ঢাকা শহরে হান্নানের কাছ থেকে এত ঘাস কারা নেয়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ঘাস কেটে নিয়ে যাচ্ছেন মো. হান্নানছবি: এম এ হান্নান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চ ঘিরে বৃক্ষজাতীয় কিছু ফুলগাছ লাগিয়েছিলাম। পলাশ, শিমুল, সোনালু, জারুল, কৃষ্ণচূড়া। সেগুলো দেখতে প্রায়ই উদ্যানে যাই। সেদিনও গিয়েছিলাম। উন্মুক্ত মঞ্চের পুব পাশে সুবিশাল সমতল মাঠের সবুজ ঘাসগুলো বর্ষায় যেন প্রতিযোগিতা করে বেড়ে উঠেছে। সেই মাঠ থেকেই ঘাস কেটে ভ্যান বোঝাই করছিলেন একজন। গ্রামে মাঠে-ঘাটে–পথের ধারে নিত্য দেখা গেলেও রাজধানীতে এ দৃশ্য বিরল। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে তাই এগিয়ে যাই।

তাঁর নাম মো. হান্নান। শেরপুরের শ্রীবরদীতে বাড়ি। ঢাকায় আছেন ১৫–২০ বছর। ঘাস কাটাই তাঁর জীবিকা। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জনকে ঘাস সরবরাহ করেন। ঢাকা শহরে এত ঘাস কারা নেয়? এই ঢাকার বুকেই আড়ালে–আবডালে গড়ে উঠেছে অনেক খামার। পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের এক ভবনের ছাদেই আছে ৪৫ গরুর একটি খামার। খামারের বাইরেও কেউ কেউ শখের বশে একটি কি দুটি গরু, ছাগল বা ভেড়া পোষেন। ঘাস কেটে এসব মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের অস্থায়ী বাসিন্দা হান্নান।

গরুর খামারের জন্য প্রতি বস্তা ঘাসের দাম ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। ছাগল বা ভেড়ার জন্য আঁটিপ্রতি ঘাস ৫০ টাকা। বাঁধা গ্রাহকদের জন্য নিয়মিত ১০ থেকে ১২ বস্তা ঘাস সংগ্রহ করলেও কখনো কখনো চাহিদার কারণে পরিমাণটা অনেক বেড়ে যায়। এই যেমন চাহিদা থাকায় সেদিনও তাঁকে ১৮ বস্তা ঘাস কাটতে হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মো. হান্নান
ছবি: এম এ হান্নান

একটা ভ্যানে দিনে দুই হাজার টাকার ঘাসও বিক্রি করতে পারেন হান্নান। এ দিয়েই চলে তাঁর সংসার। ঘাস কাটার টাকা দিয়েই তিন মেয়েকে কলেজ পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। আর তিন ছেলের মধ্যে বড়টা কলেজে আর ছোট দুজন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ছে। হান্নান বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে সারা বছরই টুকটাক আবাদ করি। নিজেদের ঘরের চালের ভাত খাই। গরু–বাছুরও আছে।’

এই ঘাস কাটার শুরুটা কেমন করে হলো?

‘পুরান ঢাকায় আমাদের এলাকার লোক ছিল। খামারে খামারে সে ঘাস সংগ্রহ করে দিত। ছুটিতে বাড়িতে গেলে তার বদলি কাজ করার সুযোগ হয়। সেই থেকে এই কাজে জড়িয়ে যাওয়া।’

গরুর খামারের জন্য প্রতি বস্তা ঘাসের দাম ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। ছাগল বা ভেড়ার জন্য আঁটিপ্রতি ঘাস ৫০ টাকা।

প্রথম দিকে অর্ডার কম পেতেন। পরে চেনাজানা হলে বাড়তে থাকে অর্ডার। এখন প্রচুর চাহিদা। কখনো কখনো নাকি ঘাস কেটে খামারে খামারে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফিরতে রাত একটাও বেজে যায়।

বর্ষা থেকে শরৎ—এ সময় প্রচুর ঘাস জন্মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। মূলত এই উদ্যান, মাঠ আর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ঘাস সংগ্রহ করেন হান্নান। তবে অন্য মৌসুমে যখন ঘাসের খুব সংকট থাকে, তখন তাকে যেতে হয় পূর্বাচলসহ ঢাকার আশপাশে। অনেক সময় গাবতলী, ডেমরাসহ ঢাকার আশপাশের বাজার থেকে এনেও ঘাস সরবরাহ করেন। সে ক্ষেত্রে লাভটা অল্প থাকে।

প্রশ্ন করি, উদ্যানে ঘাস কাটতে কেউ বাধা দেয় না? বলেন, ‘না না, বাধা দেয় না। বরং উল্টো ডেকে নেয়। কারণ, ঘাস কাটা হলে তো উল্টো আগাছা পরিষ্কার হলো।’

আরও পড়ুন