সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে রাজধানীর যেসব বাজারে যেতে পারেন, জেনে রাখুন দরদাম

চারদিকে ঈদ ঈদ আমেজ। পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দমতো জামা, জুতা, আনুষঙ্গিক কেনা শুরু হয়ে গেছে। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে পছন্দমতো জামা–জুতা পেতে রাজধানীর গাউছিয়া, চাঁদনি চক ও নিউমার্কেটে ঢুঁ মারছেন ক্রেতারা। ঈদে জামাকাপড়ের চলতি ধারা ও দরদাম জানতে আমরাও গিয়েছিলাম।

ঈদের শাড়ি

ঈদের সময় গরম থাকবে। সে কারণে সুতি শাড়ির প্রাধান্য দেখা গেল। শাড়ির জমিনে হাতের কাজ, মেশিনের কাজ, স্ক্রিন বা ব্লক প্রিন্ট, হ্যান্ড পেইন্টের মাধ্যমে ফুলপাতা আর জ্যামিতিক নকশা। গাউছিয়া মার্কেটের নূর ম্যানশন শাখার বি প্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোবারক বলেন, দেশীয় ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই শাড়িগুলো বানানো হয়েছে।

গাউছিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে নানা নকশার শাড়ি
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

অন্য সময়ের মতো এবারও দেশি তাঁতে বোনা শাড়ি, জামদানি প্রিন্টের হাফ সিল্ক শাড়ি, সুতি শাড়ির প্রাধান্য থাকবে। হালকা সবুজ, আকাশি, ঘিয়ে, ধূসর, হালকা গোলাপি রং দেখা যাচ্ছে বেশি। এক হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে ক্রেতারা পেয়ে যাবেন হাফ সিল্ক, তাঁতের শাড়ি। সিল্ক, মসলিন বা জর্জেটের শাড়িতে এমব্রয়ডারি, কাটওয়ার্ক, পুঁতি ও জরির কাজ করা শাড়িগুলো দেড় হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

বর্ণিল গয়না

ঈদের অন্যতম আকর্ষণ গয়না। গাউছিয়া, চাঁদনি চকের গয়নার বাজারে জার্মান সিলভার ও ভারতীয় গয়নার আধিক্য দেখা গেল। রুপার ওপরে মিনাকারির কাজ, কৃত্রিম মুক্তা, পাথর দিয়ে সাজানো হচ্ছে গলার মালা, কানের দুল ও চুড়ি। আছে আয়না, কাপড় ও সুতার তৈরি গয়না। ধাতু ও কাঠের তৈরি আংটিগুলোর দাম শুরু ১০০ টাকা থেকে। ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার ভেতরেই পেয়ে যাবেন জার্মান সিলভারের গলার মালা ও কানের দুলের সেট। কিছুটা সাবেকি লুক পেতে চাইলে কানে জড়াতে পারেন টানা ঝুমকা। স্টাইলিশ বড় পাথরের কানের দুল নিতে পারেন। তিন থেকে চার পাথরের এসব কানের দুলের একেকটিতে একেক রং, আকারও কিছুটা বে-আকার। শাড়ি বা ওয়েস্টার্ন সবকিছুর সঙ্গেই এই কানের দুল মানিয়ে যায়। ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন এসব দুল। রেশমি কাচের চুড়ি না হলে যেন উৎসব জমে না।

গয়নার নকশায় ঈদের আমেজ
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

চাঁদনি চক ও গাউছিয়ার দোকানগুলোয় আজকাল মখমল লাগানো কাচের চুড়িও পাওয়া যাচ্ছে। ১২ পিসের এক সেট মখমল লাগানো কাচের চুড়ির দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ ছাড়া ৫০ টাকাতেই পেয়ে যাবেন ছিমছাম একগুচ্ছ রেশমি কাচের চুড়ি। বর্তমানে ২২ ক্যারেট রুপার দাম চলছে ২ হাজার ৫৭৭ টাকা আর ১৮ ক্যারেট রুপা পাবেন ২ হাজার ১১০ টাকায়। এ ছাড়া গয়নার ডিজাইনভেদে মজুরি শুরু হয় ৫০০ টাকা থেকে।

