ক্যাম্পাসের দেয়ালরাঙানো যত ছবি

অধিকাংশেরই আঁকাআঁকিতে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তারপরও কোনো এক তাড়না তাঁদের শিল্পী করে তুলেছে। ক্যাম্পাসের বড় বড় দেয়াল হয়ে উঠেছে তাঁদের ক্যানভাস। তাঁদের তুলির ছোঁয়ায় মুখর হয়ে উঠছে মূক দেয়াল। বলছে আমাদের গৌরবের ইতিহাস, সমসাময়িক বিষয়ে করছে প্রতিবাদ। একক কোনো শিল্পীর সৃষ্টি এগুলো নয়, আক্ষরিক অর্থেই এসব গণশিল্প। দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন এসব দেয়ালচিত্র নিয়ে আমাদের এবারের প্রচ্ছদ। লিখেছেন সুমনকুমার দাশ, জান্নাতুল নাঈম, ফুয়াদ পাবলো ও মেহরীন নেওয়াজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে আঁকা চিত্র
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: দেয়ালে স্মরণীয়জন

গ্রাফিতির ব্যাপারে একটু ভিন্নধর্মী একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস (ইইই) বিভাগের কিছু প্রাক্তন ছাত্র। তাঁদের লক্ষ্য, শতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ কৃতী সন্তানের দেয়ালচিত্র আঁকা। এই কার্যক্রম প্রথমে হাতে নেন হাসান মেহেদী নামের এক প্রাক্তন ছাত্র। ইইই বিভাগে তাঁর প্রিয় শিক্ষক ছিলেন ড. জাহিদ হাসান মাহমুদ। বিভাগের বেশির ভাগ নতুন শিক্ষার্থীই ড. জাহিদ হাসান মাহমুদকে চেনেন না জেনে বেশ অবাক হন তিনি। বিভাগের আরেক প্রাক্তন ছাত্র ইকরাম হোসেন বলেন, ‘স্যারের মতো ভালো মানুষ আমি কখনো দেখিনি। তিনি প্রত্যেক ছাত্রের পাশে সব সময় ছিলেন। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ছাত্রদের সাহায্য করে গেছেন স্যার।’

এসব ব্যক্তিত্ব যেন কখনো হারিয়ে না যান, তার জন্য প্রতিটি বিভাগের এমনই কিছু স্মরণীয় ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ১০০টি গ্রাফিতি করার স্বপ্ন দেখেন হাসান মেহেদী। চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাহায্যে ড্রয়িংগুলো করা হয়। গ্রাফিতিগুলোর সঙ্গে কিউআর কোড যুক্ত করার একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যেটা স্ক্যান করলে ছবির মানুষটির জীবনবৃত্তান্ত পাওয়া যাবে।

চারুকলার শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের করা তথ্যমূলক কাজের আসলে অনেক গুরুত্ব আছে। ছবির মধ্যেই মানুষের কাছে আমরা বার্তা পৌঁছে দিতে পারি।’

ইকরাম হোসেন বলেন, ‘পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু রেখে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। অনুসরণ না করতে পারলেও অন্তত প্রেরণা পাবেন তাঁরা।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: দেয়ালচিত্রে বায়ান্ন থেকে বর্তমান

‘দেয়ালেরও কান আছে’ বাংলা ভাষার বহুল ব্যবহৃত একটি প্রবাদ। কিন্তু দেয়াল শুধু শোনেই না, কখনো কখনো বলেও! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের পশ্চিম পাশের দেয়ালের কথাই ধরুন না। এই দেয়ালে আঁকা চিত্রমালা যেন বাংলাদেশের ইতিহাসের কথাই বলে যাচ্ছে অবিরাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে আঁকা হয় এই দেয়ালচিত্র।

এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছিষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী মুহূর্তগুলো। দেয়ালচিত্রটিকে বুঝতে হলে বাঁ পাশ থেকে দেখা শুরু করতে হবে। শুরুতেই এক ত্রস্ত মাকে দেখা যাবে, এরপর ধাপে ধাপে উঠে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা–পূর্ববর্তী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব আন্দোলন। সবশেষে আছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শিশুরা মনের আনন্দে স্কুলে যাচ্ছে, হাতে বাংলায় লেখা বই।

২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে আঁকা হয় এই দেয়ালচিত্র
ছবি: সংগৃহীত

চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠকের তত্ত্বাবধানে এই চিত্রকর্মের খসড়া লেআউট করেছেন চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার। সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন প্রসেনজিৎ মিস্ত্রী, রায়হান আহমেদ, সুভাষ পাল এবং সৌমিত্র কুমার।

মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনাতেই মূলত আমরা দেয়ালটিকে রাঙিয়ে তুলি। বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাসকে এই দেয়ালচিত্রে ধাপে ধাপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যে ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে বাঙালিদের বুকের তাজা রক্ত ঝরেছিল, সেই ভাষায় রচিত বই এখন আমরা বুকে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই। পুরো ব্যাপারটিকে এক দেয়ালে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা।’

তাঁদের শিল্পটা শুধু চোখের দেখার জন্যই নয়, চেতনায় নাড়া দেওয়ার জন্যও করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

বুয়েট: শিল্পের সঙ্গে বার্তা

সব ধরনের মানুষের কাছেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসের রংবেরঙের দেওয়ালগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ গ্রাফিতিই স্থাপত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের করা। এই বিভাগের শিক্ষার্থী আইনান আনজুম বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে বেশ ঘটা করে রং করা হয় বিভিন্ন উৎসবের সময়। পলাশী মোড় থেকে শুরু করে বুয়েট ক্যাম্পাস পর্যন্ত দেয়ালজুড়ে রং করি আমরা সবাই।’ তবে তাঁদের শিল্পটা শুধু চোখের দেখার জন্যই নয়, চেতনায় নাড়া দেওয়ার জন্যও করা হয়। ‘দেয়ালচিত্রে একই সঙ্গে শিল্প ও বার্তা একজনের কাছে পাঠানো যায়। তাই আমার মনে হয়, গ্রাফিতি একটা খুব ভালো মাধ্যম। মানুষ হাঁটার পথেও এই শিল্প দেখে আটকে যাবে, কিছুক্ষণ চিন্তা করবে,’ বলেন আইনান।

প্রতিবছর বুয়েটের র‍্যাগ ওয়ালে নতুন রং করে র‍্যাগ ব্যাচ। এটা তাদের একটা ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। এই ওয়ালই এখন ক্যাম্পাসের একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য। এটি কেবল ভাব প্রকাশের মাধ্যমই নয়, বিভিন্ন সময় প্রতিবাদের হাতিয়ারও হয়ে ওঠে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের রং–তুলি। বিশেষ করে আবরার হত্যার পরই প্রতিবাদের রঙে জ্বলে উঠেছিল বুয়েটের প্রতিটি দেয়াল।

শাবিপ্রবি: দেয়ালচিত্রে ইতিহাস ও ঐতিহ্য

মুষ্টিবদ্ধ হাতে মিছিলে করছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের হাতে আন্দোলনের মশাল তুলে দিচ্ছেন শহীদ নূর হোসেন। শিক্ষার্থীদের হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা তুলে দিচ্ছেন দেশের পতাকা আর বাউল তুলে দিচ্ছেন একতারা। এক টোকাই ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে শহর পরিষ্কার করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে ফুলের তোড়া। কৃষক, শ্রমিক ও মজুর শ্রম-ঘামের পয়সায় শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দিচ্ছেন।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) মিনি অডিটরিয়ামের পশ্চিমমুখী দেয়ালে আঁকা একটা দেয়ালচিত্রে এসবই উঠে এসেছে। তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা ৭১ ভাস্কর্যের পাশেই দেয়ালচিত্রটির অবস্থান। দেয়ালচিত্রটির নকশা এঁকেছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ধ্রবচন্দ্র রায়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরজুড়ে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী এ দেয়ালচিত্র আঁকেন। দেয়ালচিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বহ্নি বহমান’। ৩০ ফুট বাই ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের এ দেয়ালচিত্র আঁকতে লাখখানেক টাকা খরচ হয়েছে। জোগান দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

