বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের অনেক কিছুই দেশে আছে

দেশের পর্যটন-সম্ভাবনা ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘ছুটির দিনের' সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের গভর্নিং বডির সদস্য এবং এফবিসিসিআইয়ের ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট–বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সাবেক ডিরেক্টর ইনচার্জ নাসির মজুমদার

প্রথম আলো:

দেশে পর্যটনশিল্পের বর্তমান যে অবস্থা, তা নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট

আমাদের পর্যটন খাতের প্রসার যেভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। আমরা যখন পর্যটন খাতে কাজ শুরু করেছিলাম, সে সময় এতটা অগ্রগতি আশাও করতে পারিনি। এখন শুক্র-শনিবারসহ সরকারি যেকোনো ছুটির দিনে মানুষ ঘুরতে বেরিয়ে পড়ছে। সপ্তাহান্তে বাস-ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না, হোটেল-রিসোর্টেও রুম ফাঁকা থাকে না। অভ্যন্তরীণ পর্যটনে আমরা দারুণ এগিয়েছি। সেই সঙ্গে অনেক মানুষ বিদেশেও ঘুরতে যাচ্ছেন। তাই আউটবাউন্ড ট্যুরিজমও এগিয়েছে।

প্রথম আলো :

সেই তুলনায় বিদেশি পর্যটক কি আসছেন?

না, তা আসছেন না। ইনবাউন্ড ট্যুরিজমে আমরা নানা কারণে পিছিয়ে আছি। আমাদের এয়ারলাইনসে উঠলেই অন্য দেশের এয়ারলাইনসের সঙ্গে পেশাদারত্বের পার্থক্যটা টের পাওয়া যায়। বিদেশি পর্যটক এয়ারপোর্টে নামলেই বুঝে ফেলেন, কী বিশৃঙ্খলা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। অনলাইন ভিসা–প্রক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে অনেক দিন ধরে, সেটিও কার্যকর হচ্ছে না।

আমরা যারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, তাঁদের এয়ারপোর্টে ঢোকার অনুমতি নেই। একজন বিদেশি অতিথি এলে তাঁকে স্বাগত জানাতে একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত আমাদের যেতে দেওয়া উচিত। অনেককেই প্রবেশের পাস দেওয়া হয়েছে; কিন্তু আমাদের পাস নেই। সহজেই এটা করা সম্ভব।

আবার এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে গাড়ি ভাড়া করা থেকে গন্তব্যে যাওয়া পর্যন্ত পদে পদে বিদেশি টুরিস্ট নিয়ে ভুগতে হয়। পর্যটন গন্তব্যগুলোও বিদেশি পর্যটকবান্ধব নয়। তাঁদের বিনোদনের, সময় কাটানোর ব্যবস্থাও নেই। আসলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই অব্যবস্থাপনা।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

নীতিনির্ধারকদের কখনো এসব বলেছেন?

এই কথাগুলো আমি সব জায়গায় বলি। বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের অনেক কিছুই দেশে আছে। কিন্তু পদে পদে যে অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা, সেটি দূর করতে হবে। পরিবর্তনটা এক দিনে হয়তো হবে না, তবে শুরুটা করতে হবে। যে কারণে অভ্যন্তরীণ পর্যটকেরাও বাইরে চলে যাচ্ছেন।

প্রথম আলো :

একটা কারণ হয়তো ভ্রমণব্যয়। কক্সবাজার ভ্রমণের ব্যয়ে একজন পর্যটক চাইলে ভারতের দার্জিলিংও ঘুরে আসতে পারেন…

আপনার সঙ্গে আমি অ্যাগ্রি করি। দেশে এই ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হয়তো আমাদের হোটেল-রিসোর্টের উচ্চ ব্যবস্থাপনা ব্যয়। আবার হোটেলগুলো সারা বছর বুকড থাকে না; কিন্তু চালু রাখতে হয়।

প্রথম আলো:

এখন সারা বছরই মানুষ ঘুরছেন, হোটেলের রুমও ফাঁকা থাকে না...

তাই রুম ভাড়াও কমে যাচ্ছে। এই খাতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পর্যটন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় কিন্তু রুম ভাড়া কমে আসে।

প্রথম আলো :

পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের কথা বলছে জাতিসংঘ, আপনারা ব্যবসায়ীরা পর্যটন খাতে বিনিয়োগে কতটা আগ্রহী?

পর্যটন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ হচ্ছে। যাঁর টাকা-পয়সা আছে, সে–ই রিসোর্ট বা খামারবাড়ি গড়ে তুলছেন। এর একটা কারণ হতে পারে—জমি। অনেকেই জানেন, জমিতে বিনিয়োগে কোনো লোকসানের আশঙ্কা নেই। সঙ্গে আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে। কিন্তু অনেক রিসোর্ট পেশাদারত্বের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে না বা করছে না। কিছুদিন পর ফসলি জমির ক্ষতি করে স্থাপনা গড়ে তোলার এই প্রবণতা নিয়েও কথা উঠবে। তাই এখনই পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ নিয়ে নীতিমালা করতে হবে।

সাক্ষাৎকার: সজীব মিয়া