একদিন হয়তো দুজন ‘পাশের বাসার ভাবি’ হয়ে যাব

স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়—শিক্ষাজীবনের একেকটা ধাপ। নতুন নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়। তবে একই বন্ধুর সঙ্গে জীবনের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করার অভিজ্ঞতাও কারও কারও আছে। তাঁদের বন্ধুত্বটা কেমন? এই বিষয়েই পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। আজ আগস্ট মাসের প্রথম রোববার, বন্ধু দিবসে পাঠকের লেখা নিয়ে বিশেষ আয়োজন।

ফারাহ্ দিবা খান লাবণ্য ও লাবনী সরকার
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের গল্পের শুরুটা হয়েছিল সেই ২০০৮ সালে, যখন আমরা জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। তাকে আমি প্রথম দেখি বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। তখন ভাবতাম, এই মেয়েটা এত সুন্দর দেখতে, আর কী অসাধারণ গান করে!

পড়াশোনা আর গানের জন্য সে তখন স্কুলের পরিচিত মুখ।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

তারপর হঠাৎ যখন তার আর আমার বাসা পাশাপাশি হলো, তখন প্রায়ই দেখা হতো। আস্তে আস্তে পরিচয় আর সখ্য গড়ে ওঠে। সে ছিল ব্যবসায় শিক্ষা শাখায়, আর আমি বিজ্ঞানে। এ কারণে ততটা হয়তো গভীরতা ছিল না, তবে একেবারে কমও ছিল না।

তারপর...ও আচ্ছা নামটাই তো বলা হলো না। শুনলে হয়তো অবাক হবেন। ওর নাম ফারাহ্ দিবা খান লাবণ্য আর আমি লাবনী সরকার। তার মানে গল্পটা লাবণ্য আর লাবনীর।

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজেও আমরা দুজন আবার এক হলাম। ও ব্যবসায় শিক্ষায়, আর আমি মানবিকে। সম্পর্কের গভীরতা আরও গাঢ় হলো। একসঙ্গে পড়া, ঘুরতে যাওয়া।

কলেজে সবাই আমাদের নাম নিয়ে দোটানায় পড়ে যেত। লাবণ্যকে লাবনী আর লাবনীকে লাবণ্য ডাকত। আমরা একটা পর্যায়ে কেউ আর এটা নিয়ে কিছু বলতাম না। অনেকেই আমাকে বলত, ‘তুমি তো অনেক সুন্দর গান গাও!’ আমি ধন্যবাদ দিতাম আর হাসতাম। পরে গানের শিল্পী লাবণ্যকে তাঁর প্রাপ্য প্রশংসা পৌঁছে দিতাম। ওর ক্ষেত্রেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে।

এরপর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে দর্শন বিভাগে ভর্তি হলাম। ও শুরুতে ভর্তি হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কে জানে, নামের মিলের টানেই হয়তো লাবণ্যও একসময় চলে এল ঢাবির সংগীত বিভাগে।

এখানেই শেষ নয়। আমাদের ঠিকানাও হলো একই হলে—রোকেয়া হল।

এ পর্যন্ত হলেও ঠিক ছিল। কিন্তু এরপর যেটা হলো, সেটা রীতিমতো ভুতুড়ে। আমি অপরাজিতা ৭৭–এ সিট পেলাম। হলে উঠলাম অক্টোবরের ২৯ তারিখ। আর ও হলে সিট পেয়ে শুরুতেই হয়ে গেল আমার রুমমেট। আমরা দুজনসহ আমার রুমের অন্যরা সবাই অবাক। কারণ, আপুরা আমার মুখে ওর কথা অনেক শুনেছে।

লাবণ্যও হলে উঠল ২৯ তারিখে, তবে জানুয়ারি মাসের। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, ও জানত না আমি এই রুমেই থাকি, আর আমিও কখনোই ওকে বলিনি।

আমাদের সম্পর্কটা এখন কেবলই বন্ধুত্ব নয়, বলতে গেলে পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। আমাদের দুজনের পরিবারের মানুষজনও এ কারণে বেশ ভরসা পায়। ওর সব সহপাঠীরা যেমন আমাকে চেনে, তেমনি আমার বেশির ভাগ সহপাঠীও লাবণ্যকে চেনে। সবার একটাই প্রশ্ন—এত সব কীভাবে সম্ভব হলো!

আমি বিএনসিসি নৌ শাখায় ছিলাম, আর ও ছায়ানটে। শুক্রবার আমাদের দুজনকেই একসঙ্গে বের হতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা একই মঞ্চেই থাকতাম দুজন। কারণ, ও থাকত গান নিয়ে, আর আমার দায়িত্ব মঞ্চের পেছনে।

মজা করে বলতাম, তুই যখন বড় সংগীতশিল্পী হবি, তখনো হয়তো আমি তোর সঙ্গে একই মঞ্চে থাকব। হয়তো অন্য কোনো ভূমিকায়, অন্য কোনো পেশায়। কারণ, আমরা তো কেউই কাউকে ছাড়ব না। হয়তো একপর্যায়ে পাশের বাসার ভাবিও হয়ে যেতে পারি...হাহাহা!

এ বছর আমাদের বন্ধুত্বের ১৪ বছর হলো। সামনে হয়তো বন্ধুত্বের রজতজয়ন্তী, সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। লাবণ্য, তুই যখন এই লেখাটা পড়বি, তখন হয়তো হাসবি। তবে তুই আমার চোখে সেই প্রথম দিন থেকেই প্রিয় সংগীতশিল্পী।