স্টাফড চিতা থেকে কাচকি মাছের চানাচুর, কী নেই জাতীয় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে
২৬ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর—জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ। এই উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে বসেছে জাতীয় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ২০২৫। দূর থেকেই চোখে পড়ে টোপরের মতো চূড়ায় সাজানো স্টলগুলো। ওপরে উড়ছে বেলুন, যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে মেলায়। ভেতরে দেশি–বিদেশি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গাঁড়ল, খরগোশ, কুকুর, বিড়াল ও পাখির বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ। প্রতিটি প্যাভিলিয়নেই আছে একেক রকম আকর্ষণ। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এই মেলা চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। কোনো প্রবেশমূল্য নেই। তিন দিনের এই মেলা শেষ হচ্ছে আগামীকাল ২৮ নভেম্বর, শুক্রবার। সময় করে ঘুরে আসতে পারেন।
প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়বে জাগ্রত জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ মঞ্চ। সামনে মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজন, চলছে বাউলগান। পাশেই বটতলা ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলার বিখ্যাত সব খাবারের স্টল। আছে সুবিশাল সেমিনার হল। আর এর বাইরে আটটি প্যাভিলিয়নজুড়ে মেলার প্রধান আকর্ষণ নানা প্রজাতির দেশি–বিদেশি প্রাণীর সরব উপস্থিতি।
পাখিদের রাজ্যে
সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীর ভিড় জমেছে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে রাখা পোষা পাখির প্যাভিলিয়নে। পাখিপ্রেমীদের নজর কেড়েছে বিদেশি লাভ বার্ড থেকে শুরু করে টিয়া, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, সাদা ও ধূসর রঙের ময়ূরসহ বিভিন্ন জাতের পাখি।
মানুষ জটলা পাকাচ্ছেন ম্যাকাও পাখির সামনে। কেউ কেউ পাখিগুলোর গায়ে হাত বোলানোর চেষ্টা করছেন, কেউ আবার দূর থেকে সেই দৃশ্য করছেন ক্যামেরাবন্দী। কেউ কেউ ভিডিও কলে প্রিয়জনদের দেখাচ্ছেন পাখিদের কাণ্ডকীর্তি।
কেউ আবার নির্ভয়ে হাতে আর কাঁধে তুলেও ছবি তুলছেন। কেউ আছেন ফেসবুক লাইভে, কেউ বানাচ্ছেন রিল।
কোথাও আবার দেখা মেলে খাঁচাবন্দী হাঁস–মুরগি। ব্রয়লার, কালার, বর্ণালি, স্যাসো, ব্রাউনিসহ নানা জাতের মোগর–মুরগি। আকারে এত বড় বড় যে কাছে ঘেঁষতেও ভয় হয়, এই বুঝি ঠোকর দিল!
আমরা যে বাজার থেকে ব্রয়লার বা সোনালি মুরগি কিনি, মেলার এই মোরগ–মুরগি হলো সেসবের মা–বাবা। এদের ডিম থেকে উৎপাদিত ছানারাই বড় হয়ে হাজির হয় বাজারে বাজারে। মা–বাবার সঙ্গে কোনো কোনো স্টলে আছে ছানাও। শীতে ছানারা একসঙ্গে জবুথবু হয়ে বসে আছে।
গলাছিলা মুরগিও দেখলাম। আছে ধূসর ও সাদা রঙের তিতির, বিভিন্ন ধরনের কোয়েল পাখি ও কবুতর। পাতিহাঁস, রাজহাঁস, চিনাহাঁস, ফরাসিহাঁসসহ সাদা–কালো অনেক হাঁসের দেখাও মেলে।
শিশুদের উচ্ছ্বাস
আছে খাঁচাবন্দী বিভিন্ন প্রজাতির খরগোশ, একমনে ঘাস খেয়ে যাচ্ছে। অনেকেই থমকে দাঁড়ান চোখের সামনে জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুর দেখে। আছে ইন্ডিয়ান হাস্কি, রটওয়েলার, ডোবারম্যান।
আকারে বিশাল ও ভীতিজাগানিয়া হলেও শিশুরা দিব্যি কাছে গিয়ে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে ওদের মাথায়। ছবি তুলছে গা ঘেঁষে। শিশুদের উচ্ছ্বাসই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে স্টলগুলোয়।
গবাদিপশুর প্যাভিলিয়নে
সবার আগে নজর কাড়ে ভুইট্টা গরু—আমাদের দেশের জনপ্রিয় ছোট জাতের গরু। লাল রঙের ছোট নাদুসনুদুস এমনই এক গরুর দাম শুনে অবাক হওয়ার দশা। গরু আকারে ছোট হলেও দামে অনেক বড়—সাড়ে চার লাখ টাকা!
পাশাপাশি বড় জাতের গরু যেমন আছে, আছে ছোট্ট বাছুরসহ দুগ্ধবতী গরুও। বাঁকানো শিং আর রোমশ মহিষও আছে।
পাশের আরেক প্যাভিলিয়নে ছাগল–জাতীয় সব গবাদিপশুর দেখা মেলে। ব্ল্যাক বেঙ্গলসহ দেশি–বিদেশি নানান জাতের ছাগল, ভেড়া, গাঁড়ল, দুম্বা।
বাঁকানো শিং, ঘাড়ের লোম রেখে শরীরের আর সব লোম ছেটে দেওয়া, দেখে মনে হচ্ছে যেন সিংহের এক রেপ্লিকা দাঁড়িয়ে আছে—এমন এক গাঁড়লের দাম উঠেছে ৭০ হাজার টাকা।
আছে মৃতরাও
মেলায় জীবন্ত প্রাণী দেখা শেষে যেতে পারেন স্টাফড মৃত প্রাণী দেখতে। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার স্টলে মৃত প্রাণীকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এই তালিকায় আছে চিতা, কুমির, বনরুই, ম্যাকাও, ময়ূর; আছে হরিণের শিং। আর সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে পাশাপাশি রাখা ইয়া বড় বড় উটপাখি আর ইমু পাখির ডিম। উটপাখির ডিম সাদা রঙের হলেও ইমু পাখির ডিমের দেখা পাবেন কালো রঙে।
আরও আছে
অনেক রকমের চানাচুর তো খেয়েছেন, কাচকি মাছের চানাচুর খেয়েছেন কখনো? খেতে হলে যেতে হবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের স্টলে। আরও আছে টুনা মাছের শিঙাড়া, সমুচা, পুরি।
বিএফডিসি রেডি ফিশের স্ন্যাকস আইটেমে আরও আছে ফিশ টিকিয়া, ফিশ রোল, লইট্যা ফ্রাই, চিংড়ি ফ্রাই, ফিশ বেগুনি। বিক্রি হচ্ছে বাক্সবন্দী লইট্যা মাছের শুঁটকিও।