একমাত্র সন্তান বউ নিয়ে দেশের বাইরে থাকে, একা আমি কী করব
পাঠকের কাছ থেকে মনোজগৎ, ব্যক্তিজীবন ও সন্তান পালনের মতো সমস্যা নিয়ে ‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে নানা রকমের প্রশ্ন এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাউফুন নাহার নির্বাচিত একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন
আমি ৫৬ বছর বয়সী নারী। ছোটবেলায় আমার বিয়ে হয়, স্বামী সরকারি চাকরি করতেন। বিয়ের দুই বছর পর আমার ছেলে জন্ম নেয় । তার পরের বছরেই স্বামী মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়। আমার বাকি দুই ভাই–বোন দেশের বাইরে থাকে।
স্বামীর মৃত্যুর পর মায়ের বাসায় উঠে সন্তানকে বড় করতে থাকি। একসময় বিয়ের অনেক প্রস্তাব এলেও সন্তানের কথা ভেবে বিয়ে করিনি। ছেলে যখন স্কুলে পড়ে, তখন আমার মা মারা যান। আমি পুরোপুরি একা হয়ে পড়ি।
অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। ছেলে চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করে ২০১৮ সালে। ২০২১ সাল থেকে ছেলে বউ নিয়ে দেশের বাইরে থাকে। আমাকে নিয়ে যেতে চায়, তবে আমি যেতে চাইছি না।
মনে হচ্ছে, ওদের আলাদা থাকতে দেওয়া দরকার। কারণ, ছেলের বউয়ের সঙ্গে যদি ঝগড়া হয়, অশান্তি বাড়বে। আবার একা একা থাকতেও এখন বেশ কষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন নানা রকম ভাবনা–চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এখন শুধু মনে হয়, মারা গেলে কেউ জানতে পারবে তো!
নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি। তার পরও দিনশেষে নানা দুশ্চিন্তায় মাথা ভারী হয়ে যায়। আমার এ অবস্থায় কী করার আছে? ছেলের কাছে চলে যাওয়া কি ভালো হবে? দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা
উত্তর
ধন্যবাদ আপনাকে সংবেদনশীল এ সময়ের কথা আমাদের কাছে গুছিয়ে লেখার জন্য। জীবনের শুরু থেকে অনেক কষ্ট, ত্যাগ ও সাহসের মধ্য দিয়ে আপনি সন্তানকে বড় করেছেন।
সবচেয়ে বড় কথা, এসবের বিনিময়ে আপনি সন্তানকে সারা জীবনের জন্য মায়ের আঁচলে বাঁধার চেষ্টা করেননি; বরং তাঁকে আলাদা একজন ব্যক্তি হিসেবে পূর্ণ বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন।
আপনি ছেলে ও ছেলের বউয়ের সঙ্গে সম্পর্কের সুস্থ সীমারেখা নিয়ে সচেতন, যা আমাদের সমাজে বিরল। আপনার এই দূরদৃষ্টি ও আত্মসংযমের জন্য আপনাকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।
আপনার একাকিত্বের বেদনা অনুভব করতে পারছি। যেকোনো জীবনযাপনে সুবিধা–অসুবিধা দুটি দিকই আছে। তেমনি একাকী জীবনযাপনেও কিছু সুবিধা–অসুবিধা আছে। অসুবিধাগুলো নিয়ে নানা ধরনের দুশ্চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক। ছেলেকে একসময় বিদেশে পাঠিয়েছেন সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।
এখন আপনার নিজের ভালো থাকাটাও সমান জরুরি। আমার মনে হয়, ছেলের কাছে গিয়ে স্থায়ীভাবে থাকবেন কি না, সে ব্যাপারে হঠাৎ সিদ্ধান্ত না নিয়ে আগে কিছুদিনের জন্য সেখানে গিয়ে থাকতে পারেন।
তাতে করে সত্যিই সেখানে মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, তা বোঝা সহজ হবে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে ছেলের সঙ্গে খোলামেলাভাবে আলোচনা করতে পারেন।
নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ ও সুখী রাখতে নিজের যত্ন ও অন্যদের সঙ্গে যুক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি পেশাগতভাবে কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন কি না, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি। কাজ আমাদের সুন্দর সময় উপহার দেয়।
সুষম খাবার, প্রতিদিন হাঁটা, প্রার্থনা বা মেডিটেশন, পছন্দের কাজে যুক্ত থাকতে পারেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আপনাকে সুস্থ ও সুন্দর সময় কাটাতে সহযোগিতা করবে। জীবনের ছোট– বড় অর্জনকে উদ্যাপন করাও গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার জীবনের প্রতিটি ধাপে আপনি যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটি খুব গর্বের। নিজেকে ধন্যবাদ দিন সে জন্য।
প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: [email protected]
(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা
প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন
২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA