চ্যাটজিপিটি দিয়ে সিভি বানানোর বিপদগুলো জানেন তো?
আমরা অনেকেই ক্রমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। ই–মেইল লেখা বা সিভি তৈরির মতো ‘ছোটখাটো’ কাজেও চ্যাটজিপিটির দ্বারস্থ হচ্ছি। এতে ভুল কম হয়, ঝক্কি কমে যায়, তা ঠিক। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সিভি তৈরি করা ঠিক নয়। কেন?
নিজের প্রতিফলন নয়
আপনার সিভি আপনার প্রতিচ্ছবি। চাকরিদাতা আপনার সিভির মাধ্যমেই আপনার সঙ্গে পরিচিত হবেন। চ্যাটজিপিটির মতো কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনাকে একটা সিভি বানিয়ে দিলে তা আপাতদৃষ্টে সুন্দর হতে পারে ঠিকই, তবে তাতে আপনার নিজস্বতার ছোঁয়া থাকবে না। অর্থাৎ এমনটা হতেই পারে যে সেই সিভিতে আপনিই সঠিকভাবে উপস্থাপিত হচ্ছেন না। চ্যাটজিপিটি হয়তো কেবল কয়েকটি কি–ওয়ার্ডের ওপর ভিত্তি করেই সিভিটা তৈরি করে দিল, অথচ আপনি নিজে লিখলে নিজের অন্যান্য গুণের কথাও উল্লেখ করতেন। যে সিভিতে আপনার চরিত্র বা দক্ষতার প্রতিফলন হয়নি, সেটা দেখে চাকরিদাতা আপনাকে যোগ্য প্রার্থী বিবেচনা না–ই করতে পারেন। অথচ আপনার হয়তো সেই যোগ্যতা ঠিকই ছিল।
গতানুগতিকতা
চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বেশ বুদ্ধিমান বটে। তবে সৃজনশীলতায় এটি মানব মস্তিষ্কের চেয়ে নিঃসন্দেহেই পিছিয়ে। একটি পদের জন্য যখন আপনি আবেদন করছেন, তখন আপনার কাছাকাছি যোগ্যতা নিয়েই আরও বহু মানুষ আবেদন করেন। এই একই ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন বহু মানুষের জন্য চ্যাটজিপিটি অনেকটা একই ধরনের সিভি তৈরি করে দিবে। এমন গতানুগতিক সিভি চাকরিদাতার নজর কাড়বে না।
যান্ত্রিকতা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভাষায় মানবীয় আবেগ থাকে না। এর যান্ত্রিক ভাষা কিছুটা একঘেয়েও বটে। যান্ত্রিক ভাষা বা অতিরিক্ত নির্ভুলতা আপনার সিভির মান কমিয়ে দেয়। এমনকি এ যুগের চাকরিদাতারাও বোঝেন, এমন যান্ত্রিক সিভি হয়তো একজন প্রার্থী চ্যাটজিপিটিকে দিয়েই তৈরি করিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরাও বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে নেন। আর স্বাভাবিকভাবেই চাকরির পরীক্ষায় এমন প্রার্থীর সাফল্যের সম্ভাবনা কমে যায়।
বরং যা করতে পারেন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার কাজে সহকারীর ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, কীভাবে একটা সিভিকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। অর্থাৎ আইডিয়া নেওয়া বা ব্রেন স্টর্মিংয়ের (মাথা খাটানো) কাজে আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিতেই পারেন। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী সিভি তৈরি করার জন্য নিজের কোন ধরনের গুণের কথা উল্লেখ করা উচিত, সেটা আপনার নিজেরই ভেবে দেখা জরুরি। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আপনি কেন আগ্রহী হলেন, নির্দিষ্ট ওই পদটিই কেন আপনার পছন্দ হলো, এসব নিয়েও স্বচ্ছভাবে ভেবে নিন। এসব বিষয় মিলিয়ে আপনি নিজের ভাষায় নিজের মতো করে একটা সিভি বানিয়ে ফেলতে পারবেন। সিভি তৈরি করার পর চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে ব্যাকরণগত দিকগুলো ঠিক করিয়ে নিতে পারেন। তাতে আপনার সিভির সৌন্দর্য আরও বাড়বে।
তবু যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই হয় ভরসা
প্রতিষ্ঠান, কাঙ্ক্ষিত পদ ও নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিতভাবে ভেবে নেওয়ার পর যদি আপনার সিভির ভাষাটি গুছিয়ে নিতে অসুবিধা হয়, তাহলে আপনার এসব চিন্তালব্ধ তথ্য দিতে পারেন চ্যাটজিপিটিকে। তারপর বলতে পারেন এগুলো দিয়ে সিভি বানাতে। চ্যাটজিপিটির কোনো সাজানো কথায় নয়; বরং এভাবে নিজের চিন্তার ভাষাগত উপস্থাপনে তৈরি করতে পারেন আপনার সিভি। এ ক্ষেত্রেও চ্যাটজিপিটি কেবল আপনার কাজে সহায়ক ভূমিকাই রাখবে।
চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে সিভি তৈরির পরও নিজে পরখ করে দেখুন। সিভির কোনো অংশ যান্ত্রিক মনে হলে কিংবা কোনো জায়গায় আপনাকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে না বলে মনে হলে, সেই অংশটুকু বদলে দিন। কোনো অবস্থাতেই চ্যাটজিপিটির হাতে নিজের সিভি তৈরির পুরো দায়িত্ব তুলে দেবেন না।
সূত্র: অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন