সন্ধ্যা নামল চলনবিলে

বর্ষায় প্রাণ পায় বিস্তৃত চলনবিলছবি: হাসান মাহমুদ

দিলপাশার রেলওয়ে স্টেশন। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার এ স্টেশনের চারদিকে চলনবিলের থইথই পানি। মাঝখানে স্টেশনটা যেন দ্বীপের মতো। স্টেশনের পাশ থেকেই নৌকায় উঠি। নৌকা ছাড়তেই বৃষ্টিভেজা বাতাসে জুড়িয়ে যায় শরীর-মন। যতদূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। মনে পড়ে যায়, প্রমথনাথ বিশীর চলনবিল বন্দনা—সম্মুখে যত দূর দেখা যায় বিলের অবারিত উদারতা/ চোখের দৃষ্টি কোথাও বাধা পায় না। বর্ষায় চলনবিলে ঘুরতে গিয়ে আমরাও সেই অবারিত উদারতার সাক্ষাৎ পাই। বিলের জলে ভাসতে থাকা নৌকাগুলো ছোট ছোট ঢেউয়ে দোল খায়। দ্বীপের মতো জেগে থাকে ছোট ছোট গ্রাম। গ্রাম ঘেঁষে যাওয়ার সময় ঘর থেকে উঁকি মারে শিশুমুখ। তাদের কাউকে কাউকে বাড়ির সামনের বিলে ডুবসাঁতারে ব্যস্ত দেখা যায়।

আরও পড়ুন

চলনবিলে নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ৬০০টি গ্রাম রয়েছে। এই বিস্তীর্ণ বিলের মধ্যেই রয়েছে বিভিন্ন নামে ৩৯টি বিল, ১৬টি নদী, ২২টি খাল ও অসংখ্য পুকুর।

বিশাল চলনবিলে ঘুরতে ঘুরতেই চোখে পড়ে জেলে নৌকা। জাল ফেলে মাছ ধরছে। শরতের বিলে নানা জাতের পাখির দেখা মেলে। বর্ষার এই সময় বেশি চোখে পড়ে মাছরাঙা। মাছের সঙ্গে চলে তাদের লুকোচুরি।

আরও পড়ুন

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। বিলের বিশালতা থেকে আবার গ্রাম ঘেঁষে চলতে থাকে আমাদের নৌকা। আমাদের মতোই সারি ধরে ঘরে ফিরছে হাঁসের দল। দিনভর বিলে চলা নৌকাগুলো তখন বাড়ির ঘাটে বাঁধা পড়ছে। কোনো কোনো বাড়ি থেকে ভেসে আসছে পাঁচফোড়নের ঘ্রাণ। তবে আমাদের নাকে স্থায়ী হয়ে বসে জলজ ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণ নিতে নিতে গন্তব্যে পৌঁছায় নৌকা।

চলনবিলের বুকে তখন সন্ধ্যা।

বিকেল গড়িয়ে চলনবিলে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে
ছবি: হাসান মাহমুদ

জেনে নিন

দিলপাশার স্টেশন ছাড়াও আরও অনেক জায়গা থেকেই চলনবিল ঘুরতে যাওয়া যাবে। পাবনার চাটমোহর থেকে চাটমোহর-বোয়ালমারী সড়ক এবং চাটমোহর-মান্নাননগর সড়ক ধরেও যাওয়া যাবে চলনবিলে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ থেকে হাটিকুমরুল সড়ক ধরে এগোলেই চোখে পড়বে চলনবিলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। নাটোরের সিংড়া উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে গেলে বোঝা যাবে বিলের বিশালতা। ভাড়া পাওয়া যাবে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা। চাইলে ডিঙিনৌকা নিয়েও ঘুরে বেড়ানো যাবে চলনবিলে।