মোগল দুর্গ যেভাবে হয়ে উঠেছিল কেন্দ্রীয় কারাগার

রাষ্ট্রনায়ক থেকে সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী, শিল্পপতি থেকে দীন ভিখারি, দুর্ধর্ষ খুনি থেকে নিরপরাধ মানুষ—এমন কত মানুষের ভাগ্যের সঙ্গেই না জড়িয়ে আছে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস।

ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে যেখানে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার, সেখানেই একটা দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন মোগল সুবাদার ইব্রাহিম খান। মহল, বিচারালয়, টাঁকশাল—একসময় সবই ছিল এই দুর্গে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে ১৭৬৫ সালে যখন দেওয়ানির দায়িত্ব নিয়ে আসেন ইংরেজ এজেন্ট লেফটেন্যান্ট সুইলটন, তখনো এই প্রাসাদেই বাস করতেন ঢাকার নায়েব নাজিম। একসময় অপরাধী রাখার জন্য একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণ করা হলো। একপর্যায়ে দুর্গকেই কারাগারে রূপান্তর করা হলো।

পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের মেঘনা ভবন
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

১৭৭৫ সালের এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা জেলে ১১০ জন কয়েদি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮৭ জন ডাকাত, ১৫ জন হত্যার আসামি এবং ৮ জন চোর। অধিকাংশ কয়েদিকে দিয়ে সড়ক মেরামত ও নির্মাণকাজ করানো হতো। ১৮৩৩ সালের দিকে ঢাকা জেলের ধারণক্ষমতা ছিল ৮০০ জন। গড়ে তখন সেখানে থাকতেন ৫২৬ জন। পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসব কয়েদিকে আনা হতো। ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত এখানে কোতোয়ালি থানাও ছিল। থানা সরিয়ে ভবনটিকে জেল হাসপাতালে পরিণত করা হয়।

পুরোনো কারাগারটিকে এখন সংরক্ষণ ও সবুজ উদ্যান হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

১৮৬৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কারাগার গঠনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ঢাকার তৎকালীন কমিশনার চার্লস বাকল্যান্ড কুমিল্লায় সেটি স্থাপনের প্রস্তাব করেন। অবশ্য তাঁর প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। ১৮৭৯ সালে ঢাকা জেলকেই কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়।

শিউলি ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে কারা জাদুঘরের আঙিনা
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

পাকিস্তান আমল পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও জায়গাটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যায়। প্রয়োজনের তাগিদে সম্প্রসারণ করা হলেও দিনে দিনে কেন্দ্রীয় কারাগারে পুরোনো ভবনগুলো জরাজীর্ণ ও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দিসংখ্যা বেড়ে যায়। তাই কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে নতুন আরেকটি কারাগার নির্মাণ করে সরকার। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে সেখানে চলে যায় কেন্দ্রীয় কারাগার। তখন এখানে আটক ছিলেন ৬ হাজারের বেশি বন্দী।

সূত্র: বাংলাপিডিয়া, ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী ও কিংবদন্তির ঢাকা