শপিং করতে গিয়ে অন্যদের বিরক্ত করছেন না তো

কেনাকাটা করতে গিয়ে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি
ছবি: অধুনা

সকাল থেকে রাত—দোকানগুলোতে নাগাড়ে চলতে থাকে কেনাবেচা। ছোট দোকান হোক কিংবা বড় মল—ক্রেতারা সেরা সেবাটাই চান বিক্রেতার কাছে। ব্যবহার ভালো পেলে অনেকে বাড়তি জিনিসও কিনে ফেলেন। দোকানের কর্মচারীরাও কিন্তু ক্রেতার কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা আশা করেন। কেনাকাটা করার সময়ও মানা উচিত কিছু আচরণ। অযথা অস্থিরতা, খারাপ আচরণ করার সময় ক্রেতা হিসেবে অনেকে ভুলে যান যে তার জন্য হয়তো এটা শুধুই কেনাকাটা বা অবসর বিনোদন, কিন্তু আরেকজনের জন্য তাঁর কর্মক্ষেত্র। তাই শপিং করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি—

ফোনে কথা বলা

মুঠোফোন তো এখন আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। দোকানের ভেতর ফোন এলে ধরতে সমস্যা নেই। কিন্তু তারপর কী করছেন, সেটাই দেখার বিষয়। জোরে চিৎকার করে কথা বলা, অযথা আরেকজনের সময় নষ্ট করে গল্প করা থেকে বিরত থাকুন। একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করে দেখতে পারেন। জিনিস কেনার জন্য যখন টাকা পরিশোধ করতে যান বা কর্মচারীদের অনুরোধ করেন কোনো একটি পণ্য খুঁজে দেওয়ার জন্য, তখন তারা এভাবে ফোনে কথা বললে আপনার কেমন লাগত? যদি অনেকক্ষণ ধরে কথা বলার প্রয়োজন হয়, একটি কোনা খুঁজে নিন অথবা দোকানের বাইরে গিয়ে কথা বলুন। কেনাকাটা করার সময়ও কথা বলতে পারেন, তবে গলার স্বর নিচু রাখার চেষ্টা করুন। ফোনে কথা বলতে বলতে পোশাক নাড়াচাড়া না করে, এক পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলুন। এতে অন্য ক্রেতারাও বিরক্ত হবেন না।

ভেতরে খাওয়া নিষেধ

অনেক দোকানের দরজার বাইরে লেখা থাকে, ভেতরে খাবার নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই অনেক ক্রেতা হাতে কফির মগ নিয়ে ঢুকে পড়েন। কখনোবা হাতে থাকে খাবার। হাতে যদি পানির বোতলও থাকে, সেটা ব্যাগে রেখে দিন। অসাবধানতায় কফি পড়ে যেতে পারে পোশাক বা অন্য কোনো পণ্যের ওপর। যদি দাগ না ওঠে, না চাইলেও এটি তখন আপনাকে কিনতে হবে। সিল্কের কাপড়ের ওপর কিংবা সুয়েডের জুতার ওপর পানি পড়ে গেলে সহজে সেই দাগ যায় না। অসাবধানতায় ফ্লোরের ওপর পানি পড়ে গেলে কেউ পা পিছলেও পড়ে যেতে পারেন। খাবার গাড়িতে রেখে আসুন বা দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে খেয়ে নিন। বিশেষ করে দোকানের ভেতর শিশুকে নিয়ে গেলে তার হাতে যেন কোনো ধরনের খাবার বা পানীয় না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

সাজতে শুরু করবেন না

প্রসাধনীর স্যাম্পল নিয়ে সাজতে শুরু করবেন না। মডেল: রাতুল ও আঁখি
ছবি: প্রথম আলো

প্রসাধনীর দোকানে অনেক সময় স্যাম্পল থাকে। দেশের বাইরে গেলে এটি বেশি দেখা যায়। সরাসরি স্যাম্পল থেকে মেকআপ তুলে ত্বকে লাগানোর অভ্যাস থাকলে আজই বন্ধ করুন। অনেকে লিপস্টিকের স্যাম্পল তুলে নিয়ে ঠোঁটে ঘষতে শুরু করেন। বিষয়টি অনুচিত। হাতের ত্বকে অথবা তুলির সহায়তায় নিজের ঠোঁটে লাগাতে পারেন। অনেক দোকানে কর্মচারীরাই এগিয়ে আসেন, কাজটি করার জন্য। তাঁদেরকেই করতে দিন। করোনার পর থেকে এক প্রসাধনী সবার ত্বকে ব্যবহার না করার জন্যই বলা হচ্ছে। একই কথা পারফিউম কিংবা ক্রিম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি ক্রিম স্যাম্পলের বাক্স থেকে বের করে গায়ে মেখে দেখতে চান, তবে কর্মচারীদের বলুন। তাঁরাই ব্যবস্থা করে দেবেন।