দেয়ালচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য
ছবি: সংগৃহীত

দেয়ালচিত্রটি আঁকার সময় নকশাকার ধ্রবচন্দ্র রায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী জানান, তিনি পেশাদার চিত্রশিল্পী নন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই তিনি আঁকাআঁকিতে সম্পৃক্ত হন। দেশের প্রতিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ মানুষের কষ্টে অর্জিত করের টাকায় চলে, এটা বোঝাতেই এই দেয়ালচিত্র। পাশাপাশি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানসহ বাঙালির অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলন-সংগ্রামের বার্তাও উপস্থাপন করা হয়েছে।

শাবিপ্রবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শফিউল হক বলেন, দেয়ালচিত্রের ওপরের অংশে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে শিক্ষাসনদ গ্রহণ করছেন। তাঁদের পাশেই রয়েছে শান্তির প্রতীক কবুতরের ছবি। সফলভাবে শিক্ষা শেষ করে শিক্ষার্থীরা দেশের মানুষের জন্য শান্তি আনবেন, মূলত এই প্রতীকী বার্তাই দেওয়া হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ দেয়ালচিত্র দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের মানুষও এখন ভিড় করে থাকেন।

এমআইএসটি: স্থাপত্যের শিক্ষার্থীদের আঁকা

মিলিটারি ইনস্টিটিউট চিন্তা করলেই মনে হয়, না জানি কত শত নিয়মে গাঁথা জীবন, সেখানে গ্রাফিতি আঁকার তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু এখানকার স্থাপত্যকলা বিভাগের রামিসা তাসনিম জানান সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি গল্প। তিনি বলেন, ‘স্থাপত্যকলা বিভাগের একটা প্রাতিষ্ঠানিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে আমরা প্রথম এমআইএসটির (মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকি। বেশ মজা করেই তখন পড়াশোনার সময়টা পার হয়ে যায়। পরে আমাদের শিক্ষকেরাই অনুপ্রেরণা দেন বিভিন্ন উৎসবের সময় দেয়ালে গ্রাফিতি করতে।’ এখন শুধু স্থাপত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই নন, গ্রাফিতিতে অংশগ্রহণ করেন সব শিক্ষার্থীই।

শুধু স্থাপত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই নন, গ্রাফিতি আঁকায় অংশগ্রহণ করেন সব শিক্ষার্থীই
ছবি: সংগৃহীত

তাসমীম ফাতিমা ওয়াহাব বলেন, ‘আমাদের গ্রাফিতিটা অবশ্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয় না। অনুমতি নিয়েই আমাদের সব ধরনের আঁকাআঁকির কাজ করতে হয়। তবে উদ্যোগটা প্রথমে আমাদের শিক্ষকেরাই নিয়েছিলেন।’

তাসমীম আরও জানান, এমআইএসটির প্লাজায় সাধারণত বসার অনুমতি থাকে না। তবে উৎসবের আমেজে গ্রাফিতি আঁকার সময় সবাই কিছুটা নিয়ম ভাঙার আনন্দেই থাকেন। রামিসা বলেন, ‘ওই দিন আমাদের জন্য কোনো নিয়ম নেই।’ তা মন্দ কী? ফলাফলটা তো বেশ। অন্য জায়গায় বেশ কঠোর হলেও এদিক দিয়ে তাঁদের প্রশাসন বেশ শিথিল বলে জানান দুইজন শিক্ষার্থী।

