হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে ২০ মামলা ৫০ অভিযোগ

কেবল ১০ একর সরকারি জমিই নয়, হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলেরও অভিযোগ উঠেছে। সাভারের হেমায়েতপুরে জনতা হাউজিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক প্লট জোর করে দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি।ক্ষতিগ্রস্ত প্লট মালিকেরা এ পর্যন্ত ঢাকার বিচারিক আদালতসহ সাভার থানায় হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা করেছে। অর্ধশত সাধারণ ডায়েরিও (অভিযোগ) করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।অরুণাচল গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি আবাসন প্রকল্পের অর্ধেক জমিও দখল করে নিয়েছিল হলমার্ক গ্রুপ। গত বছরের নভেম্বর মাসে অরুণাচল সমিতির ৩ দশমিক ৮১ একর জমি দখল করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ শুরু করেছিল হলমার্ক গ্রুপ। পরে ওই আবাসন প্রকল্পের প্লট মালিকেরা সাভার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা করেন।জনতা হাউজিং এবং অরুণাচল আবাসন প্রকল্প দুটি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী কৃষিজমি হিসেবে চিহ্নিত। এখানে কোনো ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের নিয়ম নেই। কিন্তু হলমার্ক গ্রুপ এখানে কয়েকটি প্লট কিনে এবং শতাধিক প্লট দখল করে কারখানা ও গরুর খামার স্থাপন করেছে।সাভার উপজেলা ভূমি কমিশনারের কার্যালয়ের মাধ্যমে অরুণাচল সমিতির জমিগুলোকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখিয়ে তা কাওসার আহমেদ নামের একজন ব্যবসায়ীর নামে ইজারা দেওয়া হয়। অর্পিত সম্পত্তি বিক্রির বিধান না থাকলেও ওই জমি পরে হলমার্ক গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।গত বছরের নভেম্বরে বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চ ওই জমির ব্যাপারে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। কিন্তু তার পরেও সাভারের ভূমি কমিশনারের কার্যালয় হলমার্ক গ্রুপের কাছ থেকে ওই জমি উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এরপর আদালত অবমাননার একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ আগস্ট বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। এ ব্যাপারে অরুণাচল গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতির সচিব মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের মালিকানাধীন প্লটের মালিকদের মধ্যে একজন জাতীয় অধ্যাপকসহ প্রায় ২০ জন চিকিত্সক এবং বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা রয়েছেন। এর পরও হলমার্ক গ্রুপ তাঁদের জমি দখলের চেষ্টা করে। ফলে উচ্চ আদালতের কাছে যেতে হয়েছে। ৫০ মামলা ও ২০ জিডি: জনতা হাউজিংয়ের প্লট দখলের ব্যাপারে হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে সাভার উপজেলা প্রশাসন, শিল্প পুলিশ ও জনতা হাউজিংয়ের প্লট মালিকেরা এসব মামলা ও ডায়েরি করেন। মামলায় হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির মাহমুদ, অন্যান্য কর্মকর্তা ও শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে মাত্র একটির ক্ষেত্রে প্লট মালিক তাঁর জমি বুঝে পেয়েছেন। বাকি মামলার এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সাভারের তত্কালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরুজ্জামান গত ২৪ জানুয়ারি সরকারি রাস্তার ওপর হলমার্ক গ্রুপের নির্মিত গেট ভেঙে দেন। এ সময় হলমার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শামীম আল মামুনের নেতৃত্বে শ্রমিকেরা হামলা চালালে মনিরুজ্জামানসহ শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা আহত হন। ওই ঘটনায় সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ের কানুনগো আবদুল বাতেন বাদী হয়ে ওই দিন রাতে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেন। পাশাপাশি শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে শিল্প পুলিশের এএসআই আবদুল মালেক বাদী হয়ে একই দিন (২৪ জানুয়ারি) সাভার থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সাবেক এসি ল্যান্ড মনিরুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা মার খেলাম ও হামলার শিকার হলাম সরকারি কাজে গিয়ে। পুলিশ এখন পর্যন্ত একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশের এ ধরনের অসহযোগিতার কারণে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’এ ছাড়া, জনতা হাউজিংয়ের জে ব্লকের আট নম্বর প্লটের মালিক বাবর হোসেনের পক্ষে গত ২৩ মে ঢাকার বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন জনৈক মাকসুদুর রহমান। এ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয় তানভির মাহমুদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। জনতা হাউজিং পরিবেশ রক্ষা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বাবর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হলমার্ক গ্রুপ জনতা হাউজিংয়ের ১০০টির মতো প্লট দখল করেছে।জমিদখলের বিষয়ে মন্তব্য জানতে হলমার্ক গ্রুপের তানভির মাহমুদ ও শামীম আল মামুনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন ও খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।