বাবা বুঝি সব দেখছেন আর মুচকি হাসছেন

আজ বাবা দিবস। এ উপলক্ষে বাবাকে নিয়ে লিখেছেন প্রথম আলোর পাঠকেরা। পড়ুন শরীফ ইরফাত জেবীন–এর লেখা।

বাবার সঙ্গে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

বাবার স্বপ্ন ছিল তাঁর একমাত্র সন্তান ডাক্তার হবে, প্রতি সপ্তাহে গ্রামে গিয়ে বিনা মূল্যে গরিব মানুষের জন্য মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা দিয়ে আসবে। এদিকে দশম শ্রেণিতে জীববিজ্ঞানের প্র্যাকটিক্যালে ব্যাঙ কাটতে গিয়ে আমার চোখ ছলছল। রক্ত দেখলে মাথা ঘোরে, মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম হয়। অ‍্যাকশন ঘরানার সিনেমাও দেখতে পারি না। ভাবুন, এই আমি কীভাবে ডাক্তারি পড়ি?

তবু জানতাম, ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেলে বাবা কিছুতেই আমাকে মেডিকেলের বাইরে যেতে দেবেন না। ধরেবেঁধে যেভাবেই হোক, আমাকে ডাক্তারি পড়িয়েই তবে ক্ষান্ত হবেন। এদিকে আমি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর। অঙ্ক ছিল বরাবরই আমার যম। তাই যখন আটঘাট বেঁধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটের জন্য প্রস্তুতি নিলাম, বাবা হয়তো একটু মনঃক্ষুণ্নই ছিলেন, কিন্তু মুখে কিছু বলেননি।

আরও পড়ুন

বাবার ইচ্ছায় ভর্তির সময় বেছে নিই স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ—সাংবাদিকতা নয়, ডাক্তারিও নয়, মাঝামাঝি কিছু একটা! আমার একটাই চাওয়া ছিল, অঙ্ক যেন করতে না হয়। বাবা মুচকি হেসে নিশ্চিন্ত করে বলেছিলেন, ‘এই বিভাগে প্রথম বর্ষ ছাড়া আর কোনো অঙ্ক নেই।’ বিশ্বাস করেই ঢুকে পড়লাম!

তারপর? ইতিহাস! অর্থনীতি, গাণিতিক অর্থনীতি, পরিসংখ্যান—অঙ্ক আর স্বাস্থ্য খাত আজও আমার পিছু ছাড়েনি। ক্লাসরুমের গণ্ডি পেরিয়ে এখন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের অফিস ডেস্কে বসে যখন কোনো কর্মসূচির অর্থনৈতিক মূল‍্যায়ন বা বাজেট বিশ্লেষণ করি; মাথা চাপড়াই আর ভাবি, বাবা বুঝি ওপর থেকে সব দেখছেন আর মুচকি হেসে বলছেন, ‘কী হে, তুমি না অঙ্ক আর স্বাস্থ‍্য খাত ছাড়তে চেয়েছিলে? এখন কেমন লাগে?’

আমার পেশা আজ ডাক্তারি নয়। কিন্তু বাবা যে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন, আমি আজ সেই কাজই করছি, হয়তো শুধু একটু পেছন থেকে। হয়তো আমি তাঁর স্বপ্নের সোজা পথে হাঁটিনি, কিন্তু পথও হারাইনি। অনেক ভালোবাসি, বাবা।