অতিরিক্ত কেনাকাটার নেশা থেকে বের হবেন যেভাবে

প্রয়োজনের বেশি কেনাকাটা করা ঠিক না। মডেল: আজাদ
ছবি: অধুনা

যাঁরা কেনাকাটাকে নেশার পর্যায়ে নিয়ে যান, তাঁদের বলে শপাহোলিক। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ‘শপাহোলিক’ মানুষ আসলে ‘কমপালসিভ বায়িং ডিজঅর্ডার’ রোগে আক্রান্ত। যাঁরা দরকার না বুঝেই অকারণে কেনাকাটা করেন, তাঁদের এই অভ্যাস কাটিয়ে ওঠা জরুরি। তাঁরা কেনাকাটা না করতে পারলে নিজেকে অসুখী ভাবেন। সমস্যা হলে সমাধান থাকবেই। শপিং করতে করতে খাদের কিনারায় নিয়ে যাওয়া জীবনকে পথে ফেরাতে দরকার একটু চেষ্টা আর একাগ্র। আসুন জেনে নিই কেনাকাটার নেশা থেকে বের হয়ে আসার কিছু উপায়—

নতুন কিছুতে মন দিন

কেনাকাটার নেশা কাটাতে অন্য কোনো কাজ খুঁজে বের করুন। সেটা হতে পারে ঘরের কোনো কাজ, ব্যায়াম, গান শোনা, টিভি দেখা, বই পড়া কিংবা যেকোনো কিছু। এসব কাজে মনোনিবেশ করলে শপিংয়ের কথা ভুলে থাকা সহজ হবে। তবে ব্যাপারটা হতে হবে ধারাবাহিক।

সব সময় ইচ্ছাপূরণ নয়

ইচ্ছা করলেই কিনতে হবে, এ ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। এ জন্য মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ইচ্ছার কাছে বশ মেনে নয়, নিজের প্রয়োজন বুঝে কেনাকাটা করুন। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে যোগব্যায়াম করতে পারেন। তবে যোগব্যায়ামে আগ্রহ কিংবা সময় না পেলে নিজেই নিজেকে বোঝাতে পারেন। এ জন্য নিজের ওপর জেদটা জরুরি।

আরও পড়ুন
মানিব্যাগে টাকা না থাকলে খরচ করার কথাও কম ভাববেন
ছবি: পেক্সেলস

কাছে প্রচুর টাকা রাখবেন না

প্রয়োজনীয় শপিংয়ের একটা তালিকা প্রস্তুত করুন। সে অনুযায়ী টাকাপয়সা নেবেন, তার বেশি নয়। প্রয়োজনের বেশি টাকা নিয়ে শপিংয়ে যাওয়া মানে কিছু অতিরিক্ত পণ্য ঘরে আসবেই। প্রয়োজনে ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড ঘরে রেখে বাইরে যাবেন।

ফ্যাশন মানেই বাড়তি কাপড় নয়

ফ্যাশনেবল থাকতে কখনো আলমারিভর্তি কাপড়চোপড়ের দরকার পড়ে না। রুচিসম্মত পরিমিত জামাকাপড়ই যথেষ্ট। জামা-জুতা, সুগন্ধি, চুলের জেল থেকে শুরু করে অন্য জিনিসপত্র কেনাতেও রাশ টানুন, যেগুলো আপনার কাজে লাগে না—মানে কেনাকাটায় সীমা লঙ্ঘন করবেন না।

অনলাইনে কম সময় কাটান

আজকাল কেনাকাটার এক দারুণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম। চোখের সামনে আসতে থাকে একের পর এক পছন্দের জিনিস, আর শপাহোলিকেরা সেটা দেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েন কেনাকাটা করতে। ঝামেলাহীন এই কেনাকাটার অভ্যাস থাকলে এখনই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন। যেসব পেজ থেকে কেনাকাটা করেন, সেসব পেজে লাইক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে তাদের নতুন পণ্য এলেও সহজে আপনার সামনে আসবে না। দরকার ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় কাটানোর প্রবণতা অনেক সময় এমন অযথা কেনাকাটায় আসক্তি আনে। তাই অনলাইনে সময় কাটানো কমিয়ে দিন।

অনলাইনে সময় কম কাটালে কেনাকাটার ইচ্ছে কমে যাবে
ছবি: অধুনা
আরও পড়ুন

খরচের অ্যাপ ব্যবহার

মুঠোফোনে একটা হিসাব বা খরচের অ্যাপ নামিয়ে নিতে পারেন। এরপর নিজের আয়-ব্যয়ের হিসাব সেখানে সেট করে সেই মোতাবেক খরচ করুন। নির্ধারিত খরচের বাইরে কোনো টাকা ব্যয় করবেন না। ছাড়ে কেনাকাটা করার সুযোগ পেলেও সেসব ফাঁদে পা দেবেন না। ছাড়ে কেনাকাটা করতে গেলেও মানুষ বেহিসাবি হয়ে বেশি খরচ করে ফেলেন।

শেষ কথা

আপনার চেনা ছকে দেখা জীবনটাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করুন। সেই সব মানুষের কথা ভাবুন, যাঁরা একবেলা ভরপেট খেতে পেলেই কী আনন্দ পান! জীবনে ছোট ছোট পাওয়াগুলো মূল্যবান করে তুলতে চেষ্টা করুন। পণ্যের বদলে রক্ত-মাংসের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন। একটা খুব দামি কিছু কিনলে যে আনন্দ হয়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি আনন্দ মানুষ পান প্রিয়জনের মমতামাখা সান্নিধ্যে। যেটা আক্ষরিক অর্থেই অমূল্য।

আরও পড়ুন