দুজনের যখন ঝগড়া হয়...

প্রত্যেক যুগলের মধ্যেই কমবেশি মনোমালিন্য, ঝগড়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

আমরা যতই অপছন্দ করি, ভালোবাসা, প্রেম আর সম্পর্কের হাত ধরে ঝগড়াটাও আমাদের জীবনে ঢুকে পড়ে। তবে স্বস্তির ব্যাপার হলো, শুধু আপনি নন, বরং প্রত্যেক যুগলের মধ্যেই কমবেশি মনোমালিন্য, ঝগড়া হয়। দূর থেকে বা ছবি দেখে যাঁদের আমরা খুব ‘পারফেক্ট’জুটি বলে মনে মনে হিংসা করি; সত্যি বলতে কি, ঝগড়া তাদের ভেতরেও হয়। আর এটাই স্বাভাবিক। দুজন মানুষের মতের অমিল হবে, তর্ক হবে, মনোমালিন্য হবে, আবার সব ঠিক হবে, বোঝাপড়া আগের চেয়ে শক্তপোক্ত হবে—এটা সম্পর্কের লেখচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গবেষণা বলছে, স্বাস্থ্যকর ঝগড়া আপনার সম্পর্কের জন্য ভালো। নিয়মিত ছোটখাটো ঝগড়া সঙ্গীর সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ক্ষতি করে না, বরং বন্ধন আরও শক্ত করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সুখী হতে হলে আপনাকে মাসে বা সপ্তাহে কতবার ঝগড়া করতে হবে? উত্তর হলো, এটা ব্যক্তিভেদে আলাদা হবে। কিছু কিছু যুগল মাসে এক বা দুবার ঝগড়া করেন। অনেকেই আবার এই ঝগড়া করেন সপ্তাহে এক দিন। তবে সেটা যেন কখনোই মাত্রাছাড়া না হয়, নিজেদের নিয়ন্ত্রণের ভেতরে থাকে! ‘ভালো ঝগড়া’ করবেন কীভাবে? ঠিকভাবে ঝগড়ারও কিছু নিয়মকানুন আছে। জেনে নেওয়া যাক সেগুলো।

সন্তানকে দাম্পত্য কোলাহল থেকে দূরে রাখুন
ছবি: প্রথম আলো

১. সঙ্গীকে কথা বলার সুযোগ দিন। ঝগড়া মানে শুধু নিজের কথা বলা নয়, অন্যের কথা শোনাও। কথা শোনার অভ্যাস করুন। কথার মাঝখানে কথা বলবেন না। অপর পক্ষ আগে বলা শেষ করুক। তারপর না হয় আপনি শুরু করুন।

২. ‘তুমি’ ব্যবহার না করে ‘আমি’ ব্যবহার করুন। তোমার অমুক কাজ করা উচিত হয়নি না বলে, বলুন, আমি এ রকম কাজ আশা করিনি। ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কোনো অবস্থাতেই পরিবার, মা–বাবা তুলে আনবেন না!

৩. ঝগড়া লাগলেই টাইম মেশিনে চড়ে অতীতে চলে যাবেন না। শুধু আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে অতীত টেনে আনবেন না। অতীত টানার অভ্যাস মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। এটা খুবই অন্যায় চর্চা। বর্তমানে থাকুন। ঝগড়ার উদ্দেশ্যে সমস্যার সমাধান করা, অতীতে কে কত ভুল করেছে, সেসবের অঙ্ক কষতে থাকলে কোনো দিন সমাধানে পৌঁছাতে পারবেন না।

৪. বিরতি নিন। যখনই মনে হবে আপনি আপনার কথা, কণ্ঠ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, থেমে যান। প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে যান। নিয়ন্ত্রণের বাইরে বা রাগের মাথায় কিছু করবেন না। ঝগড়া সব সময়ই টি-টোয়েন্টির মতো নয়, কখনো কখনো টেস্ট ম্যাচের মতোও খেলতে হয়!

৫. শব্দ চয়নে যত্নবান হোন। একটা ভালো শব্দ যেমন একটা যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারে, তেমনি একটি খারাপ শব্দ সৃষ্টি করতে পারে বড় ভুল–বোঝাবুঝির।

আরও পড়ুন
শব্দ চয়নে যত্নবান হোন। একটা ভালো শব্দ যেমন একটা যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারে, তেমনি একটি খারাপ শব্দ সৃষ্টি করতে পারে বড় ভুল–বোঝাবুঝির
ছবি: প্রথম আলো

ঝগড়ার সময় কী কী করবেন না? জেনে নিন আরও একবার...


১. হুমকি দেবেন না।
২. অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না। অতীত তুলে আনবেন না।
৩. একে অন্যের পরিবার বা নিজের সন্তানদের কখনোই ঝগড়ার মধ্যে নিয়ে আসবেন না।
৪. চুপ থাকা, কথাবার্তা বন্ধ রাখা একটা সময়ের জন্য ভালো। তবে এটাকে অনেক দীর্ঘতর হতে দেবেন না।
৫. গালাগালি, ভাঙচুর, না খেয়ে থাকা, নিজের ক্ষতি করা বা অন্যকে শারীরিকভাবে আঘাত করার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। এগুলো রীতিমতো অপরাধ!

সব মিলিয়ে ঝগড়া এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সংসারে ঝগড়া হতেই পারে। নিয়মিত বিরতিতেই আসতে পারে। ঝগড়াকে নেতিবাচকভাবে না দেখে বরং একে অন্যকে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ হিসেবে দেখুন। সম্পর্ক ‘পারফেক্ট’ করতে চেয়ে লাভ নেই, বরং ঝগড়াকে ‘পারফেক্ট’ করে তুলুন। দেখবেন হাজারটা অমিল আর অমত নিয়েও দিন শেষে ভালো থাকতে পারবেন।


সূত্র: ভেরিওয়েল মাইন্ড, বিজনেস ইনসাইডার

আরও পড়ুন