চুয়েট: দেয়ালে সিরিয়ার দেবশিশু

২০১৮ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ যখন চরম পর্যায়ে, তখন এক রাসায়নিক গ্যাস হামলায় আহত হয় দুই বোন। ছোট বোনকে কোলে নিয়ে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে ধীরে ধীরে নিজেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বড় বোন। অথচ ছোট বোনের চেয়ে সে নিজেই আহত হয়েছিল বেশি। ছবিটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে, নাড়া দেয় বিশ্ববিবেকে।

সিরিয়ার এই হৃদয়বিদারক ঘটনা দাগ কাটে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের মনেও। সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা সবার কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য সৌমেন সাহা। সঙ্গে ছিলেন সাফায়েত জামিল ও মুন্তাসির মামুন। এই তিনজনের হাতে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দেয়ালে আঁকা হয় এই গ্রাফিতি।

২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দেয়ালে আঁকা হয় এই গ্রাফিতি
ছবি: সংগৃহীত

সাফায়েত জামিল জানান, যুদ্ধে বিশ্বমানবতা যে কতটা অসহায়, মেডিকেল সেন্টারের দেয়ালে আঁকা এই গ্রাফিতির মাধ্যমে আমরা সেটিই সবার কাছে পৌঁছাতে চেয়েছি। চার বছর আগে আঁকা ছবিটা এখনো একই রকম প্রাসঙ্গিক। এই গ্রাফিতির মাধ্যমে নতুন যাঁরা ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসেন, তাঁরাও যুদ্ধের নির্মমতা উপলব্ধি করতে পারেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: গ্রাফিতির জন্য ক্লাব

বলা নেই, কওয়া নেই; রং–তুলি নিয়ে হাজির কয়েক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চের দেয়ালে আঁকতে শুরু করলেন গ্রাফিতি। বলছি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সংগঠন ‘বৃত্ত কুবি’র কথা।

সাতজনের দলটির একমাত্র নারী সদস্য কানিজ ফাতেমা। কানিজের কাছে প্রশ্ন ছিল, আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে তাঁরা গ্রাফিতিকেই কেন বেছে নিলেন? কানিজ বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নানা ধরনের আঁকাআঁকি করার লক্ষ্য নিয়েই আমাদের দলটি গড়া হয়েছে। গ্রাফিতি দলও বলতে পারেন। তাই গ্রাফিতি এঁকেই নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। সিনিয়র, জুনিয়র কিংবা ব্যাচমেট, সবার কাছ থেকেই অনেক সাড়া পেয়েছি।’

ক্যাম্পাসের ফাঁকা দেয়ালগুলো রঙিন করতে চান বৃত্ত কুবির সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

সর্বশেষ গত ২১ ও ২২ ডিসেম্বরে ক্যাম্পাসের বড় একটি দেয়ালে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র ‘এত চাওয়া নিয়ে কোথা যাই’ গানের লাইনটিকে কেন্দ্র করে একটি গ্রাফিতি করেছেন তাঁরা। কানিজ জানান, অনেকেই এখন এখানে এসে ছবি তোলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে দেন। কাজটি করার সময় সম্মানিত উপাচার্য একদিন পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে আমাদের কাজ দেখে প্রশংসা করেছেন, সামনে আরও গ্রাফিতি আঁকতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ পর্যন্ত আমরা ১০টির বেশি গ্রাফিতি করেছি।

দলের অন্যতম সদস্য আরাফাত রাফি। বাংলা বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কেউই পেশাদার চিত্রশিল্পী নই। তবু আমাদের করা গ্রাফিতি নিয়ে যখন ক্যাম্পাসে আলোচনা হয়, অনেক ভালো লাগে। অনেকের ফেসবুক প্রোফাইলেও আমাদের কাঁচা হাতে আঁকা গ্রাফিতি শোভা পেয়েছে। এগুলো থেকে প্রেরণা পাই। আরও বেশি কাজ করার স্পৃহা জন্মে। আমরা চাই, ক্যাম্পাসের ফাঁকা দেয়ালগুলো নানান রঙে রঙিন হয়ে উঠুক, ছবির ভাষায় কথা বলুক।’