মায়ের শাড়িতে বিয়ে
এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল ভালোবাসা দিবস আর পয়লা ফাল্গুন। সুযোগ বুঝে সেদিনই গণমাধ্যমের ক্যামেরা থেকে লুকিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন বাংলাদেশের ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও নির্মাতা আদনান আল রাজীব। ২৮ ফেব্রুয়ারি মেহজাবীন ওই দিনের ছবি প্রকাশ করলে জানা যায়, আক্দের জমকালো টকটকে গোলাপি শাড়িটি আসলে মেহজাবীনের মায়ের বিয়ের শাড়ি। সেই শাড়িটিই বাড়ির বড় মেয়ে মেহজাবীনের বিয়েতে পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান উপহার! ভক্তরাও রায় দিয়েছেন, মায়ের শাড়িতে মেহজাবীনের বিয়ের লুকটাই নাকি বিয়ের সব আয়োজনের ভেতর ছিল সবচেয়ে সেরা—‘সিম্পলের ভেতর গর্জিয়াস’।
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর একটি হলো বিয়ে। আর বলা হয়, একটা মেয়ের আলমারিতে যে ১০টা জিনিস অবশ্যই থাকা উচিত, তার ভেতর অন্যতম হলো মায়ের বিয়ের শাড়ি। অনেকে বিয়ের মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে মায়ের বিয়ের শাড়ি পরেন মায়ের শক্তি, সাহস আর ভালোবাসাকে সঙ্গী করে নতুন জীবন শুরু করার প্রত্যয় নিয়ে। অনেকে বিয়ের দিন বা বিয়ের অন্তত যেকোনো একটা আয়োজনে মুহূর্তটাকে আরও বেশি স্মৃতিময়, আনন্দঘন ও আবেগপ্রবণ করতে পরেন মায়ের শাড়ি। অনেকের কাছে মায়ের শাড়ি, গয়না বা ওড়না যেন মায়েরই প্রতিনিধিত্বকারী একটা অনুষঙ্গ। এই প্রতিবেদক নিজেই বিয়েতে মায়ের বিয়ের ওড়না পরেছিলেন। তবে সেখানে নতুন লেস জুড়ে দিতে আর চলতি ধারা মেনে সাদা পুঁতিতে নিজের আর জীবনসঙ্গীর নাম লিখে নিতে ভোলেননি। বাংলা ট্রিবিউনের লাইফস্টাইল ইনচার্জ নওরিন আক্তার যে নিজের বিয়েতে মায়ের বিয়ের উজ্জ্বল গোলাপিরঙা শাড়ি পরেছিলেন, দেখে মনেই হয় না! শাড়িটি বহু বসন্ত পেরিয়েও আনকোরা, অমলিন, যেন সদ্য দোকান থেকে এনে ভাঁজ ভেঙে পরা হয়েছে। নওরিন বললেন, ‘মা যে আমাকে বউয়ের সাজে দেখে কী খুশি হয়েছিল…অনেক যত্ন করে শাড়িটা তুলে রেখেছিল। আসলে বিয়ের শাড়ি তো আর সেভাবে পরা হয় না। সেই শাড়িতে যদি মেয়ের বিয়ে হয়, এর চেয়ে দারুণ ব্যাপার আর কী হতে পারে!’
বিয়ের পোশাকে একগাদা টাকা খরচ করার আদৌ কি কোনো অর্থ হয়! বরং সেই টাকা দিয়ে বর-কনের হানিমুনটা হয়ে যায় দিব্যি। এমনটা মনে করেন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির কনটেন্ট অফিসার আদর রহমান। তিনি অবশ্য বিয়েতে মায়ের বিয়ের শাড়ি পরেছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। তাঁদের পরিবারে বিয়ের আগে বরের পাঠানো পোশাক পরা ‘মানা’। সে ক্ষেত্রে মায়ের বিয়ের শাড়ির চেয়ে ভালো বিকল্প আদর একটানা তিন দিন ভেবে ভেবেও খুঁজে পাননি। মায়ের কাছে ‘চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে’র মতো করে পেয়ে গেলেন। আদর রহমান বললেন, ‘সবাই বলে আমি দেখতে আমার মায়ের মতো। তাই বিয়েতে মায়ের শাড়ি পরে মায়ের মতো বউ সাজলাম।’ আদর রহমানের মায়ের বিয়ে হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। ৩৩ বছর পর ২০২২ সালে তিনি যখন ওই শাড়িটা বের করলেন, তখন শাড়ির সোনালি জরিগুলো ‘ফ্যাকাশে’ হয়ে রুপালি বর্ণ ধারণ করেছে। অবশ্য তাতে ক্ষতি তো হয়ইনি; বরং লাভই হয়েছে। কেননা বিয়েতে এখন রুপালি রংই যে ট্রেন্ডে!
একজীবনে মায়ের প্রয়োজন কি ফুরানোর। নিজের বিয়ের দিন, জীবনের নতুন অধ্যায়ের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে, নিজের সংসারে পা রাখার আগমুহূর্তে মায়ের শক্তি, সাহস আর ভালোবাসার স্পর্শ পেতে অনেকে তাই ট্রেন্ডে গা না ভাসিয়ে দিব্যি গায়ে জড়িয়ে নেন মায়ের শাড়ি।