আরও পড়ুন

পছন্দসই ব্যাগ ও জুতা

ঈদের দিন ঘুরতে যাচ্ছেন, আগের পুরোনো ব্যাগটা নিলে কি সাজে? ঈদে অনেকেই তাই জামার সঙ্গে মিলিয়ে নতুন ব্যাগ ও জুতা কেনেন। জুতার খোঁজ করার আগে আপনার ঈদের পোশাকটিতে আরও একবার চোখ বুলিয়ে নিন, যেন মিলিয়ে কিনতে সুবিধা হয়। কথায় আছে, পোশাকে ফোটে ব্যক্তিত্ব, জুতা-ব্যাগে আভিজাত্য। এবারের জুতা-ব্যাগের চলটা অবশ্য দেশি-পাশ্চাত্য—দুটো মিলিয়েই। নিউমার্কেট ও গাউছিয়ায় পেয়ে যাবেন দেশি–বিদেশি বিভিন্ন ধরনের জুতা। নকশার পাশাপাশি জুতার রং ও কাটে দেখা গেছে বৈচিত্র্য। বেশির ভাগ চলছে ইন্ডিয়ান নাগরা, দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে কেডস পরতে চাইলে গুনতে হবে ১–২ হাজার টাকা।

নিউমার্কেট ও গাউছিয়ায় পেয়ে যাবেন দেশি–বিদেশি বিভিন্ন ধরনের জুতা।
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

চামড়ার বিভিন্ন জুতাও পেয়ে যাবেন নিউমার্কেটের দোকানগুলোয়। নিউমার্কেটের ব্যাগ ও জুতার দোকানের বেশির ভাগ জুতাই এসেছে চীন ও থাইল্যান্ড থেকে। এসব জুতার দাম শুরু হাজারের ওপর থেকে। চামড়ার তৈরি ব্যাগও পেয়ে যাবেন, মিলবে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। চাঁদনি চকের তৃতীয় তলায় ক্রিসবেলা, রোবো টিফেনি, সাইবা, ক্রিস্টিনা অ্যান্ড ওকের ব্যাগ। দাম পড়বে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া নিচতলায় থাকা নন–ব্র্যান্ডেড ব্যাগ পেয়ে যাবেন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।

আরও পড়ুন

দরজি দোকানের দরদাম

জামা অনেকে কেনার বদলে দরজির কাছে বানাতে পছন্দ করেন। এতে আরামদায়ক পোশাক মেলে। গাউছিয়ার বিভিন্ন দরজির দোকানে কথা বলে জানা গেল, সিল্ক বা জর্জেটের থ্রি–পিস বানাতে নেওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বানাতে পারবেন সুতির থ্রি–পিস। দরজির দোকানে ১২ হাত শাড়ির লেইস লাগাতে খরচ পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ডিজাইনভেদে কিছুটা কমবেশি হতে পারে।

ব্যস্ততা বেড়েছে দরজিদের
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ঈদের শাড়ির সঙ্গে সাধারণত ভারী গোছের ব্লাউজই বেছে নেওয়া হয়। তৈরি করা কাতান ব্লাউজের দাম পড়বে ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া সুতি শাড়ির জন্য ৩০০ টাকাতেই পাবেন চিকেন কাপড়ের ব্লাউজ। আজকাল নতুন একধরনের ফেব্রিক বেশ চলছে, একে বলা হচ্ছে শেরওয়ানি কাতান। অনেকটা কাতানের ওপর ডিজিটাল প্রিন্টের নকশা করা কাপড়। শেরওয়ানি কাতানের তৈরি ব্লাউজের দাম পড়বে সাড়ে ৪০০ টাকা। চাইলে ব্লাউজও বানিয়ে নিতে পারেন। ছিমছাম সুতির ব্লাউজ বানাতে খরচ হবে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ইনারসহ জমকালো কাপড়ের ব্লাউজ বানাতে গুনতে হতে পারে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।

আরও পড়ুন