ক্রিকেট নিয়ে পড়ালেখা করতে চান?

কোলাজ: আপন জোয়ার্দার

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস ও সাঁতারে অনার্স বা স্নাতক পড়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ তালিকায় যোগ হবে আরও কিছু জনপ্রিয় খেলা।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফিজিক্যাল স্পোর্টস অ্যান্ড এডুকেশন’-এ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চালু হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোনো খেলার ওপর এই প্রথম দেশে চার বছর মেয়াদি কোর্স চালু হলো। পোশাকি নাম ‘ব্যাচেলর অব স্পোর্টস স্টাডিজ’। শুধু উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী ক্রীড়াবিদদের জন্যই নয়, ক্রীড়াপ্রেমী শিক্ষার্থীদের জন্যও এটি দারুণ সুযোগ।

বিকেএসপির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তৈরি করা। সে লক্ষ্যে অটুট থেকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রীড়াশিক্ষার ওপরও জোর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালে সংশোধিত বিকেএসপি আইনে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত ডিগ্রি চালু করতে পারবে তারা।

সাধারণত এইচএসসি পাস করে বিকেএসপি থেকে বের হয়ে যান খেলোয়াড়েরা। অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতক করতে গিয়ে খেলাধুলার মূল স্রোত থেকে হারিয়ে যান অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বিশেষ করে অ্যাথলেটিকস, শুটিং, সাঁতারের মতো একক গেমের খেলোয়াড়দের জন্য বাইরে অনুশীলনের তেমন সুযোগ নেই বললেই চলে। ভবিষ্যৎ প্রতিভাবানদের সুরক্ষিত রাখতেই বিকেএসপির এমন উদ্যোগ।

বিকেএসপির কলেজ ভবন
ছবি: সংগৃহীত

শুধু বিকেএসপির নিয়মিত প্রশিক্ষণার্থীই নয়, বাংলাদেশের যেকোনো স্বীকৃত শিক্ষা বোর্ড বা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শাখা থেকে ২০২১ ও ২০২২ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) এবং ২০১৯ ও ২০২০ সালের এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) আলাদা আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩–সহ উভয় পরীক্ষায় সম্মিলিতভাবে কমপক্ষে জিপিএ-৬.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন ও যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষা হবে ২০ আগস্ট। তবে যেকোনো খেলায় জাতীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য থাকছে বিশেষ কোটা।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

বিকেএসপির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার সাদাত আবু মো. ফুয়াদ বলেন, ‘পারফরম্যান্সের সেরা অবস্থানে থেকে বিকেএসপির ছেলেমেয়েরা বের হয়ে পরে হারিয়ে যায়। ফলে দেশ তাঁদের সেরা পারফরম্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আরও দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনার্স চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিকেএসপির ছাত্রছাত্রীরা ক্রীড়াশিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হবেন, এটা আমার স্বপ্ন। ভবিষ্যতে বিকেএসপিকে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় রূপেও দেখতে পারি। এতে আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা উচ্চশিক্ষিত হবে।’

সিলেবাসের বিষয়বস্তু

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মতো স্ব স্ব খেলার অনুশীলন তো থাকছেই। বিকেএসপি ক্রীড়া কলেজের তৈরি সিলেবাসে জোর দেওয়া হচ্ছে ক্রীড়াবিজ্ঞানের ওপর। পাশাপাশি থাকছে ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সর্বজনীন স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসও। শেষ বর্ষে গিয়ে পড়তে হবে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ওপর নির্দিষ্ট কোর্স।

বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কীভাবে অনুশীলন পরিচালনা করাতে হয়, সে বিষয়গুলো ছাড়াও ক্রীড়াবিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়বস্তু হলো ক্রীড়া ও ক্রীড়াবিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব, বেসিক অ্যানাটমি অ্যান্ড ফিজিওলজি, এক্সারসাইজ ফিজিওলজি, স্পোর্টস বায়োমেকানিকস, স্পোর্টস সাইকোলজি, স্পোর্টস নিউট্রিশন।

সুবিধা

বাংলাদেশে ক্রীড়া ক্ষেত্রের বাজার এখন বেশ বিস্তৃত। কিন্তু সে অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি নেই। আধুনিক কোচ হতে চাইলেও ক্রীড়াবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। এ ছাড়া বিকেএসপি থেকে স্নাতক শেষে শিক্ষার্থীরা জেলা ক্রীড়া অফিসারসহ বিভিন্ন শারীরিক শিক্ষা কলেজে প্রভাষক পদে অগ্রাধিকার পাবেন বলেন আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক করা শিক্ষার্থীদের মতো সাধারণ চাকরির প্রতিযোগিতায় শামিল হওয়ার সুযোগ তো থাকছেই।

বিদেশে কোথায় পড়া যায়

খেলাধুলা নিয়ে বিশ্বে নানা ধরনের স্নাতক কোর্স চালু থাকলেও নির্দিষ্ট করে ক্রিকেট নিয়ে পড়ার সুযোগ দেশের বাইরেও খুব বেশি নেই। অনলাইন ঘেঁটে যুক্তরাজ্যের লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটির একটি কোর্সের খোঁজ পাওয়া গেল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অ্যাপ্লায়েড স্পোর্ট স্টাডিজ-ইন ক্রিকেট’ বিষয়ে তিন বছর মেয়াদি বিএসসি করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যেরই ইউনিভার্সিটি অব ওরস্টারে ‘ক্রিকেট কোচিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে বিএসসি বা স্নাতকোত্তর কোর্স করা যায়। চার বছর মেয়াদি এই কোর্স মূলত যাঁরা একটি ক্রিকেট দলের কোচ বা ব্যবস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য।