সবচেয়ে কঠিন ছিল মাকে একা রেখে শহরে থাকা

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন যেকোনো শিক্ষার্থীর কাছেই খুব বিশেষ একটা দিন। গাউন পরব, বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলব, আকাশে উড়িয়ে দেব সমাবর্তনের হ্যাট—এমন একটা ছবি মনে মনে কল্পনা করেন অনেকেই। দিনটা আরও বিশেষ হয়ে ওঠে, যদি সঙ্গে থাকেন মা-বাবা। মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুলতে গিয়ে হয়তো সিনেমার মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলো। আজ মা দিবসে সেসব দিনের স্মৃতিচারণা নিয়ে সন্তানদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে স্বপ্ন নিয়ে পাতায়। এখানে পড়ুন প্রকৌশলী মিসবাহুর রশিদ—এর লেখা।

মায়ের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এখানে
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সমাবর্তনের দিনে নিজের গাউন আর হ্যাটটা যখন মাকে পরিয়ে দিলাম, তখন কাঁদিনি। কিন্তু ভেতরটা কাঁপছিল ঠিকই। ভাবছিলাম, এই মানুষটার জন্যই তো আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়ে। ছোটবেলা থেকেই বাবা দেশের বাইরে, মা একা আমাদের দুই ভাই–বোনকে মানুষ করেছেন। বাড়ির বড় বউ হওয়ায় মায়ের ওপর ছিল অনেক দায়িত্ব। সকালে ঘুম থেকে উঠে কখনো মাকে কাছে পাইনি। সারা দিন কাজ করতেন। কিন্তু এর মধ্যেও কীভাবে যেন আমাদের খেয়াল রাখতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম ঢাকায়। মা তখন বলেছিলেন, তুই যা চাইবি, আমি তাতেই পাশে থাকব। শুধু একটা কথা, হাল ছাড়িস না। তাঁর সেই কথা আমার জীবনের মূলমন্ত্র হয়ে গেল। ইচ্ছা ছিল প্রকৌশলে পড়ব। তাই মা দেশের একটি নামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। পরের লড়াইটাও ছিল বড় কঠিন। ক্লাস, টিউশনি, প্রজেক্ট—সব সামলানো কঠিন ছিল। কিন্তু সবচেয়ে কঠিন ছিল মাকে একা রেখে শহরে থাকা। মা কখনো দুঃখ প্রকাশ করেননি। বরং প্রতিদিন ফোন করে বলতেন, ‘আজ কী খেয়েছিস? ঠিকমতো ঘুমাস।’ তাঁর কণ্ঠেই আমার শান্তি ছিল।

আরও পড়ুন

চূড়ান্ত বর্ষে হঠাৎই মা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকটা দিন কেটেছিল হাসপাতালের বিছানার পাশে। ভয়, উৎকণ্ঠা আর অজানা এক অস্থিরতার মধ্যে। সেই দুর্বল শরীর নিয়েও মা ব্যস্ত ছিলেন আমার ভবিষ্যতের চিন্তায়। এক সন্ধ্যায় আমার হাত ধরে বলছিলেন, ‘আমার শরীর ঠিক না থাকলেও তোর স্বপ্ন যেন কোনো দিন আটকে না যায়।’ এই কথাটাই আমাকে প্রতিটা ক্লাস, প্রতিটা পরীক্ষা, প্রতিটা প্রজেক্টে টেনে নিয়ে গেছে সামনের দিকে।

সমাবর্তনে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, যে গর্ব হয়েছিল; কোনো সনদ, কোনো রেজাল্ট, কোনো চাকরিপ্রাপ্তির আনন্দের সঙ্গেই এর তুলনা হয় না।