আমার বাঁ কানে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিল

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বেশ কবছর ধরে বই আকারে প্রকাশ করছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংগৃহীত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী–ভাষ্য’। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতেই তাদের এই উদ্যোগ। জাদুঘরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরিচিতজনদের সঙ্গে আলাপ করে একাত্তরের স্মৃতি লিখিতভাবে পাঠায়। ফলে এই কর্মসূচি এক অর্থে বিনিময়। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস এবং শিক্ষার্থীরা জোগান দিচ্ছে ইতিহাসের নতুন উপাদান। শিক্ষার্থীদের পাঠানো এসব ভাষ্য থেকে বাছাই ৩১টি কাহিনি বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে প্রকাশ করছে প্রথম আলো

সংগ্রহকারী: তনয় তঞ্চঙ্গ্যা, সপ্তম শ্রেণি (স্মৃতিকথা সংগ্রহের সময়), রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, রাঙামাটি

বর্ণনাকারী: কালিপদ তঞ্চঙ্গ্যা, রাঙামাটি

সংগ্রহকারী ও বর্ণনাকারীর সম্পর্ক: নাতি–দাদা

পরদিন ঠিকই মুক্তিবাহিনীর কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে চলে গেলাম
অলংকরণ: কাইয়ুম চৌধুরী

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি যুবক। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করি, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করব। তখন কাউখালী থেকে কিছু দূরেই ৫০ থেকে ৬০ জনের এক দল মুক্তিবাহিনী ছিল। আমরা বন্ধুরা মিলে একদিন গেলাম তাঁদের কাছে। বললাম আমাদের ইচ্ছার কথা।

মুক্তিবাহিনীর ক্যাপ্টেন বললেন, তোমরা কি আমাদের তথ্য আদান-প্রদানে সাহায্য করতে পারবে? তাহলেই আমরা তোমাদের দলে নিতে পারি।

আমার এক বন্ধু বলল, অবশ্যই পারব।

কিছুদিন পরে আমরা মুক্তিবাহিনীকে খবর দিতে যাচ্ছিলাম। এখন যে ঘাগড়া বাজার, সেখানে অবস্থান করছিল পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারেরা। আমাদের দেখতে পেয়ে ওরা ডাকল। জানতে চাইল, কোথায় যাচ্ছি।

আমরা বুদ্ধি করে বললাম, ‘বেড়াতে যাচ্ছি।’

পাকিস্তানি বাহিনীর এক সদস্য বলল, নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছিস তোরা। তোরা মুক্তিবাহিনীর কাছে যাচ্ছিস।

আরও পড়ুন

আমরা বিষয়টা পুরোপুরি অস্বীকার করলাম। হঠাৎ পাকিস্তানি বাহিনীর এক সদস্য আমার বাঁ কানে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিল। তখন থেকে বাঁ কানে ভালো শুনতে পাই না।

যা হোক, সেদিন আর মুক্তিবাহিনীর কাছে যাওয়া হলো না। পরদিন ঠিকই মুক্তিবাহিনীর কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে চলে গেলাম। পাকিস্তানি বাহিনী যে এসে গেছে, সে খবর জানিয়ে দিলাম।

মুক্তিবাহিনীর ক্যাপ্টেন সবাইকে প্রস্তুত হতে বললেন। রাতে সেখানে আক্রমণ করবেন বলে জানালেন।

গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ করল মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তানিরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিছু সদস্য প্রাণ হারাল। শেষ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাধ্য হলো আত্মসমর্পণ করতে।

আরও পড়ুন