কিস ক্যাম বিতর্কের জেরে বিচ্ছেদ হলেও জরিমানা গুনতে হবে না বাইরনকে, কেন জানেন?
সম্প্রতি কোল্ডপ্লের কনসার্টে ‘কিস ক্যাম’ দৃশ্যের জেরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মার্কিন ডেটা অর্কেস্ট্রেশন কোম্পানি ‘অ্যাস্ট্রোনমার’–এর সাবেক সিইও অ্যান্ডি বাইরন। কনসার্টের সেই ভিডিওতে তাঁকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায় সহকর্মী ও কোম্পানির চিফ পিপল অফিসার (সিপিও) ক্রিস্টিন ক্যাবটের সঙ্গে। ভিডিওটি ভাইরাল হলে কর্মস্থল থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন দুজনই।
কী ঘটেছিল কনসার্টে
ঘটনাটি ১৬ জুলাইয়ের, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের জিলেট স্টেডিয়ামে বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ ব্যান্ড কোল্ডপ্লের একটি লাইভ কনসার্টে। সেখানে স্টেডিয়ামের জাম্বোট্রনে (স্টেডিয়াম, কনসার্ট ভেন্যু বা বড় বড় জনসমাগমে ব্যবহৃত বিশাল পর্দা) দেখানো হয় অ্যান্ডি বাইরন ও ক্রিস্টিন ক্যাবটকে। দর্শকের মতে, তাঁদের আচরণ ছিল ‘অন্তরঙ্গ’। বিষয়টি ঘিরে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা, ট্রল ও মিম।
শো চলাকালে কোল্ডপ্লের গায়ক ক্রিস মার্টিন মজা করে মন্তব্য করেন, ‘ওরা হয়তো পরকীয়ায় জড়িয়েছে, নয়তো খুব লাজুক।’
এই মন্তব্য ও ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয় টিকটক, রেডিটসহ নানা মাধ্যমে। অনেকে ক্যাবটের মুখভঙ্গি ও অস্বস্তি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর চাপের মুখে দুজনকেই সাময়িক ছুটিতে পাঠায় অ্যাস্ট্রোনমার এবং কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা পদত্যাগ করেন।
অ্যাস্ট্রোনমার এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও একটি অভ্যন্তরীণ নোটিশে নেতৃত্বে পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
বাইরনের আর্থিক জরিমানা হবে না কেন
ঘটনার পর পারিবারিকভাবেও যে ভীষণ চাপে তাঁরা পড়েছেন, তা বলা বাহুল্য। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, বাইরনের স্ত্রী মেগান কারিগ্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোয় ‘স্পাউস’ হিসেবে বাইরনের নাম বাদ দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রোফাইলে বেশ কিছু পরিবর্তনও এনেছেন মেগান। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মেগান বিচ্ছেদের কথা ভাবছেন। তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স ফাইল করার কোনো তথ্য নেই।
তবে যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে মেগান কি আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন? আইনজীবীদের মতে, এ ঘটনার সামাজিক অভিঘাত যত বড়ই হোক, ক্যালিফোর্নিয়ার বিবাহবিচ্ছেদ আইনে এটি আর্থিকভাবে প্রভাব ফেলবে না।
ক্যালিফোর্নিয়ার পারিবারিক আইনবিশেষজ্ঞ রিচার্ড সুলিভান বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, পরকীয়া হলে বিচ্ছেদে বাড়তি জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় বিচ্ছেদ হয় ‘নো-ফল্ট’ ভিত্তিতে। কে দোষী, কে কার সঙ্গে সম্পর্ক করল—এসব আদালতের বিবেচনায় পড়ে না।’
এই আইনে বিবাহবিচ্ছেদের সময় যা বিবেচনায় নেওয়া হয়, তা হলো—
বিবাহের স্থায়িত্ব
স্বামী-স্ত্রীর আয়ের সামর্থ্য
দাম্পত্য জীবনের জীবনমান
সন্তান পালনের দায়িত্ব
যৌথ সম্পত্তির ন্যায়সংগত বিভাজন
তবে একটি ব্যতিক্রম আছে। যদি প্রমাণ মেলে যিনি পরকীয়ায় জড়িয়েছেন, তিনি যৌথ সম্পদ থেকে পরকীয়ার সময় খরচ করেছেন (যেমন: ভ্রমণ, হোটেলভাড়া, উপহার ইত্যাদি), তাহলে আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। কিন্তু বাইরনের ক্ষেত্রে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আইনের চোখে সামাজিক কেলেঙ্কারি
বাইরনের পেশাগত মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাঁর স্ত্রী শুধু ভাইরাল ভিডিওর ভিত্তিতে আদালত থেকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন না।
আইনজীবী সুলিভান বলেন, ‘আদালত আবেগ দিয়ে নয়, আইন দিয়ে চলে। গণরোষ বা ভাইরাল বিতর্ক আর্থিক রায়কে প্রভাবিত করে না।’
ফলে সম্পদ বিভাজন ও খোরপোশ নির্ধারণ হবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুযায়ী। এই স্ক্যান্ডাল সে প্রক্রিয়াকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করবে না।
সূত্র: ইয়াহু