যাঁদের হাত ধরে আইইউবিএটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে দেশে-বিদেশে

আইইউবিএটি ক্যাম্পাস
ছবি: সংগৃহীত

১৯৯১ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষাবিদ এম আলিমউল্যা মিয়ান। তাঁর স্বপ্ন ছিল—বাংলাদেশের প্রত‍িটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন ‘আইইউবিএটি গ্র্যাজুয়েট’ উঠে আসবে। এখনো সেই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলেছে। শুধু যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ‍্যালয়ে এসে ভর্তি হচ্ছেন তা নয়, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষে ছড়িয়েও পড়ছেন দেশে–বিদেশে, হয়ে উঠছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্র্যান্ড অ‍্যাম্বাসেডর’। আইইউবিএটির এমন কয়েকজন অ‍্যালামনাইয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিলাম আমরা।

অ‍্যালামনাইরা কী বলছেন

সবুজ ক‍্যাম্পাস, ভিনদেশি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগ, আবাসনের সুবিধা, বিভিন্ন বৃত্তি—এমন নানা কারণেই আইইউবিএটি কিছুটা আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বললেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. আলিমউল্যা স্যারের একটা ভাবনা ছিল। তিনি প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন পেশাদার স্নাতক তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। নর্থ আমেরিকার স্টাইলে সাজিয়েছিলেন পড়াশোনার মান। তাঁর দেখানো পথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। পটুয়াখালী থেকে আমার এসএসসি। আর ঢাকার নটর ডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক। আইইউবিএটি থেকে হোটেল ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা শেষে ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ ক‍্যাডারে যোগ দিই। এখন বরিশালের বাকেরগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শিক্ষার্থীদের খরচের ব্যাপারে আইইউবিএটি বেশ সহযোগিতা করে। পড়ার সময় থেকেই আমি পার্টটাইম কাজ ও ইন্টার্নশিপ করেছি, সিনিয়ররাও সে সময় খুব সহযোগিতা করেছেন। দেশের মানুষের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা একরকম বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পেয়েছিলাম।’

আরও পড়ুন

গবেষণার প্রতি সব সময় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে আইইউবিএটি। শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতেই ক‍্যাম্পাসে গড়ে তোলা হয়েছে মিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় নানা গবেষণাপত্র। কিছু গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জার্নালেও স্থান পেয়েছে।

২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাগ্রিকালচার সায়েন্স ডিগ্রি নেন তাহমিনা আক্তার। তিনি এখন শরীয়তপুরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমি ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি কাজে যোগ দিই। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে নার্সিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন শহিদুল্লাহ স্যার আমাদের জেনারেল এডুকেশনের বিভিন্ন কোর্স নিতেন। তাঁর উৎসাহে কৃষি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। আইইউবিএটি ক‍্যাম্পাসে আমরা হাতে-কলমে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের গবেষণার সুযোগ করে দেওয়া হয়। আমি থিসিস করেছি বাংলাদেশের কৃষি নিয়ে। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করি। আমাদের ক্লাসরুমে ইংরেজিতে প্রেজেন্টেশন দেওয়াকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হতো। সেই সব চর্চা এখনো কাজে লাগছে। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সফট স্কিল শিখেছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।’

শক্তিশালী নেটওয়ার্ক

আইইউবিএটির অ্যালামনাইদের নেটওয়ার্ক বেশ সক্রিয়। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার পরও নিজেদের মধ‍্যে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন অ‍্যালামনাইরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অ‍্যালামনাই শাওন আজাদ বর্তমানে গ্রামীণফোনে পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালে বিবিএ ডিগ্রি নিই। ক্লাসরুমে আধুনিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা নেওয়ার পাশাপাশি কর্মজীবনের বিভিন্ন দক্ষতা সম্পর্কে সরাসরি শেখার সুযোগ হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, যা করপোরেট ক‍্যারিয়ারে কাজে লাগছে।’

আরও পড়ুন

আইইউবিএটির পাবলিক রিলেশন অ‍্যান্ড প্লেসমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর আলামিন শিকদার শিহাব জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অ‍্যালামনাই ভিনদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের মাহামুদুল হাসান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইন্টেলে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষক হিসেবে কাজ করছেন আরেক অ‍্যালামনাই সাদিয়া মোস্তফা। নার্সিং বিভাগের মহাম্মাদ আলী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামের গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। পুরকৌশলের হাসনাত বাদশা ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রভাষক। সৌদি আরবের কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টোরাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন মাহফুজুর রহমান। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের হোসাইন মো. সাফায়েত কানাডার লরেন্টিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি করছেন। যন্ত্রকৌশলের জুলহাস খান যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টুলসায় পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যখন দেশে আসেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মশালা ও সেশনে অংশ নেন। নবীন শিক্ষার্থী আর প্রাক্তনদের এক করেও আমরা অনলাইনে বিভিন্ন সেশন আয়োজন করি।’