বিধিনিষেধ মানছেন না গ্রামের মানুষ

গ্রামের মানুষ এখনো মানছেন না করোনার বিধিনিষেধ। ছবি: সংগৃহীত
গ্রামের মানুষ এখনো মানছেন না করোনার বিধিনিষেধ। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে হানা দেওয়া ভয়াবহ করোনাভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমণের পর এ নিয়ে মানুষের মাঝে বেশ চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। মুখে মাস্ক পরা, হাতে গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, হেক্সিসল দিয়ে হাত পরিষ্কার, ঘরের মধ্যে অবস্থানের মতো কড়াকড়ি নির্দেশনা মানার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে শহরের গণ্ডির মধ্যে কিছু মানুষ এ বিধি মানলেও মানছেন না গ্রামের অধিকাংশ মানুষ, যা এ দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের এক অশনিসংকেত।

গ্রামে সচেতন মানুষের মধ্যে সচেতনতার চরম ঘাটতি সেই পুরোনো গল্পের মতো। সাধারণ রোগের প্রতিও স্বাস্থ্যসচেতন নয় গ্রামের ৫০ ভাগ মানুষ। অথচ এ কঠিন মহামারি পরিস্থিতিতে মানুষের ওপর কোনোভাবেই ভরসা করা যাচ্ছে না।

একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা, হাত মেলানো, গল্পগুজব তো সেই আগের মতোই চলছে। কিছু মানুষ সচেতন হয়ে বাড়িতে অবস্থান করলেও শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষই এখন হরহামেশা বাজারে ঘোরাফেরা করে।

এমন চিত্র লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে। দু–একজনের মুখে কেবল মাস্ক দেখা গেছে। এসব মানুষ কেন পরছেন, সেটা নিয়ে অন্যরা রীতিমতো হাসি-ঠাট্টাও করছেন। অথচ বোধের জায়গা থেকে কেউ সচেতন হচ্ছেন না।

জেলার কমলনগরের চর মার্টিন, চর কালকিনি এবং মেঘনাতীরের বড় বাণিজ্যিক জনপদ মতিরহাট ঘুরে দেখা গেছে, জনসমাগমের সেই অতীতের চিত্র। স্কুল, কলেজ বন্ধ হলেও দোকানপাটে ঘুরছেন বহু মানুষ। অন্যদিকে দেখা গেছে, যাঁরা ঢাকাফেরত, তাঁরাও দোকানপাটে এসে আড্ডা আর গল্পে সময় কাটাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু বিদেশফেরত নন, ঢাকাফেরতদের মাঝেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকতে পারে। তাহলে ঢাকাফেরত লোকজন যেভাবে সবার সঙ্গে মিশছেন, তাহলে সংক্রমণের জায়গাটা কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকছে, একটু কি চিন্তা করা যায়?

বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাস এমন একটি রোগ, যাতে কেউ আক্রান্ত হলে এর উপসর্গ না–ও দেখা যেতে পারে। কারণ, যাঁরা বৃদ্ধ, তাঁদের ক্ষেত্রে কেবল উপসর্গগুলো দেখা যায়। অন্যদিকে যাঁদের দেহে এর প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তাঁরা সুস্থ হলেও এ ভাইরাস তাঁরা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। এভাবে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।

বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, মার্চ মাসের প্রথম ২০ দিনে দেশে বিদেশফেরত লোকের সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৫ হাজার প্রবাসী স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে আছেন। যাঁরা সবাই কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলো থেকেই এসেছেন। তাহলে বাকি ২ লাখ ২৫ জন প্রবাসী কোথায়? যাঁরা নিশ্চয়ই দেশজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছেন এবং রীতিমতো একজন অন্যজনের সঙ্গে মেলামেশাও করছেন। তাঁদের মধ্যে যে করোনাভাইরাস নেই, তার কোনো নিশ্চয়তা আছে?

কাজে ব্যস্ত এরা। কিন্তু মাস্ক, গ্লাভস কিছু নেই। ছবি: সংগৃহীত
কাজে ব্যস্ত এরা। কিন্তু মাস্ক, গ্লাভস কিছু নেই। ছবি: সংগৃহীত

তাঁরা রীতিমতো এ ভাইরাস তাঁদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে সবখানে ছড়িয়ে দিছেন, যা খুবই হতাশাজনক খবর। অথচ এ নিয়ে গ্রামের মানুষের মাঝে তেমন সচেতনতা চোখেও পড়ছে না।

সরকারের কোনো বিধিনিষেধও গ্রামের মানুষ মানছেন না। মানুষকে ঘরে থাকতে মাইকিংও করা হয়েছে, যা ৫ শতাংশ মানুষও মানেন না।

গ্রামের এসব মানুষকে সচেতন করতে স্বেচ্ছাসেবী কিছু কার্যক্রম চোখে পড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় তেমন জোরালো নয়। ফলে মানুষের মাঝে এ নিয়ে সচেতনতার চরম ঘাটতি লক্ষ করা গেছে।

গ্রামে এ ভাইরাস প্রতিরোধক মাস্ক সচরাচর পাওয়া যায় না। বিক্রেতারা এসব মাস্ক কিনে আনলেও তাঁরা বিক্রি করছেন চড়া দামে। একটি মাস্কের মূল্য যেখানে ৮০ টাকা, সেখানে সাধারণ অসচেতন মানুষ মাস্ক থেকে মুখ তো ফিরিয়ে নেবেই। তা ছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়াটা তো কল্পনাও করা যায় না।

অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখে হাত না দেওয়া, বারবার হাত দেওয়ার মতো বিধিনিষেধ তেমন কেউ মানছেনই না। ফলে গ্রামের এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এমন অবস্থায় শহরের মতো গ্রামের মানুষের দিকে সরকারের বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি।