দুপুরে খাওয়ার পর এত ক্লান্ত লাগে কেন, কীভাবে এনার্জি ধরে রাখবেন
দুপুরে খাওয়ার পরপরই কাজের টেবিলে বসে থাকা যেন রীতিমতো যুদ্ধ। সোজা বাংলায় শরীরটা ছেড়ে দেয়, চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে আসে, মনোযোগ ধরে রাখা হয়ে পড়ে ভীষণ কঠিন, চা-কফিও হয়ে পড়ে নির্বিষ। আপনি একা নন। দুপুরে খাওয়ার পর এমন ক্লান্তি বা শক্তিহীনতা অনেকেরই হয়। এটা অলসতার কারণে নয়, বরং শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। জেনে রাখুন সমাধান।
কেন দুপুরে খাওয়ার পর শরীর ঢলে পড়ে
রক্তে শর্করার ওঠানামা: ভাত, রুটি, চিনি, পাউরুটি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তে দ্রুত গ্লুকোজ বাড়ায়। শরীর তখন ইনসুলিন ছড়িয়ে সেটা কমানোর চেষ্টা করে। তার ফলে তখন হঠাৎ গ্লুকোজ কমে গেলে ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করা, মনোযোগে ঘাটতি—এসব দেখা দেয়।
খাবার হজমের জের: ভরপেট খাওয়ার পর খাবার তো হজম হতে হবে। আর তাই দুপুরে খাওয়ার পর শরীরের রক্ত হজমপ্রক্রিয়ায় বেশি কাজে লাগে। ফলে মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ কিছুটা কমে যায়, আর তখনই চেপে বসে ঘুমঘুম ভাব।
শরীরের জৈব ঘড়ির প্রভাব: বেলা ১টা থেকে ৩টার মধ্যে শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দেই একটু ঘুমঘুম ভাব আসে। এটাকে বলা হয় শরীরের দৈনিক ছন্দ বা সার্কাডিয়ান ডিপ।
আমাদের খাবারের ধরনই এর মূল কারণ। খাবার রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা বাড়ায়, আবার দ্রুত কমায়ও; এই ওঠানামাই তৈরি করে ক্লান্তি ও ঘুমঘুম ভাব।জেসি ইনশসপে, ফরাসি বায়োকেমিস্ট ও ‘গ্লুকোজ রেভল্যুশন’ বইয়ের লেখক
কীভাবে এই ক্লান্তি কমাবেন
১. খাবার শুরু করুন সবজি বা প্রোটিন দিয়ে
ভাত বা রুটি খাওয়ার আগে সালাদ, ডাল বা মুরগির মাংস খান। এতে গ্লুকোজ ধীরে বাড়ে, শক্তি অটুট থাকে দীর্ঘ সময়।
২. খাবারের পর একটু হাঁটুন
মাত্র দুই-পাঁচ মিনিট হাঁটলেই শরীর গ্লুকোজ ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে। এতে রক্তে শর্করার ভারসাম্য থাকে, ঘুমঘুম ভাবও কমে।
৩. পানীয় বেছে নিন সচেতনভাবে
চিনি দেওয়া কোমল পানীয় বা জুস রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়। এর বদলে পানি, লেবুপানি বা চিনি ছাড়া চা খান।
৪. মিলিয়ে খান
ফল খেতে চাইলে সঙ্গে খান প্রোটিন বা চর্বি, যেমন আপেলের সঙ্গে বাদাম বা দইয়ের সঙ্গে বেরি। এতে গ্লুকোজ ওঠানামা কম হয়।
৫. পরিমাণে নজর দিন
অল্প অল্প করে খেলে হজমপ্রক্রিয়ায় চাপ কম পড়ে, শরীরও থাকে হালকা।
সহজ বিজ্ঞানের ভাষায়
খাবারের পর রক্তে গ্লুকোজ বাড়লে শরীর ইনসুলিন নিঃসরণ করে। ইনসুলিন অতিরিক্ত সক্রিয় হলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত কমে যায়, আর তখনই ক্লান্তি, ঘুমঘুম ভাব ও মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা জাগে।
গ্লুকোজের এই ওঠানামা যত সহজে হয়, ঠিক ততটাই সহজে নিয়ন্ত্রণও করা যায়, যদি আপনি জানেন কখন কীভাবে কী খেতে হবে।
এখনই যা করতে হবে
আগামীকাল দুপুরে তিনটি কাজের যেকোনো একটি চেষ্টা করুন—
খাবার শুরু করুন সবজি বা প্রোটিন দিয়ে।
খাবারের পর ৫ মিনিট হাঁটুন।
কোমল পানীয় বাদ দিয়ে পানি বা চা খান।
মাত্র একটি অভ্যাসও নিয়মিত মেনে চললে দুপুরে খাওয়ার পরের ক্লান্তি অনেকটাই কমে যাবে, দিনের বাকিটা সময় এনার্জিও থাকবে অটুট।
জেনে নিন
দুপুরে যেসব খাবার খেলে শক্তি অটুট থাকে: সেদ্ধ ডিম, ডাল, সবজি, মাছ, দই, বাদাম, ফল—এসব খাবারে থাকে প্রোটিন, আঁশ ও ভালো চর্বি, যা শক্তি ধরে রাখে দীর্ঘ সময়।
কোন খাবারে বাড়ে ঘুমঘুম ভাব: চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত ভাত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার শরীরে হঠাৎ শর্করার জোয়ার আনে, পরে দ্রুত কমে যায়, তখনই চেপে বসে দুপুরের ঘুম।