পাবলিক ওয়াই–ফাই ব্যবহার করে কেনাকাটা করার আগে যা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন

আজকাল কেনাকাটায় অনেকেই মুঠোফোনভিত্তিক লেনদেনের আস্থা রাখেন। ঈদের কেনাকাটাও শুরু হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের লেনদেন আরও বাড়বে। তবে বাসার বাইরে ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়লে আমরা অনেকেই পাবলিক ওয়াই–ফাই ব্যবহার করি, যাতে যে কেউ সংযুক্ত হতে পারেন। কিন্তু অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে কি এমন সর্বজনীন নেটওয়ার্ক ব্যবহার নিরাপদ?

পাবলিক ওয়াই–ফাইয়ে লেনদেন বা সংবেদনশীল কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরিছবি: প্রথম আলো

অনলাইন কেনাকাটা নিরাপদ করতে ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করা ভালো উপায়, যেখানে ‘ডেটা এনক্রিপশন’ সুবিধা পাওয়া যায়। অর্থাৎ যেখানে অন্য কারও পক্ষে আপনার তথ্য দেখা বা চুরি করা বেশ কঠিন। তারপরও যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, যখন ব্যক্তিগত বা নিরাপদ নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার আগেই আপনাকে অনলাইনে কোনো ধরনের লেনদেন করতে হচ্ছে, তখন কী করবেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেনাকাটায় মুঠোফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করাই নিরাপদ। ব্যক্তিগত মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক থেকে তথ্য চুরি করা হ্যাকারদের পক্ষে বেশ কঠিন। অন্য দিকে পাবলিক ওয়াই–ফাই অনেক সময়ই খুব একটা নিরাপদ হয় না। এ ধরনের সংযোগ ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডের তথ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল কোনো তথ্য আদান-প্রদান করা হলে তা হ্যাকাররা পেয়ে যেতে পারে খুব সহজেই। এমনটাই বলেন ভিসার সহসভাপতি ও ফ্রড সার্ভিসেসের বৈশ্বিক প্রধান মাইকেল জাব্বারা।

এএআরপির (যা আগে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব রিটায়ার্ড পারসনস হিসেবে পরিচিত ছিল) ফ্রড ভিকটিম সাপোর্টের পরিচালক এমি নফজিগার জানান, তিনি নিজেও এভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে গিয়েছিলেন তিনি। হোটেলের উন্মুক্ত ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পরবর্তী ফ্লাইটের একটি ব্যাগের বিল পরিশোধ করতে হয়েছিল তাঁকে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই তাঁর ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি থেকে ই–মেইল ও ফোন আসতে শুরু করে তাঁর কাছে, যেগুলোর মাধ্যমে তাঁকে জানানো হয় যে তাঁর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে খরচ করা হচ্ছে, তাও আবার ভিন্ন রাজ্যে!

পাবলিক ওয়াই–ফাইয়ে লেনদেন বা সংবেদনশীল কাজ করার ক্ষেত্রে করণীয়

প্রথমেই আপনাকে ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে ওয়েবসাইটের ইউআরএল। ওয়েবসাইটের ইউআরএল যদি শুরু হয় ‘https:///’ দিয়ে, তাহলে ধরে নিতে পারেন, এই ওয়েবসাইটে দেওয়া আপনার সব তথ্য নিরাপদ থাকবে। অর্থাৎ কেউ তা চুরি করতে পারবে না। https-এর ‘s’ দিয়ে বোঝানো হয় ওই ইউআরএল ‘সিকিউর’ বা নিরাপদ। এ ক্ষেত্রে অ্যাড্রেস বারে সাধারণত একটি প্যাডলক (তালা) চিহ্নও থাকে। ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের সাইবার সিকিউরিটির পরিচালক ইভা গ্যালপেরিন জানান, ইউআরএল যদি https দিয়ে শুরু হয়, তাহলে একই পাবলিক ওয়াই–ফাইয়ে সংযুক্ত অন্যান্য ব্যক্তি তাঁদের ডিভাইস থেকে এটা দেখতে পারবেন যে আপনি কোন ওয়েবসাইটে ঢুকেছেন। কিন্তু আপনি সেখানে ঠিক কী তথ্য দিচ্ছেন, তা কেউ জানতে পারে না।

খেয়াল রাখুন ব্রাউজারে

ব্যক্তিগত ইন্টারনেট কিংবা পাবলিক ওয়াই–ফাই, আপনি যেটির মাধ্যমেই সংযুক্ত হোন না কেন, সব সময়ের জন্য নিরাপদ ব্রাউজিং নিশ্চিত করতে https-কে ব্রাউজারে ‘ডিফল্ট’ করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইভা গ্যালপেরিন। সাফারিতে এটি ‘ডিফল্ট’ই থাকে। ক্রোমে তা করতে চাইলে অবশ্য আপনাকে যেতে হবে সেটিংসে। সেখানে প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি অপশনে গিয়ে ঢুকতে হবে সিকিউরিটিতে। এরপর ‘অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস’ অপশনটি টগল করে নিতে হবে। ফায়ারফক্স থেকেও আপনাকে একইভাবে সেটিংস থেকে প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি অপশনে গিয়ে এরপর যেতে হবে সিকিউরিটিতে। এরপর স্ক্রল করে যেতে হবে ‘অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস’ অপশনে।

আরও পড়ুন

সন্দেহজনক নেটওয়ার্কও চিনে রাখুন

যেসব ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে কোনো পাসওয়ার্ডেরই প্রয়োজন হয় না কিংবা যে ওয়াই–ফাই টওয়ার্কের নামই ‘ফ্রি পাবলিক ওয়াই–ফাই’–এর মতো লোভনীয় কিছু, সেই ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন। অবশ্য নাম দেখে নিরাপদ মনে হলেই যে একটি ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্ক নিরাপদ হবে, তা-ও নয়। অনেক সময় ম্যালওয়্যার বা জালিয়াতি নেটওয়ার্কের কারণে অনেক য়াই–ফাই নেটওয়ার্ক অনিরাপদ হয়ে পড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের মতে, ওয়েবসাইটগুলোর নিজস্ব এনক্রিপশন ব্যবস্থা থাকার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উন্মুক্ত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেও নিরাপদ থাকা সম্ভব। তবে এটাও সত্য, যেকোনো দেশের সব ওয়েবসাইটে এনক্রিপশন ব্যবস্থা আছে কি না, সেটি আপনি নিশ্চিতভাবে জানেন না। তাই নিরাপদ ইউআরএলের বিষয়টি খেয়াল রাখুন অবশ্যই।

সূত্র: হাফপোস্ট

আরও পড়ুন