ডেমোক্রেটিক বিতর্কে বিপ্লবের ডাক স্যান্ডার্সের

সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ছবি: এএফপি
সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ছবি: এএফপি

২০২০ সালে কে হবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মোট ২০ জন আগ্রহী প্রার্থী নিজেদের মধ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে ১০ জন গতকাল মঙ্গলবার ডেট্রয়টে নিজেদের মধ্যে দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নেন। বিতর্ক পরিচালনার ভার ছিল সিএনএনের ওপর। যেমন ভাবা হয়েছিল, এই বিতর্কের মধ্যমণি ছিলেন দলের প্রগতিশীল অংশের দুই নেতা—সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন।

স্যান্ডার্স ও ওয়ারেন উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বৈদেশিক নীতি—প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন চান। দুজনেই বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান অর্থনীতি দেশের ধনী ১ শতাংশের জন্য অতি উত্তম হলেও বাকি ৯৯ শতাংশের জন্য মোটেই ভালো না। এ অবস্থা বদলে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম—এ কথা তাঁরা উভয়েই বিশ্বাস করেন।

বেশির ভাগ প্রশ্নে তাঁদের ঐকমত্য থাকলেও একটি ক্ষেত্রে দুজনের অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ প্রভেদ রয়েছে। স্যান্ডার্স খোলামেলাভাবে একজন সমাজতন্ত্রী। স্যান্ডার্সের ভাষায়, তিনি ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে’র সমর্থক। অন্যদিকে, ওয়ারেন নিজেকে একজন পুঁজিবাদী বলে পরিচয় করাতে ভালোবাসেন, যদিও চলতি পুঁজিবাদীব্যবস্থা আমূল বদলে দিতে তিনি বদ্ধপরিকর।

বিতর্কের সমাপ্তি টেনে দৃঢ়কণ্ঠে স্যান্ডার্স ঘোষণা করেন, ‘আমাদের যা দরকার, তা হলো একটি রাজনৈতিক বিপ্লব।’

তাঁদের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন দলের একাধিক মধ্যপন্থী। তাঁরা এই দুই প্রার্থীর দিকে তাকিয়ে সতর্ক করে দেন, সবার জন্য বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য বা নিরঙ্কুশ ‘সবুজ অর্থনীতি’র মতো উদারনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে নির্বাচনে লড়তে গিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টি নিজেদের পরাজয়ের পথ পরিষ্কার করছে। দেশ এখনো ততটা বামঘেঁষা নয়, যতটা দলের এই দুই প্রার্থী। তাঁদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় নেতৃত্ব দেন মন্টানার গভর্নর স্টিভ বুলক ও ওহাইও থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য টিম রায়ান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কলোরাডোর সাবেক গভর্নর জন হেকেনলুপার। তাঁদের সমালোচনার জবাবে সিনেটর ওয়ারেন মুখে বক্র হাসি নিয়ে বলেন, ‘আমরা কী করতে পারব না, সে কথা বলার জন্য কাউকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেন করতে হয়, সে কথা আমার মাথায় ঢোকে না।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ট্রাম্প যদি ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদের জন্য শত কোটি ডলারের কর মওকুফ করতে পারেন, তাহলে সবার জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অথবা ছাত্রদের শিক্ষাঋণ মওকুফ করতে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দে এত আপত্তি কেন?

দলের মধ্যপন্থীরা অনেকটা পরিকল্পিতভাবেই স্যান্ডার্স ও ওয়ারেনকে তাঁদের অতি বাম রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য কঠোর সমালোচনা করেন। শুধু অর্থনীতি বা স্বাস্থ্যবিমা নয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন প্রশ্নে তাঁদের অবস্থানও আক্রমণের মুখে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে তাঁরা যে ‘সবুজ অর্থনীতি’ প্রস্তাব করেছেন, জন হেকেনলুপার তাকে ‘অবাস্তব’ বলে বাতিল করে দেন। অবৈধ অভিবাসীদের অপরাধমুক্ত ঘোষণার যে কর্মসূচি তাঁরা সমর্থন করেছেন, একাধিক মধ্যপন্থী ডেমোক্রেটিক প্রার্থী তা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর বলে বর্ণনা করেন। হেকেনলুপার স্যান্ডার্সের নাম উচ্চারণ না করে মন্তব্য করেন, একজন ‘সমাজতন্ত্রীকে’ যদি দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়, তাহলে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন ঠেকানো অসম্ভব হবে।

মধ্যপন্থীদের ক্রমাগত আক্রমণ সত্ত্বেও অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের ধারণা, দুই বামপন্থী সিনেটর—ওয়ারেন ও স্যান্ডার্স—এই বিতর্কে জয়ী হয়েছেন। আজ বুধবার একই মঞ্চে বিতর্কে অংশ নেবেন জো বাইডেন, সিনেটর কমলা হ্যারিসসহ আরও ১০ জন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী।