সাইকেল চালানো না শিখেই যেভাবে আকাশে সাইকেল চালালাম

যেহেতু সাইকেল চালানো শিখিনি, তাই রোপওয়েতে সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা আমার কাছে অনেকটা বিস্ময়ের ছিল
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

স্কাই সাইক্লিং। শব্দ দুটি শুনতেই বেশ না! আকাশে সাইকেল চালানো। ধরুন, আপনি বাস্তবে সাইকেল চালাতে পারেন না, কিন্তু একটা সুযোগ পেলেন আকাশে সাইকেল চালানোর। বেশ মজার হবে না বিষয়টা!

নেপাল ভ্রমণে ঠিক এমনই একটা মজার অভিজ্ঞতা এবার হয়েছে। যদিও নেপাল ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্যই ছিল অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ট্রেইল। সেটা ভালোমতো ঘুরে এসে হাতে তিন দিন সময় থাকায় সফরসঙ্গীদের সঙ্গে প্ল্যান করলাম, ‘চন্দ্রগিরি হিলস’ থেকে ঘুরে আসব।

আরও পড়ুন
ধীরগতিতে দুই চোখ ভরে দেখতে দেখতে সামনে এগিয়ে গেলাম
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কাঠমান্ডু উপত্যকার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এই পাহাড়, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৫৫১ মিটার ওপরে অবস্থিত। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে আর দৃষ্টিসীমা পরিষ্কার থাকে, তাহলে চন্দ্রগিরির চূড়া থেকে কাঠমান্ডু শহর, অন্নপূর্ণা, হিমালয় পর্বতমালার মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময়েই জানতে পারি, চন্দ্রগিরির চূড়ায় অবস্থিত ভালেশ্বর মহাদেবের মন্দির পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কেব্‌ল কারের ব্যবস্থা আছে। মূলত কেব্‌ল কারে উঠতেই আমরা চন্দ্রগিরি যাই।

আগেই ট্যাক্সি ঠিক করা ছিল। ট্যাক্সিতে চেপে সরাসরি চন্দ্রগিরি হিলসে চলে গেলাম। এবার কেব্‌ল কারে চড়ার পালা। কেব্‌ল–পথ আড়াই কিলোমিটার। জনপ্রতি টিকিট ১ হাজার ৩০০ রুপি। তবে সামনে যে কেব্‌ল কারের চেয়ে আরও বড় চমক অপেক্ষা করছে, তা তখনো জানতাম না। কেব্‌ল কারে চন্দ্রগিরি হিলসের চূড়ায় পৌঁছে দেখি, সেখানে বেশ কিছু অ্যাকটিভিটিজ করার সুযোগ আছে। এর মধ্যে স্কাই সাইক্লিং বেশ জনপ্রিয়। টিকিটের মূল্যও কম, মাত্র ৬০০ রুপি। আর ভিডিও ফুটেজ নিতে চাইলে আরও ২৫০ রুপি।

স্কাই সাইক্লিংটা হলো রোপের ওপর সাইক্লিং। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ওপর দিয়ে আরেকটি রোপ থাকে, যার সঙ্গে সেফটি বেল্ট লাগানো থাকে। এই সেফটি বেল্ট শরীরে পরিয়ে দেওয়া হয়। মাথায় পরার জন্য ভালো মানের হেলমেট দেওয়া হয়। তবে স্কাই সাইক্লিং করার আগে একটা ছোট্ট সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়। যেখানে লেখা থাকে, কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। এটা আসলে সব অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে রোপের অপর প্রান্তে যেতে হয়
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সাধারণত এসব ট্যুরিস্ট স্পটে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তবে যদি আপনার উচ্চতাভীতি থাকে, তাহলে এ ধরনের কার্যক্রমে অংশ না নেওয়াই ভালো। আমার সামনেই ভারত থেকে আসা এক আপু ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, তিনি খুব ভালো সাইকেল চালাতে পারেন। কিন্তু উচ্চতাভীতির কারণে স্কাই সাইক্লিং শুরু করার আগের মুহূর্তে ভয়ে নেমে আসেন। যেহেতু আমার উচ্চতাভীতি ছিল না, তাই পুরো বিষয়টা আমি খুবই উপভোগ করেছি।

স্কাই সাইক্লিংয়ের সময় মনে এক ভিন্ন ধরনের অনুভূতি কাজ করছিল। যেহেতু কখনো সাইকেল চালানো শিখিনি, তাই রোপওয়েতে সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা আমার কাছে অনেকটা বিস্ময়ের ছিল। প্রথমে মনে হচ্ছিল, পারব তো? ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ব না তো? কিন্তু যখন সাইকেল চালিয়ে রোপে উঠলাম, তখন যে অনুভূতি হলো, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সামনের দৃষ্টিসীমার এক দিক যেন অন্য দিকের সৌন্দর্যকে হার মানাচ্ছিল। ধীরগতিতে দুই চোখ ভরে দেখতে দেখতে সামনে এগিয়ে গেলাম।

প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত চালিয়ে রোপের অপর প্রান্তে যেতে হয়। ফিরতি পথে আবার অন্য সাইকেল চালিয়ে ফিরতে হয়। এই আসা-যাওয়ার পথটুকু পার হতে সময় লাগে তিন থেকে চার মিনিট। সময়টা যদিও খুবই অল্প, তবে যে বিস্ময় আর ঘোরলাগা কাজ করছিল স্কাই সাইক্লিংয়ের সময়, তা সারা জীবনে এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে রবে আমার কাছে।

আরও পড়ুন