পূর্বাচলের সুমু মার্কেটে কী পাওয়া যায়, জিনিসপত্রের মান ও দাম কেমন

২৭ জুন। শুক্রবারের সকাল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সঙ্গী করে ৩০০ ফুট ধরে এগিয়ে চলছে আমাদের গাড়ি। নীলা মার্কেট, জলসিঁড়ি মোড় পার হয়ে আরও সামনে সুমু মার্কেট আমাদের গন্তব্য, যেখানে মেলে তরতাজা সব শাকসবজি, ফলমূলসহ আরও অনেক কিছু। চলুন সুমু মার্কেট ঘুরে দেখা যাক।

কাঞ্চন ব্রিজের আগেই রাস্তার ডানে থাকা এই মার্কেট কাগজে–কলমে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ৫ নম্বর সেক্টরে পড়েছে। দূরের পথ, গাড়ি ছাড়া পায়ে চলা মানুষের উপস্থিতি তাই কম।

বাজারের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার জন্য সামনে যখনই মানুষের উপস্থিতি পাচ্ছি, জিজ্ঞেস করে এগোচ্ছি। এভাবেই একসময় সুমু মার্কেটে হাজির হলাম।

কাঞ্চন ব্রিজের আগেই যে ‘আন্ডারপাস’ পড়ে, তা দিয়ে রাস্তার ডানে গিয়ে একটু এগোলেই ‘গ্রিনল্যান্ড সিটি’র বড় বিলবোর্ডের নিচেই সুমু মার্কেটের দেখা মিলবে।

আকারে বাজারটা ছোট
ছবি: কবির হোসেন

আকারে বাজারটা ছোট। শুরুতে এক পাশে ভ্যানগাড়িতে এক সারি ডাবের দোকান, অন্য পাশে মৌসুমি ফলমূলের দোকান। আর এসবের মধ্যেই গ্রাম থেকে আনা ফ্রেশ শাকসবজি, হাঁস–মুরগি, কবুতর, কোয়েলের ডিমসহ নানা পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। পাশেই আছে সদ্য বানানো মিষ্টির দোকান।

মধুখালী গ্রাম থেকে আসা বিক্রেতা সাগর মিয়া বললেন, এই বাজারের বয়স প্রায় ১০ বছর। রাস্তার কাজ যখন চলছিল, তখন কখনো রাস্তার এপাশে তো কখনো রাস্তার ওপাশে, এমন করে বাজার বসেছে।

এখানে বাজার জমে মূলত বিকেলবেলা। শুক্র, শনি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে সারা দিন বাজার বসলেও অন্য দিন বসে দুপুরের পর। তবে ফলের দোকান খোলা থাকে সব সময়।

চলুন সুমু মার্কেট ঘুরে দেখা যাক।

শুরুতেই শাকসবজি

বেশির ভাগ শাকসবজিই আসছে নিকটবর্তী গ্রাম থেকে
ছবি: কবির হোসেন

বেশির ভাগ শাকসবজিই আসছে নিকটবর্তী গ্রাম থেকে। আর দূর বলতে নরসিংদী থেকে আসে কিছু কিছু আইটেম। কৃষকের নিজের উৎপাদিত ফসল, পরিমাণে অল্প কিন্তু মেলে ফরমালিনমুক্ত সতেজতার নিশ্চয়তা।

শাকের মধ্যে আছে কলমিশাক, হেলেঞ্চাশাক, ঘেঁটকচুশাক, প্রতি আঁটি ১০ টাকা করে। পাটশাক ও শাপলা প্রতি আঁটি ২০ টাকা আর পুঁইশাক প্রতি আঁটি ২০ থেকে ৩০ টাকা।

সবজির মধ্যে চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, পটোল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০ টাকায়। আলু ২০ টাকা, লাল আলু ৫০ টাকা, কালচে খয়েরি রঙের জাম আলু ৮০ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, আকারভেদে কচু ৬০ থেকে ১২০ টাকা, কচুর লতি ৩০ টাকা, কচুমুখি ৬০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন জাতভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, গাজর ২৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, কাঁঠালের বিচি ৫০ টাকা। লাউ প্রতিটি ৫০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চালকুমড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা। মোরব্বা বানানোর উপযোগী পাকা চালকুমড়াও পাবেন। দাম পড়বে প্রতিটি ২০০ টাকা। জাতভেদে লেবু মিলবে প্রতি হালি ৪০ থেকে ১৫০ টাকা।

আরও পড়ুন

ফলফলারি

আছে নানা স্বাদের কলাও
ছবি: কবির হোসেন

ফলের মধ্যে প্রথমে নজর যায় রঙিন আমের দিকে। মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম মনে হলেও প্রথম দেখা আমটি ছিল বারি ৭ আম। ২০০ টাকা কেজি। আম্রপালি ৬০ থেকে ১২০ টাকা, থাই ব্যানানা আম ১২০ টাকা, মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম ১৬০ টাকা, বারি ৪ ১২০ টাকা, হাঁড়িভাঙা আম ৮০ থেকে ১১০ টাকা। ড্রাগন ফল ১০০ থেকে ১৭০ টাকা। লটকন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। আমড়া ১২০ টাকা, পেয়ারা ১০০ থেকে ১২০ টাকা। পাকা পেঁপে ২০০ টাকা, করমচা ৫০ টাকা, কাউফল ৪৫০ টাকা, লঙ্গান বা কাঠলিচু ৫০০ টাকা, আমলকী ৭০০ টাকা। টক স্বাদের চাপালিশ কাঁঠাল প্রতিটি ৫০ টাকা।

কলার মধ্যে প্রতি ডজন চাঁপা কলা ৫০ টাকা, সবরি কলা ৮০ থেকে ১৫০ টাকা, বাংলা কলা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, সাগর কলা ১৫০ থেকে ২২০ টাকা। তরকারির হিসেবে খাওয়ার উপযোগী কাঁচকলা প্রতি হালি ৬০ টাকা। আর ডাব ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

আরও পড়ুন

হাঁস–মুরগি ও ডিম

প্রায় সব দোকানেই দেশি জাতের মুরগি আছে
ছবি: কবির হোসেন

এখানে যে কয়েকটি হাঁস–মুরগির দোকান আছে—সব কটিতেই দেশি জাতের প্রাধান্য বেশি। দেশি মুরগি পাবেন প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা, দেশি পাতিহাঁস ৭২৫ থেকে ৮০০ টাকা, রাজহাঁস ৭৫০ টাকা, চীনা হাঁস ৬৫০ টাকা। কবুতরও পাবেন জোড়া ৪০০ টাকা করে।

দেশি হাঁস ও মুরগির ডিম পাবেন হালি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির ডিম হালি ৬০ টাকা। প্রতি ৫০টি কোয়েল পাখির ডিম পাবেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।

আরও পড়ুন

শেষে মিষ্টি

মিষ্টিমুখ করার জন্য আছে মিষ্টির দোকান
ছবি: কবির হোসেন

বাজার করে ফেরার পথে মিষ্টিমুখ করার জন্য আছে মিষ্টির দোকান। এখানে বানানো, এখানেই পরিবেশন। কেজি দরে ছানার আমৃতি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, রসগোল্লা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, গোলাপজাম ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, মধুবন ও লেংচা ২৫০ টাকা। দই প্রতি কাপ ২০ টাকা।

দই, মিষ্টির পাশাপাশি আছে পেঁয়াজু, চিড়া, মুড়ি, ছোলার সমন্বয়ে ঝালমুড়ি খাওয়ার সুযোগ।

বাজার ঘুরে ফেরার পথে আমাদের সঙ্গী হলো কিছু তরতাজা শাকসবজি। সময়– সুযোগ হলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন কোনো একদিন।

ঢাকা থেকে দূরত্ব তুলনামূলক বেশি হলেও যানজটহীন প্রশস্ত রাস্তায় শাঁই করে চলে যেতে পারবেন।

আরও পড়ুন