যদি এআই দিয়ে সিভি তৈরি করতে চান

চ্যাটজিপিটি বা গুগলের জেমিনির মতো এআই টুল খুব দ্রুত আপনার তথ্য বিশ্লেষণ ও বিন্যাস করতে পারে।
ছবি: এআই/প্রথম আলো

চাকরির বাজার এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক। তাই নিজের সিভি বা কারিকুলাম ভিটা হতে পারে নিয়োগকর্তার কাছে আপনার প্রথম পরিচয়, আর সেই পরিচয়টা যদি হয় আকর্ষণীয় ও পেশাদার, তবে চাকরির দৌড়ে আপনি এগিয়ে থাকবেন।

সিভি বানানোর পেছনে আজকাল আর কেউ ঘণ্টাব্যাপী সময় ব্যয় করতে চান না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর কিছু টুল আছে, যা আপনাকে মুহূর্তেই তৈরি করে দিতে পারে একদম ঝকঝকে, আধুনিক সিভি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক খালেদ মাহমুদের মতে, ‘এআই টুলস এখন শুধু তথ্য গুছিয়ে দেয় না, সিভিকে পেশাদারভাবে সাজিয়ে নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো করে তোলে।’ আরও কিছু তথ্য ও পরামর্শ দিলেন তিনি। চলুন জানা যাক।

আরও পড়ুন

এআই দিয়ে সিভি তৈরির সুবিধা

চ্যাটজিপিটি বা গুগলের জেমিনির মতো এআই টুল খুব দ্রুত আপনার তথ্য বিশ্লেষণ ও বিন্যাস করতে পারে। এতে সময় বাঁচে, আবার প্রয়োজনমতো সিভির ধরনও বদলে নেওয়া যায়। এআই দিয়ে সিভি তৈরির সুবিধা হলো—

  • এআই বিভিন্ন ফরম্যাট বা ধরনের সিভি ডিজাইন আপনার সামনে হাজির করবে।

  • ব্যাকরণ ও বানানের ভুল ধরিয়ে দেবে।

  • চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা মিলিয়ে সিভি সাজাবে।

  • পুরোনো সিভি উন্নত করার পরামর্শও দেবে।

ফলে আপনি কয়েক মিনিটের মধ্যে এমন একটি সিভি পেতে পারেন, যা দেখতে আকর্ষণীয় ও তথ্যবহুল।

নতুন করে সিভি বানাতে চান?

পুরোনো কোনো সিভি না থাকলে এআই দিয়েই শুরু করুন নতুন করে।

  • অনলাইনে এআইনির্ভর সিভি তৈরির সাইটে যান (যেমন europass.europa.eu/en/create-europass-cv)।

  • আপনার নাম, যোগাযোগের তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা লিখুন।

  • আপনি কোন চাকরির জন্য আবেদন করবেন, সেটি উল্লেখ করুন।

  • এরপর নির্ধারিত কমান্ড দিলে এআই নিজে থেকেই প্রাসঙ্গিক বিভাগ তৈরি করবে, এমনকি রং, ফন্ট ও টেমপ্লেট ‘সাজেস্ট’ করবে।

সিভির ‘সারসংক্ষেপ’ বা ‘অবজেকটিভ’ অংশে এআই বেশ সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি নিজের কাজের ধরন বা অর্জন লিখে দেন, এআই সেটাকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবে। আপনার সব অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব, অর্জনের কথা ‘বুলেট পয়েন্ট’ আকারে উল্লেখ করতে পারেন। শক্তিশালী ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে এআই আপনার এসব তথ্যকে আরও আকর্ষণীয় করতে পারে।

পুরোনো সিভি নতুন করুন

আপনার পুরোনো সিভি হালনাগাদ করতেই এআইয়ের সহায়তা নিতে পারেন। চ্যাটজিপিটি বা জেমিনিতে পুরোনো সিভি কপি-পেস্ট করুন বা ফাইল আপলোড করুন। এরপর চাকরির ধরন অনুযায়ী নির্দেশনা দিন। যেমন

‘Please improve my CV for a marketing job in 2025.’

মুহূর্তেই এআই আপনার সিভি বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দেবে—কোথায় ঘাটতি, কীভাবে লেখাটা আধুনিক ও আকর্ষণীয় করা যায়।

  • এআই পুরোনো সারসংক্ষেপকে নতুনভাবে সাজাবে।

  • অভিজ্ঞতার অংশে অর্জনগুলো সংখ্যায় তুলে ধরতে সাহায্য করবে।

  • পুরোনো দক্ষতার জায়গায় নতুন, প্রাসঙ্গিক দক্ষতা যোগ করতে বলবে।

শেষে ব্যাকরণ ও বানান যাচাই করে সিভি একবার নিজে মনোযোগ দিয়ে দেখে নিন। কারণ, এআই সাহায্য করবে ঠিক, কিন্তু সিদ্ধান্ত আপনার।

ছবির কথাও ভাবুন

আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান সিভিতে ছবি চায়। আপনি চাইলে এআই টুল দিয়ে নিজের ছবিকে ‘প্রফেশনাল হেডশটে’ রূপ দিতে পারেন। বিভিন্ন ফ্রি টুলই এখন ছবিকে করপোরেট লুক দিতে পারে, যা আপনার সিভিকে আরও পেশাদার করে তুলবে।

আরও পড়ুন

মনে রাখবেন

  • এক সিভি দিয়ে সব চাকরিতে আবেদন করবেন না।

  • প্রতিটি পদের চাহিদা অনুযায়ী এআইকে নির্দেশনা দিন—সেই অনুযায়ী সিভি সাজিয়ে নিন।

  • এআই টেমপ্লেটধর্মী লেখা দেয়, তাই আপনার নিজস্ব ভাষা ও স্টাইল ব্যবহার করুন।

  • আরেকটি সমস্যা হলো, এআই কখনোই আপনার প্রতিফলন নয়। আপনি কেমন, আপনার অভিজ্ঞতা কী, সেসবই প্রতিফলিত হওয়া উচিত আপনার সিভিতে। যদি এআইকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না জানেন, তাহলে এআই দিয়ে সিভি না বানানোই শ্রেয়।

সূত্র: জবসিকার ডটকম