময় নাতি-নাতনির মুখে বিজাতীয় ভাষা শুনে আহত হন দাদা-দাদি, নানা-নানি। অনেক কথা তাঁরা বুঝতেও পারেন না। খেয়াল রাখুন, আপনার সন্তান যেন তাঁদের সঙ্গে তাঁদের বোধগম্য ভাষায় কথা বলতে শেখে আর তা নিয়ে বিরক্তও না হয়।

পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়ে শিশুদের নেতিবাচক কিছু বলবেন না
ছবি : প্রথম আলো

ডিজিটাল মাধ্যম

ডিজিটাল মাধ্যম এ যুগের এক বড় সত্য। চাইলেও সন্তানকে প্রযুক্তির এই বিশাল জগৎ থেকে দূরে রাখা সম্ভব নয়। তবে এই জগতের অন্ধকার দিকটাকে এড়িয়ে সে নিরাপদে এর ভালোটা গ্রহণ করছে কি না, তা দেখভালের দায়িত্ব মা-বাবার। এদিকে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি হয়তো ডিজিটাল মাধ্যমের খারাপ প্রভাবের আশঙ্কায় এগুলোকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়ার পক্ষে। তাঁদের বুঝিয়ে বলুন, জ্ঞানের কত দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে আজকের পৃথিবীতে। তাঁদের আশঙ্কা যে যুক্তিসংগত, সেটিও স্বীকার করুন। তবে আশ্বস্ত করুন যে আপনার সন্তান এ পথে নিরাপদ থাকার শিক্ষাও পেয়েছে।

আরও পড়ুন