না কিনলে ছবি তুলবেন না

অনেক সময় দোকানে গিয়ে ক্রেতারা পণ্যের ছবি তুলে আরেকজনকে পাঠাতে চান। উদ্দেশ্য অপর পক্ষের মতামত জানা। এসব ক্ষেত্রে কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করে নিন ছবি তোলা যাবে কি না। কেনার ইচ্ছা না থাকলেও অনেকে ছবি তুলতে থাকেন। এতে করে দোকানের কর্মচারীর সময় নষ্ট হয়। কারণ, ক্রেতাকে সহায়তা করার জন্য তাঁকে এগিয়ে আসতে হয়। অনেকে পোশাক পরে ছবি তুলতে থাকেন, সামাজিক মাধ্যমে দেওয়ার জন্য। তারপর পোশাকটি খুলে রেখে চলে যান। এটিও অনুচিত ও অভদ্রতা।

আরও পড়ুন

টাকা দেওয়ার সময়

বিল দেওয়ার সময় অনেকেই কার্ড ব্যবহার করেন। আবার অনেকে টাকার নোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। টাকার নোট দিতে চাইলে গুছিয়ে দিন, এলোমেলো করে কাউন্টারে টাকা দিলে কর্মী এবং পেছনে থাকা ব্যক্তি দুজনেরই সময়ক্ষেপণ হবে। টেবিলের ওপর কয়েন, খুচরা নোট ঢেলে দিলেই আপনার দায়িত্ব শেষ নয়। বিল জমা দেওয়ার আগেই সব পণ্য গুছিয়ে কাউন্টারে দিন। অনেক ক্রেতা বিল জমা দেওয়ার সময়ও পণ্য বাছতে থাকেন। আপনার পেছনে থাকা অন্যরা এতে বিরক্ত হবেন।

অনলাইনে কেনাকাটা করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে
ছবি: অধুনা

পোষা প্রাণী নিয়ে যাওয়া

সুপারমার্কেটে বা দোকানে সাধারণত পোষা প্রাণী নিয়ে না আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অনেক ক্রেতার প্রাণীতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। আপনার পোষা প্রাণীটি হয়তো ভালো আচরণ করে, শান্ত থাকে। কিন্তু হঠাৎ কোনো কারণে কাউকে আঁচড়ে বা কামড়ে দিলে বিপত্তিতে পড়বেন। কারণ, এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো পোষা কুকুর, বিড়ালে অভ্যস্ত নন। খুব কাছাকাছি চলে এলে অনেকে নেতিবাচক ব্যবহার করে থাকেন।

পেছনে দেখে আসুন

‘স্টক শেষ, এটি আর নেই’ ক্রেতাদের সবচেয়ে অপছন্দের বাক্য। দোকানে গিয়ে একটি জিনিস পছন্দ হওয়ার পর যদি কিনতে না পারেন, এর চেয়ে মন খারাপ করা অনুভূতি আর নেই। কর্মচারীদের কাছ থেকে এ কথাটি শোনার পরও অনেকে বিক্রেতার পেছনে ঘুরতেই থাকেন, ‘আরেকবার দেখে আসুন না, কোথাও আছে কি না।’ ক্রেতারা ভুলে যান, কর্মচারীরা যত বেশি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন, তত লাভ। বরং একজন ভদ্র ক্রেতা হিসেবে যখন এ কথাটি শুনবেন, বিশ্বাস করুন। পাশাপাশি তাঁদেরকে আপনার ফোন নম্বর দিয়ে আসতে পারেন, পরে যখন পণ্যটি আসবে আপনাকে জানানোর জন্য।

আরও পড়ুন
কোনো পণ্য না কিনলে জায়গামতো রেখে দিন
ছবি: অধুনা

পণ্যটি জায়গামতো রাখুন

অনেক সময় একটি পণ্য পছন্দ করার পর আর কিনতে ইচ্ছে করে না। কাউন্টার পর্যন্ত যাওয়ার আগেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন, এটি কিনবেন কি না। এতে করে আপনার এবং আশপাশের সবার সময় বাঁচবে। কোনো পণ্য না নিলে যথাযথভাবে আবার সেটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। একটি পণ্য আরেকটি পণ্যের জায়গায় রেখে দিলে বিরক্ত হন কর্মচারীরা। তাঁদেরই আবার এটা গোছাতে হয়। একদম শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলে কাউন্টারেই অবস্থানরত কর্মচারীকে দিয়ে দিন। প্রয়োজনে তাঁরাই আবার যথাস্থানে রেখে দেবেন।

ব্যবহৃত পণ্য ফেরত

পোশাক, অন্দরসজ্জার জিনিস কিংবা সাজগোজের পণ্য ক্রেতারা বদলাতে চাইতেই পারেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়ে এলে সমস্যা নেই। প্রতিটি দোকানের নিজস্ব কিছু নিয়ম থাকে। কোনো দোকান এক মাস সময় দেয়, কোনোটি এক সপ্তাহ। জিনিস কেনার সময়ই সেটি জিজ্ঞেস করে নিন। পাশাপাশি নির্ধারিত কিছু পণ্য থাকে, যা ফেরত নেওয়া হয় না। এ কারণে কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। প্রসাধন সামগ্রী কিংবা খাবারের ঢাকনা খুলে ফেলার পর সাধারণত সেটা ফেরত দেওয়া যায় না। তবে পণ্যে যদি কোনো ত্রুটি থাকে, অবশ্যই সেটা আপনি ফেরত দেবেন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট