বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই পেলেন সব কটি পুরস্কার

যন্ত্রকৌশল বিভাগে পড়েন ফারসিয়া কাওসার
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে পড়েন ফারসিয়া কাওসার। পড়াশোনার বাইরে প্রকল্প ও গবেষণা ঘিরেই তাঁর যত ব্যস্ততা।

তকী তাহমিদও গবেষণাটা ভালোই বোঝেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী।

সাকিফ সানি ও লাবিবা ইসলামের আগ্রহের জায়গা আবার ভিন্ন। বায়োমেডিকেল প্রকৌশলের শিক্ষার্থী সানির আগ্রহ অ্যানিমেশনে। আর লাবিবা পছন্দ করেন সমাজসেবামূলক কাজ।

পছন্দ, কাজ ও আগ্রহের জায়গা আলাদা হলেও একটা জায়গায় এসে তাঁরা ঠিকই মিলিত হয়েছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চার শিক্ষার্থীই এবার হোন্ডা ফাউন্ডেশনের ইয়ং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন।

২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ‘ইয়ং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ দিচ্ছে হোন্ডা ফাউন্ডেশন। প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতেই এ উদ্যোগ। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। তবে এ বছর হোন্ডা ফাউন্ডেশনের সব কটি অর্থাৎ চারটি অ্যাওয়ার্ডই পেয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা, শুরুতে যাঁদের কথা বলছিলাম।

সাকিফ সানি
ছবি: সংগৃহীত

পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকে তিন হাজার মার্কিন ডলার (তিন লাখ টাকার বেশি) করে পাবেন। এ ছাড়া থাকছে সাত হাজার মার্কিন ডলার সম্মানীসহ জাপানে ১০ সপ্তাহের বেশি শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ বা আগামী চার বছরের মধ্যে জাপানে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির জন্য ১০ হাজার মার্কিন ডলারের বৃত্তি। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দুটির মধ্যে যেকোনো একটি সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন।

তকী তাহমিদ
ছবি: সংগৃহীত

অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির পর তকী তাহমিদ বলেন, ‘সত্যি বলতে এই অ্যাওয়ার্ড নিয়ে সব সময় একটা স্বপ্ন ছিল। আমাদের সিনিয়রদের অনেকেই পেয়েছেন। তাঁদের মতো অ্যাওয়ার্ডজয়ী হতে পেরে খুশি লাগছে।’ ফারসিয়া কাওসার যুক্ত করলেন, ‘এ রকম আরও বেশি বেশি সুযোগ বাংলাদেশের মেয়েদের প্রকৌশল ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে সহায়তা করবে।’

আরও পড়ুন

গত ১৩ নভেম্বর শুরু হয় ইয়ং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড বা ওয়াই-ই-এস প্রোগ্রামের আবেদন পর্ব, যা এক মাসব্যাপী চলে। দুই ধাপে যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৫ জনকে রাখা হয়। প্রবন্ধ লেখা ও সাক্ষাৎকার—এই দুই ধাপ পেরিয়ে সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

লাবিবা ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

সাক্ষাৎকার পর্বে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আইনুন নিশাত, অভিনেতা ও প্রকৌশলী আবুল হায়াত ও হোন্ডা জাপানের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হন চার শিক্ষার্থী। সেই অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিলেন সাকিফ সানি, ‘চাপে পড়লে আমি ছবি আঁকি। এটা একধরনের মানিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি বলতে পারেন। সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েও স্কেচ করছিলাম। আমার স্কেচবুক দেখে আইনুন নিশাত স্যার বললেন, তাঁরও ছোটবেলায় শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তাঁর বাবা কীভাবে কঠোরভাবে পড়াশোনায় ফোকাস করাতেন—সেই মজার গল্পও শুনিয়েছেন তিনি।’

লাবিবা ইসলাম বলেন, ‘ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করি জানার পর জাপানের একজন প্রতিনিধি খুব আগ্রহ নিয়ে আলাপ করলেন। বললেন, ছিন্নমূলদের জন্য কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায়। আরেকজনের সঙ্গে হারুকি মুরাকামির বই নিয়ে গল্প হলো।’

ফারসিয়া কাওসার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘তাঁরা যখন বললেন, “তুমি বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য রোলমডেল হতে পারো”, সে মুহূর্তটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।’ আর তকী তাহমিদ জানান, প্রযুক্তিগত আলোচনা (টেকনিক্যাল ডিসকাশন) শেষে জাপানের একজন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘স্যুটটা কোথা থেকে নিয়েছ? বেশ সুন্দর তো!’

একাডেমিক ফলাফল, গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে মূলত ওয়াই-ই-এস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এই তরুণদের কেউ হতে চান শিক্ষক, কেউ নামকরা বিজ্ঞানী, কেউ গবেষণা করেই কাটিয়ে দিতে চান বাকি জীবন। তবে একটা জায়গায় নীতিগতভাবে সবাই এক—নিজের শ্রম ও মেধাকে মানুষের কাজে লাগাতে চান। মানুষের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও জীবনকে সহজ করার কাজে অবদান রাখতে চান।