অ্যান্টার্কটিকা ঘুরে আসার গল্প শোনালেন মহুয়া

মহুয়া রউফ
ছবি: কবির হোসেন

পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশি নারী মহুয়া রউফ। রোমাঞ্চকর সেই অভিযাত্রার গল্প শোনাতে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোর ফিচার বিভাগে এসেছিলেন এই অভিযাত্রী। ২০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শেষ হওয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের নিজের নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনান মহুয়া রউফ; দিয়েছেন নানান প্রশ্নের উত্তরও।

এত জায়গা থাকতে অ্যান্টার্কটিকায় কেন? শুরুতেই জানতে চাওয়া হলো।

মহুয়া রউফ বলতে শুরু করেন, ‘প্রথমে চিন্তা ছিল, পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের শেষ শহর আর্জেন্টিনার উসুয়াইয়াতে যাব। যে শহরের পর আর মাটি নেই। শুধু পানি আর পানি। অ্যান্টার্কটিকা আমার মাথায়ই ছিল না। পরে ভাবলাম, উসুয়াইয়াতেই যেহেতু যাব, অ্যান্টার্কটিকায় নয় কেন? পৃথিবীর পাঁচটি জায়গা থেকে অ্যান্টার্কটিকার জাহাজ ছাড়ে—আস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, চিলি ও আর্জেন্টিনা। এভাবেই অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের কথা প্রথমে মাথায় আসে।’

আরও পড়ুন

তবে ইচ্ছা থাকলেও বাদ সাধল আর্জেন্টিনার ভিসা। ‘যেহেতু পরিকল্পনা ছিল আর্জেন্টিনার উসুয়াইয়া যাব, তাই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আর্জেন্টিনার ভিসার জন্য ই-মেইল করি; কিন্তু কোনোভাবেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছিলাম না। শুধু এটাই ভাবছিলাম, একবার যদি ভিসা পাই, একেবারে দক্ষিণে চলে যাব। ভাগ্য ভালো ছিল যে ভুল করে দূতাবাসের কেউ একজন আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে দিয়েছিলেন! ইন্টারভিউয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন আর্জেন্টিনা যেতে চাও? বললাম, রবীন্দ্রনাথ গিয়েছিলেন, তাই। দুই ঘণ্টা পরই ভিসা দিয়ে দিল,’ বললেন মহুয়া রউফ।

ভ্রমণ নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা বলছেন মহুয়া রউফ
ছবি: কবির হোসেন
আরও পড়ুন

অভিযাত্রার পরিকল্পনা ছিল ব্রাজিল থেকে চিলি, সেখান থেকে আর্জেন্টিনার উসুয়াইয়া। তারপর অ্যান্টার্কটিকা। গল্প বলে চলেছেন মহুয়া, ‘উসুয়াইয়ায় দেখলাম, বেশ নান্দনিক কাঠের এক এয়ারপোর্ট। পাথুরে একটা শহর, বেশি হলে দুই কিলোমিটার হবে। মানুষজন নেই বললেই চলে। সেখানে দুই রাত থেকে অ্যান্টার্কটিকার জাহাজে উঠে পড়ি। তার আগে অবশ্য মজার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। জাহাজে ওঠার আগে অ্যান্টার্কটিকাগামী অভিযাত্রীদের সবাইকে একসঙ্গে একটি হোটেলে থাকতে হয়। হোটেলে যে রুমমেট হবে, জাহাজে সে–ই কেবিনমেট হবে।’

কথা বলতে বলতেই চায়ে চুমুক দেন মহুয়া। আবারও প্রশ্ন, কতজন ছিলেন? বলেন, ‘অভিযাত্রী ছিলাম ১১৪ জন। রান্নাবান্নার লোক ও গাইড মিলিয়ে সহযোগিতার জন্য ছিলেন আরও ৭২ জন।’

প্রথম আলো কার্যালয়ে মহুয়া রউফ
ছবি: কবির হোসেন

জাহাজের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে মহুয়া বলেন, ‘জাহাজের দুলুনিতে দুই দিন অসুস্থ ছিলাম। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চারজন মেয়ে বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। তাদের দুজন জার্মান, একজন রুশ। আমরা একসঙ্গে থাকতাম সব সময়; জাহাজে আমাদের ডাকত ‘চার সাহসী নারী’। যাঁরা রান্নার কাজ করতেন, তাঁরাও খুবই মজা করতেন। একদিন একজন জানালেন, ২২ তারিখে আমার জন্মদিন। মজা করে এক রাঁধুনি বললেন, জাহাজে ২২ তারিখে কোনো জন্মদিন হয় না। হয় ২১ তারিখে, না হয় ২৩ তারিখে করতে হবে।

আসলে জাহাজে দীর্ঘদিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সবাই থাকেন। দুর্গম পথে যাত্রা করে অনেকে ভয়ও পান, সে কারণে অভিযাত্রীদের সঙ্গে মজা করার মতো দক্ষ করেই ক্রুদের গড়ে তোলা হয়, জানান মহুয়া।

আরও পড়ুন

অ্যান্টার্কটিকায় পৌঁছে অন্য অভিযাত্রীদের সঙ্গে নানা ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন মহুয়া রউফ। কখনো ক্যাম্পিং, কখনো হাইকিং, জডিয়াকে করে ঘুরে দেখেছেন অ্যান্টর্কটিকার নিজস্ব রূপ। অ্যান্টার্কটিকায় যেদিকে চোখ যায় শুধু সাদা পাহাড়, পাথর আর বরফে ঢাকা প্রান্তর। বিভিন্ন ধরনের পাখি, পেঙ্গুইন, সিল ও তিমি। গাছ নেই! একজন মজা করে বললেন, তাহলে তো শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ার কথা। ‘একদমই না; বরং বাতাস আশ্চর্য রকমের সতেজ। ঠান্ডাটাও খুব আরামদায়ক,’—উত্তর দেন মহুয়া রউফ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো প্রভাব সেখানে দেখেছেন কি না, জিজ্ঞাসা করা হলে মহুয়া জানান, ‘চট করে তো আর সেটা বোঝা সম্ভব না। এর জন্য কম করেও সাত–আট দিন থাকতে হবে। কয়েক ঘণ্টায় যা দেখলাম, তা হলো কিছু কিছু জায়গায় বরফ পাতলা হয়ে গেছে।’

অ্যান্টার্কটিকায় থাকাকালে কী কী খেয়েছেন, সবশেষে জানতে চাওয়া হলে মহুয়া রউফ বলেন, 'সেটা বলব না। কী খেয়েছি জানতে হলে আমার লেখা পড়তে হবে।’

প্রথম আলো অনলাইনে প্রতি শনিবার প্রকাশিত হচ্ছে মহুয়া রউফের অ্যান্টার্কটিকার ভ্রমণকাহিনি।